1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

যন্ত্রাংশ বিক্রির ব্যবসায় বিফল হয়ে ”ট্রাক লাগবে” ব্যবসায় সফলতা

মীর হোসেইন একরাম ও এনায়েত রশিদ সেই ছোট্টবেলার বন্ধু। বড় হয়েছেন পাশাপাশি বাড়িতে, লেখাপড়াও করেছেন একই স্কুলে ও কলেজে। বিশ্ববিদ্যালয়টি ছিল শুধু আলাদা। সেই বিচ্ছেদ এনায়েত-একরাম মিটিয়েছেন কাজের ক্ষেত্রে এসে। দুই বন্ধু এখন মোবাইল অ্যাপের সাহায্যে মানুষকে ট্রাক খুঁজে দেন। তাঁদের এই সেবা চলছে দেশজুড়ে। আর তাঁদের উদ্যোগটির নাম ‘ট্রাক লাগবে’।

এনায়েত-একরাম দুজনই এসেছেন ব্যবসায়ী পরিবার থেকে, ব্যবসার ইচ্ছা ছিল গোড়াতেই। তবে ‘ট্রাক লাগবে’ তাঁদের প্রথম ব্যবসা নয়। এর আগে নানা ধরনের ব্যবসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁরা প্রথমে শুরু করলেন অনলাইন কাঁচাবাজারের একটি উদ্যোগ। কিন্তু তখনো দেশে তথ্যপ্রযুক্তি চালু হয়নি। অনলাইনে গ্রোসারি পণ্য কেনায় মানুষ তেমন একটা সাড়া দেয়নি। তাই এটি ছেড়ে তাঁরা শুরু করলেন গাড়ির যন্ত্রাংশের ব্যবসা। তাতেও বিফল হলেন। এরপর যখন যে যাঁর পারিবারিক ব্যবসায়ে মন দিলেন তখন ঘটল ‘আসল’ ঘটনা।

একদিন এনায়েত রশিদ ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করতে গিয়ে দেখলেন একই জায়গায় একই পণ্য পরিবহনে একবার তাঁর লেগেছে আট হাজার টাকা, আরেকবার পঁয়ত্রিশ হাজার। বিশাল এই ব্যবধান সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে এনায়েত বুঝতে পারলেন, ট্রাকভাড়ার বিষয়টি বড্ড গোলমেলে। এই গোলমালটার যতটা সম্ভব সুরাহা করার লক্ষ্যে বন্ধু মীর হোসেইন একরামকে নিয়ে শুরু করলেন নতুন উদ্যোগ, ‘ট্রাক লাগবে’।

নতুন উদ্যমে শুরু করা ‘ট্রাক লাগবে’ অবশ্য ব্যর্থ হয়নি, বরং একের পর এক সফলতা দেখা দিল। ফলে ‘ট্রাক লাগবে’র গ্রাহকদের তালিকায় এখন একদম বাড়ি বদলের জন্য জীবনে একবার মাত্র ট্রাক ব্যবহারকারী থেকে শুরু করে বিশাল বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানও আছে। বন্দর থেকে পণ্য কারখানায় পৌঁছে দেওয়া, আর কারখানা থেকে পাইকারি বাজারে নিয়ে যাওয়ার প্রতিটি ক্ষেত্রেই কাজ করছে ট্রাক লাগবে। তাঁদের নেটওয়ার্কে আছে ছোট হালকা ট্রাক থেকে শুরু করে কাভার্ড ভ্যানের মতো যান।

এনায়েত ও একরাম ভিন্ন দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা বিষয়ে লেখাপড়া করেন। এনায়েত পড়েছেন বিবিএ, একরাম ছিলেন কম্পিউটার সায়েন্সে। শুরুতেই তাঁরা নিজ নিজ বিশেষত্ব কাজে লাগালেন। তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করে নিজেরা বাজার পর্যালোচনার কাজটি করে ফেললেন। ‘আগের ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বারবার নিজেদের নেতিবাচক প্রশ্ন করছিলাম, কিন্তু কিছুতেই নিবৃত্ত হতে পারছিলাম না। ওদিকে বাজার থেকে পাওয়া উপাত্তও বলছিল ব্যবসাটা চলবে। ব্যস, সাহস করে শুরু করে দিলাম’, বললেন একরাম।

ট্রাক লাগবে তাঁদের কার্যক্রম শুরু করে ২০১৭ সালে, তত দিনে বাজারে অ্যাপভিত্তিক সেবা চলে এসেছে। তারপরও প্রথম ট্রাকমালিককে ম্যানেজ করা বেশ কষ্টকর ছিল, বেগ পেতে হয় প্রথম ক্রেতা পেতেও। কিন্তু সপ্তাহখানেকের মধ্যেই বাজারে পরিচিতি পেতে শুরু করে ট্রাক লাগবে।

শুরুতে মাত্র ৩৬টি ট্রাক ও চারজন মানুষ নিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘ট্রাক লাগবে’। এখন ট্রাক লাগবের নেটওয়ার্কে আছে ৫০ হাজারেরও বেশি ট্রাক এবং এক শর ওপরে কর্মী। সম্প্রতি রাজধানীর মহাখালীতে তিনতলা একটি অফিসও ভাড়া করা হয়েছে। বাজার হিসাব-নিকাশ করে একরাম-এনায়েত দারুণ এক নিয়ম বের করলেন, তাঁদের ট্রাকের ভাড়া দূরত্ব অথবা কী পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে, এর ওপর নির্ভর করে না।

বরং তাঁরা এটা ছেড়ে দেন ট্রাকের মালিক ও যে ট্রাক চাচ্ছে তাঁদের ওপর। এখানে ট্রাক ভাড়া করার নিয়ম হচ্ছে, প্রথমে গ্রাহককে জানাতে হয় কোথা থেকে কোথায় যাবে ট্রাক এবং কেমন ট্রাক লাগবে। এরপর একটা নির্ধারিত সময় ধরে ট্রাকমালিকেরা যে যাঁর মতো ভাড়া জানাতে থাকেন। অনেকগুলো দাম এলে সেখান থেকে গ্রাহক সাশ্রয়ী দামের সুবিধামতো ট্রাকটি বেছে নেন।

এনায়েত বলেন, ‘এমন না যে আমাদের মন চাইল তাই আমরা একটা নিয়ম তৈরি করি। আমাদের রীতিমতো প্রোডাক্ট টিম ও অ্যানালিটিকস আছে। তাঁরা আলাদা ক্রেতার ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করে এক একটা সেবা তৈরি করে।’ একরাম-এনায়েত যখন গুটি গুটি পায়ে এগোচ্ছিলেন, তখন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ একটা স্টার্ট আপ চ্যালেঞ্জের ঘোষণা করে।

অংশ নেবেন কি নেবেন না, এমন দোলাচলে থাকলেও শেষ মুহূর্তে চ্যালেঞ্জটা নিয়েই ফেলেন তাঁরা। ২০১৭ সালে ওই চ্যালেঞ্জে জেতেন তাঁরা। এনায়েত বলেন, ‘আর্থিক সহায়তাটা খুব বেশি না হলেও এখান থেকে যে পরিচিতিটা আসে, তখন সেটা খুব কাজে দিয়েছিল।’ দুই বন্ধুর দাবি, অ্যাপটাকেও অনেকবার আধুনিকীকরণ করতে হয়েছে।

আর তাঁদের অ্যাপটা ট্রাকমালিক ও সেবাগ্রহীতা উভয় পক্ষের জন্যই বেশ গোছানো। কখন কেমন ট্রাক লাগবে থেকে শুরু করে কত ওজনের কেমন ট্রাক লাগবে, সবকিছুই যেমন বলে দেওয়া যায়, আবার ট্রাকমালিকেরাও ঠিক সেই রকম কাজের ফরমাশ পান যেমন ট্রাক তাঁদের কাছে আছে। এতে ভুল হওয়ার আশঙ্কা কমে আসে।

‘বাজারটা এতই নতুন যে করার অনেক কিছু আছে, আমরা এখনো পুরোটা বুঝে উঠিনি। এটা সময়ের সঙ্গে আরও বড় হবে’, এমনই ধারণা একরামের। দেশে ব্যবসা তো বাড়বেই। ট্রাক লাগবে এখন দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে নেপাল ও মিয়ানমার পর্যন্ত এগোনো যায় কি না তা ভাবছে। এনায়েতের বিশ্বাস, আফ্রিকার দেশগুলোতেও এই ব্যবসাটাকে নিয়ে যেতে পারবেন তাঁরা।

ট্রাক যেখানেই যেমনই লাগুক, এনায়েত-একরাম তাঁদের পুরো টিম নিয়ে সেই সেবা দিতে দাঁড়িয়ে আছেন। এখন দেখার বিষয়, বাজারব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে ট্রাক নিয়ে কত দূর পর্যন্ত যায় তাঁদের ট্রাক লাগবে। তথ্যসূত্র: প্রথমআলো।

More News Of This Category