পলিটিক্স এর বাংলা হচ্ছে রাজনীতি। বাংলাদেশে পলিটিক্স শব্দটি শুনেন নি এমন লোক খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল। আগেরকার দিনে এদেশে পলিটিক্স বলতে শুধু ভিলেজ পলিটিক্স বা গ্রামীণ পলিটিক্স এর কথা বুঝতো সবাই। কিন্তু এখন শহর, গ্রামে-গঞ্জে সর্বত্র এর বিস্তার ছড়িয়ে পড়েছে।
পলিটিক্স-এর খারাপ দিকগুলো বিবেচনা করে এদেশে পলিটিক্স বিষয়টিকে অনেকেই নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন আর এর থেকে নিজেকে দূরে রাখাই ভাল মনে করেন। কিন্তু এর থেকে দুরে থাকা এত সহজ না, কারণ আপনি যে কর্মক্ষেত্রে কাজ করছেন সেখানেও পলিটিক্স তার ভাগ জমিয়ে রেখেছে। তাই ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত আপনাকে এর সাথে নিজেকে জড়াতে হচ্ছে। আজ জানবো অফিস পলিটিক্স নিয়ে।
অফিস পলিটিক্স কি? অফিস পলিটিক্স হচ্ছে এমন একটি বিষয় যা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ সৃষ্টি করে যা তাদের মধ্যে ব্যক্তিগত সংঘাত তৈরি করে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিবর্গ কর্মক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা ও মনোযোগ লাভের উদ্দেশ্যে একে অন্যের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারে লিপ্ত হয়।
অফিস পলিটিক্স কেন হয়? প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীরা যখন অল্প পরিশ্রমে বেশি সুবিধা লাভের জন্য চেষ্টা করে তখন অফিস পলিটিক্স মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। অল্প সময়ের মধ্যে নিজের সামর্থ্যের অতিরিক্ত কোন কিছু অর্জন করার জন্য যখন অফিসের কর্মীরা সচেষ্ট হয় তখন অফিস পলিটিক্স সৃষ্টি হয়। প্রতিষ্ঠানের দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান ব্যবস্থাও এর অন্যতম প্রধান কারণ।
কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিমাণে একে অন্যের সমালোচনা করার ফলেও প্রতিষ্ঠানে অফিস পলিটিক্স গড়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত মাত্রার প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশও এর কারণ। কর্মীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি। অন্যের কাজে অতিরিক্ত মাত্রায় নাক গলানো। স্বজনপ্রীতির পরিবেশ।প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের একে অন্যের প্রতি ঈর্ষা। কর্মীদের কাজের অসম মূল্যায়ন।
নিজের পজিশন-কে অতিরিক্ত প্রায়োরিটি দিয়ে অন্যদের ছোট করে দেখে তাদের পেছনে লাগাটাও এক ধরনের অফিস পলিটিক্স। নিজের স্বার্থে সকলের মধ্যে একটা কমিউনিকেশন গ্যাপ তৈরি করা।
অফিস পলিটিক্স-এর ক্ষতিকর প্রভাব: কর্মক্ষেত্রে পলিটিক্স একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই ভয়ংকর একটি ব্যাপার। এটি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উৎপাদন ও উন্নয়নকে মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে। অফিস পলিটিক্স-এর ফলে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা অন্যের ক্ষতি সাধন করতেই ব্যস্ত থাকে যা তাদের কাজে মনোযোগে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
অফিস পলিটিক্স কর্মীদের মধ্যে নেতিবাচক সম্পর্ক তৈরি করে ফলে প্রতিষ্ঠানেও নেতিবাচক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। একটি প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে যাওয়ার জন্য দলীয় কাজের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু অফিস পলিটিক্স-এর নেতিবাচক প্রভাবের কারণে তা কখনও সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা সম্ভব না। কর্মীদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাবও তৈরি করে অফিস পলিটিক্স।
কাজের যথাযথ মূল্যায়নের অভাবে কর্মীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয় যার ফলে প্রতিষ্ঠানের কাজে তারা অনীহা প্রকাশ করে। অফিস পলিটিক্স-এর কারণে কর্মীরা নিজের ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকেন, যা তাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। নেতিবাচক সম্পর্কের কারণে কর্মীরা একে অন্যকে বিশ্বাস করতে পারে না। ফলে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
কিভাবে সুরক্ষা করবেন নিজেকে? অপ্রয়োজনীয় দ্বন্দ ও সংঘাত থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। অন্যের কাজে নাক না গলিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দিন। সবসময় অন্যের কাজের ভুল ধরবেন না। সৎ থাকুন। নিজের কাজে সবসময় স্বচ্ছতা বজায় রাখুন। অপ্রয়োজনীয় কোন কিছুতে নিজের প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না।
কখনও অন্যের ব্যক্তিগত ফাইল বা তথ্যে হস্তক্ষেপ করবেন না। অফিসে অন্যের বিরুদ্ধে গুজব ছড়াবেন না। সবসময় নিজের মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখবেন। নিজের একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং সেটাতেই নিজের মনোযোগ ধরে রাখুন। নিজের কাজকে উপভোগ করুন।
অফিস পলিটিক্স প্রতিষ্ঠানের জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি একজন ব্যক্তির ক্যারিয়ার উন্নয়নেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তাই এথেকে নিজেকে দূরে রাখাই উত্তম। কিন্তু যদি জড়াতেই হয় তাহলে এটিকে যেন প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিত্বের উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা যায় সেই প্রচেষ্টা করতে হবে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে সুষ্ঠু প্রতিযোগীতার পরিবেশ তৈরি করে এর সুফল লাভ করতে হবে।