1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

৫ শতাংশ অগ্রিম কর কার্যকর, মাল খালাসে অনীহা উদ্যোক্তাদের

পুরনো ভ্যাট আইনের আওতায় শুধু বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আমদানীকৃত ৬ হাজার ৫৪২টি পণ্যে ৫ শতাংশ অগ্রিম ট্রেড ভ্যাট (এটিভি) আদায় করত কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। শিল্পের জন্য কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল না এটি। নতুন ভ্যাট আইনে শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতেও একই হারে অগ্রিম কর (এটি) আরোপ করা হয়েছে। এর বিরোধিতা করছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। শিল্পপণ্য আমদানি করেও অনেকে তা খালাস করছেন না।

দেশের শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিল্পে অগ্রিম করের প্রস্তাবটি মোটেই বিনিয়োগবান্ধব নয়। ব্যবসা সহজ করার নীতির পরিপন্থী এটি। অযৌক্তিকভাবে শিল্প খাতে অগ্রিম কর চাপিয়ে দেয়া হলে দেশের অর্থনীতির জন্য তা সুখকর হবে না। তাই অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের দাবির পাশাপাশি পণ্য শুল্কায়ন বন্ধ রেখেছেন কেউ কেউ।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে নিয়মিত ওষুধের কাঁচামাল আমদানি করে চট্টগ্রামভিত্তিক এলবিয়ন গ্রুপ। চলতি সপ্তাহে নিয়মিত খালাস কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করায় বন্দরে এখন প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ২০টি চালান জমে আছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ৫ শতাংশ অগ্রিম কর দাবি করায় খালাস কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এলবিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান রাইসুল উদ্দিন সৈকত এ প্রসঙ্গে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে আমাদের ২০টি চালান খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ৫ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে বলছে। তাই খালাস কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রেখেছি। খালাস কার্যক্রম স্থগিত রাখায় প্রতিনিয়ত বন্দরে ড্যামারেজ দিতে হচ্ছে। এ কর প্রত্যাহার চেয়ে ওষুধ শিল্প সমিতির পক্ষ থেকে আমরা এনবিআরে চিঠি দিয়েছি। আশা করছি এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা হবে।

নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের ফলে নির্মাণ উপকরণ রডের দাম বেড়ে যাবে বলে দাবি এ খাতের উদ্যোক্তাদের। তারা বলছেন, এখন দুই ধাপে ভ্যাট আরোপ হবে। প্রথম দফায় বিলেট উৎপাদনের পর প্রতি টনে ২ হাজার টাকা ভ্যাট বসবে। বিলেট থেকে রড উৎপাদনের ক্ষেত্রে আরো ২ হাজার টাকা ভ্যাট দিতে হবে। এরপর অগ্রিম কর মিলে হবে আরো সাড়ে ৩ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে প্রতি টন রডে সাড়ে ৭ হাজার টাকা কর যুক্ত হবে।

অগ্রিম কর আরোপের কারণে আমদানির পরও কাঁচামাল খালাস না করার কথা জানিয়েছেন ইস্পাত শিল্পের শীর্ষস্থানীয় এক উদ্যোক্তা। নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, ৫ শতাংশ অগ্রিম কর আদায় হঠকারী সিদ্ধান্ত। চট্টগ্রাম বন্দরে কাঁচামালের চালান খালাসের কার্যক্রম থেকে এখন বিরত আছি। আশা করছি বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে সরকার যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেবে।

দেশের শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে বিএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বলেন, বাজেট ঘোষণার দিন থেকেই কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অগ্রিম কর আদায় করছে। বড় পরিসরে শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর জমা দিলে বড় অংকের অর্থ আটকা থাকবে। এতে ব্যবসার ব্যয় বেড়ে যাবে।

যদিও অগ্রিম কর পরিশোধকারী ব্যক্তি নির্ধারিত কর মেয়াদে সমপরিমাণ অর্থ সমন্বয়ের সুযোগ পাবেন বলে জানিয়েছে এনবিআর। কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, বাজেট প্রস্তাবনা অনুযায়ী ৫ শতাংশ হারে অগ্রিম কর পরিশোধ করতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। তবে নির্ধারিত পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট কর মেয়াদের ভ্যাট দাখিলপত্রে পরিশোধিত অগ্রিম করের সমপরিমাণ অর্থ সমন্বয় হবে। অনিবন্ধিতদেরও অগ্রিম কর ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে নির্ধারিত পদ্ধতিতে কমিশনারের কাছে আবেদন করতে হবে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার নাহিদ নওশাদ মুকুল এ প্রসঙ্গে বলেন, বাজেটের ঘোষণা অনুযায়ী নতুন করে ৫ শতাংশ হারে অগ্রিম কর আদায় করা হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী বাজেট ঘোষণার দিন থেকেই শুল্ক কর্তৃপক্ষ প্রস্তাবনা অনুযায়ী শুল্ক-কর আদায় করে। তবে অগ্রিম কর পরিশোধকারী ব্যক্তির জন্য সমপরিমাণ অর্থ সমন্বয় করার সুযোগ রাখা হয়েছে।

তার পরও আমদানি হওয়া পণ্যের শুল্কায়ন কার্যক্রমে অংশ নিতে অনীহা দেখাচ্ছেন চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী শিল্প উদ্যোক্তারা, যার প্রতিফলন রয়েছে এনবিআরের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণের চাপ থাকায় সাধারণত অর্থবছরের শেষের দিকে রাজস্ব আহরণ তুলনামূলক বেশি হয়। তবে এবার হয়েছে উল্টো। অগ্রিম কর পরিশোধের বাধ্যবাধকতার কারণে উদ্যোক্তাদের পণ্য খালাসে অনীহার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এনবিআরের আমদানি তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাজেট ঘোষণার দিন থেকে গত সোমবার পর্যন্ত পাঁচদিনে শুল্কায়ন হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া ২ হাজার ৩৭৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা মূল্যের ৬ লাখ ৯ হাজার টন পণ্য। এতে সরকারের মোট রাজস্ব এসেছে ৪০৭ কোটি টাকা। অথচ বাজেট ঘোষণার ঠিক আগের পাঁচদিনে শুল্কায়ন হয়েছিল প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ৮ লাখ ৮৮ হাজার টন পণ্য। এ থেকে সরকারের রাজস্ব এসেছিল ৫৫০ কোটি টাকা।

পুরনো ভ্যাট আইন অনুযায়ী, শুধু বাণিজ্যিকভাবে আমদানি (যারা পণ্য আমদানি করে সরাসরি বিক্রি করে) পর্যায়ে ৫ শতাংশ এটিভি পরিশোধ করতে হতো। আমদানি মূল্যের ওপর ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ মূল্য সংযোজন করে তার ওপর ৫ শতাংশ হারে এ ভ্যাট আদায় করা হতো। পরবর্তী সময়ে শর্তসাপেক্ষে এটিভি রিফান্ড করা হতো।

তবে উৎপাদন শিল্পে আমদানি করা কাঁচামালের ওপর এটিভি ছিল না। নতুন ভ্যাট আইনে এটিভি পরিবর্তন করে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর আরোপ করা হয়েছে। সবার জন্যই এটি প্রযোজ্য ধরে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ মূল্য সংযোজন বাদ দেয়া হয়েছে। এতে বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা সুবিধা পেলেও উৎপাদন শিল্পে সংকট তৈরি করেছে।

এ কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশও (ইএবি)। এক অনুষ্ঠানে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানির ওপর এরই মধ্যে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর আরোপ করা হয়েছে, যা ফেরত বা সমন্বয়যোগ্য। যেহেতু ফেরত ও সমন্বয়যোগ্য, তাই এ কর বলবৎ না করার অনুরোধ করছি। তথ্যসূত্র: বনিকবার্তা

More News Of This Category