1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

৫ বছরেই শেষ ২০ বছরের আয়ু

ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট বা ডেমু ট্রেনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল হয় সাধারণত ২০ বছর। এ আয়ুষ্কাল ধরেই ২০১৩ সালে চীন থেকে আনা হয় ২০ সেট ডেমু ট্রেন। কিন্তু আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার আগেই একের পর এক নষ্ট হচ্ছে এগুলো। আমদানির পাঁচ বছরের মাথায় অর্থাৎ এক-চতুর্থাংশ আয়ুষ্কালেই নষ্ট হয়ে গেছে ১৫ সেট ডেমু। অবশিষ্ট আছে মাত্র পাঁচ সেট।

অবশিষ্ট এ পাঁচ সেট ডেমু দিয়ে পাঁচটি রুটে কোনোমতে কমিউটার সার্ভিস চালু রেখেছে রেলওয়ে। চালু থাকা ট্রেনগুলোও রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। চলতি বছরের মধ্যে এগুলোও অচল হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা রেলওয়ের।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ডেমু ট্রেন দিয়ে কমিউটার ট্রেনের যাত্রা হয়। এরপর একই বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সারা দেশের আরো ১২টি রুটে ডেমু দিয়ে কমিউটার সার্ভিস চালু করা হয়। ক্রমান্বয়ে নষ্ট হতে থাকায় রুটগুলো বন্ধ করে বর্তমানে পাঁচটি রুটে সার্ভিস পরিচালনা করছে রেলওয়ে।

চলাচলরত রুটগুলোতেও মাসের অধিকাংশ সময়ই বিকলজনিত কারণে সার্ভিস বন্ধ থাকে। এ অবস্থা চলতে থাকলে রেলওয়ের উচ্চাভিলাষী ডেমু সার্ভিসগুলো চলতি বছরের মধ্যেই কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও ক্রয়ের সময় এ ডেমু ট্রেনগুলো দিয়ে আগামী ২০ বছর সার্ভিস পরিচালনার কথা বলা হয়েছিল।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ১৬ জুন কুমিল্লা-চট্টগ্রাম-কুমিল্লা রুটের জনপ্রিয় লাকসাম কমিউটার বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে ছয় মাস ধরে এ কমিউটারের একটি সেট নষ্ট থাকায় একটি সেট দিয়ে ট্রেন সার্ভিসটি পরিচালনা করে আসছিল রেলওয়ে। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি বন্ধ হয়ে যায় ময়মনসিংহ-জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ রুটের ময়মনসিংহ কমিউটার।

১ জুন বন্ধ হয়ে যায় লাকসাম-চাঁদপুর-লাকসাম রুটের চাঁদপুর কমিউটার সার্ভিসটি। নষ্ট হয়ে গেলেও কোনো ধরনের মেরামত কার্যক্রম না থাকায় একের পর এক সার্ভিস বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে রেলওয়ে। যদিও স্বল্প দূরত্বের কারণে বিভিন্ন রুটে ডেমু দিয়ে কমিউটার সার্ভিসগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

রেলের পরিবহন বিভাগের হিসাব পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বর্তমানে শুধু নারায়ণগঞ্জ কমিউটার, কালিয়াকৈর কমিউটার, নোয়াখালী কমিউটার, নাজিরহাট কমিউটার ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কমিউটার ট্রেন সার্ভিস চলছে। মাসের বিভিন্ন সময়ে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এসব সার্ভিস বন্ধও রাখতে হচ্ছে রেলওয়েকে।

রেলের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী লোকোশেডে ৬, ১২ ও ১৯ নম্বর ডেমু অকেজো হয়ে পড়ে আছে। অন্যদিকে ঢাকা লোকোশেডে ২, ৩, ৫, ৭, ৮, ৯, ১১, ১২, ১৬ ও ১৭ নম্বর ডেমু অকেজো হয়ে পড়ে আছে। আবার ঠাকুরগাঁও, রংপুর কমিউটার সার্ভিসের জন্য বরাদ্দ ডেমু পশ্চিমাঞ্চলের কারখানায় পড়ে আছে অকেজো হয়ে। এ কারণে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জন্য বরাদ্দ দুটি ডেমু সার্ভিসই দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেলের ইঞ্জিন ও কোচের স্বাভাবিক অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ২৫ বছর ধরা হয়। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর চেয়েও বেশি, এমনকি দ্বিগুণ সময় পর্যন্ত সার্ভিস পাওয়া যায়। কিন্তু ডেমু ট্রেনগুলো ক্রয়ের পর ১৫-২০ বছর সার্ভিস পাওয়ার কথা বলা হলেও মাত্র ছয় বছরের মধ্যেই প্রায় সব ডেমু ট্রেন নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনায় রেলের অদূরদর্শিতাকেই দায়ী করছেন খোদ রেলওয়েসংশ্লিষ্টরা।

ডেমু ট্রেন মেরামতের বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ ফারুক আহমেদ বলেন, রেলের বর্তমান কারখানায় যতটুকু সম্ভব ডেমুগুলো মেরামত করা হচ্ছে। এর পরও ডেমু ট্রেনের বিশেষায়িত মেরামত কার্যক্রমের জন্য একটি কারখানা স্থাপন প্রস্তাবের সম্ভাব্যতা যাচাই হচ্ছে। আশা করছি, কারখানা স্থাপন হলে ডেমু ট্রেনগুলো নির্বিঘ্নে যাত্রীসেবা দিতে পারবে। যদিও নষ্ট ডেমুগুলো আর মেরামত সম্ভব নয় বলে দাবি করেছেন রেলের প্রকৌশল বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা।

বেশি দামে ক্রয় করা নিম্নমানের এসব ট্রেন দিয়ে স্বল্প দূরত্বে যাত্রী পরিবহনের কথা ছিল। কিন্তু অফিসগামী যাত্রীদের কথা বিবেচনা না করে যেখানে সেখানে সার্ভিস প্রদানের পাশাপাশি মেরামতহীনতায় প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ৭০০ কোটি টাকা দামের এসব ট্রেন। ফলে চট্টগ্রাম মহানগরীর যানজট নিরসনে রেলের কমিউটার সার্ভিসও ভেস্তে যেতে বসেছে।

চীন থেকে ৬৮৪ কোটি টাকায় আমদানি করা বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্যয়বহুল ও আলোচিত ডেমু ট্রেন নিয়ে শুরুতেই ভোগান্তিতে পড়ে কর্তৃপক্ষ। আমদানি প্রক্রিয়া নিয়ে অস্বচ্ছতার কারণে নষ্ট হলেও ট্রেনগুলো মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ২০১৬ সালে ডেমু ট্রেন মেরামতে ৩০৮ কোটি টাকার একটি ওয়ার্কশপ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও সমালোচনার মুখে সেটিও থেমে যায়।

ফলে রুটিন মেরামত হলেও বড় ধরনের ওভারহোলিং ছাড়াই ধীরে ধীরে ধ্বংস হচ্ছে ট্রেনগুলো। ডেমু ট্রেন নষ্ট থাকায় কমিউটার ট্রেন সার্ভিসের জটিলতার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রেলওয়েসংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। সম্প্রতি ডেমু ট্রেনগুলোকে নিয়মিত মেরামত কার্যক্রমে নিয়ে যেতে চিঠি দেয় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তার (ডিটিও) দপ্তর।

বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলীকে দেয়া ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ইঞ্জিন ক্যাবসহ একাধিক যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় রুটে একাধিক কমিউটার সার্ভিস বন্ধ হয়ে আছে। গত ৩ মার্চ দেয়া ওই চিঠিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে নষ্ট ডেমু ট্রেন মেরামতের উপযোগী করতে সহযোগিতা চাওয়া হয়। যদিও নষ্ট হয়েই আছে ডেমু ট্রেনগুলো। তথ্যসূত্র: বণিক বার্তা

More News Of This Category