অবসরজীবনে খাদ্যাভ্যাস ও সময়ের ব্যবহার শরীর ও স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। অবসর যাপনকারী ব্যক্তিদের প্রতিদিন বসে থাকার সময়ের পরিমাণ গড়ে চার থেকে ছয় ঘণ্টা। অনেকেই এ সময়ের বেশির ভাগ টেলিভিশন দেখে কাটান। আর এভাবে বসে থাকাই কাল হয়ে দাঁড়ায়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়ে অনেকে নানা রোগে ভোগেন। ফিনল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব তারকুর এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ওই গবেষক দলের প্রধান তুইজা লেসকিনেন বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, অবসরে যাওয়ার আগে, বিশেষত নারীরা এবং কর্মক্ষেত্রে যাঁরা প্রচুর বসে থেকে কাজ করেছেন, অবসরে গিয়ে তাঁদের বসে থাকা আরও বেড়ে গেছে। এতে তাঁদের শারীরিক পরিশ্রমের সক্ষমতা কমে যাওয়া, ঘুমের সমস্যা, মানসিক জটিলতা বা ভগ্নস্বাস্থ্যজনিত সমস্যা দেখা গেছে।
ওই গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম ডেকান ক্রনিকেল জানিয়েছে, বৃদ্ধ জনগোষ্ঠী দিনের গুরুত্বপূর্ণ সময় বসেই পার করে দেন। হৃদ্রোগের ঝুঁকি, স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা টেলিভিশন দেখতে পছন্দ করেন। তবে তাঁদের শুয়ে-বসে থাকার এমন আচরণ বদলে দিনের আলোতে কাজ করে স্বাস্থ্যজনিত ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।
বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতা ও শারীরিক দুর্বলতার কারণে প্রবীণদের শুয়ে-বসে থাকার প্রবণতা দেখা যায়। এই সময়টা টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখে সময় ব্যয় করতে তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। বয়স্ক ব্যক্তিদের অবসর সময় কাটানোর বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। কারণ, অতিরিক্ত শুয়ে-বসে থাকার কারণে শারীরিক জটিলতা ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া তাঁদের চলাফেরা কমে যাওয়ায় পরিবারের বাইরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ কমে যায়। এতে তাঁদের একাকিত্ব বেড়ে যায়। ফলে স্বভাবতই তাঁদের মেজাজ হয়ে যায় খিটখিটে। এই বয়সে খাদ্যাভ্যাসও পাল্টে যায়। মিষ্টিজাতীয় খাবারে তাঁরা আগ্রহী হন। অস্থিরতা বাড়ে, কমে যায় সহনশীলতা। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে প্রবীণেরা শিশুদের মতো বায়না ধরে বসেন।
জৈবিক বিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ে দ্য জার্নালস অব গেরোনটোলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দিনে যেসব বয়স্ক মানুষ পাঁচ ঘণ্টার বেশি টেলিভিশন দেখেন, ১০ বছর পর এঁদের ৬৫ শতাংশের হাঁটতে সমস্যা সৃষ্টি হয় কিংবা হাঁটতে অক্ষম হয়ে পড়ে। তুলনামূলক যাঁরা দুই ঘণ্টার কম সময় টেলিভিশন দেখেন, তাঁদের এই সমস্যা হয় না। যাঁরা সপ্তাহে বেশি পরিশ্রম করেন না, তাঁদের জন্য বেশি টেলিভিশন দেখা বিশেষভাবে ক্ষতিকর বলেও সতর্ক করা হয় ওই গবেষণায়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই গবেষণায় ১ লাখ ৩৪ হাজার জন অংশ নেন। যখন গবেষণা শুরু হয়, তখন সবার বয়স ছিল ৫১ থেকে ৭১ বছরের মধ্যে। তাঁদের প্রত্যেকের স্বাস্থ্য ভালো ছিল। তাঁরা প্রশ্নের জবাবে দিনে কত ঘণ্টা বসে থাকেন, টেলিভিশন দেখেন এবং শারীরিক কাজে ব্যয় করেন, সে বিষয়ে জানান। ১০ বছর পর তাঁদের ওপর ফের জরিপ করা হয়। এ সময় তাঁদের হাঁটার গতি ও চলাফেরা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ পর্যায়ে যাঁরা প্রতি ঘণ্টায় দুই মাইলের কম হেঁটেছেন কিংবা মোটের ওপর হাঁটতে অক্ষম হয়েছেন, তাঁদের গতিশীলতার অক্ষমতা বলে বিবেচনা করা হয়েছে। ১০ বছর আগে যে নমুনা নিয়ে গবেষণা শুরু হয়, ১০ বছর পর প্রায় ৩০ শতাংশ নমুনার মিল পাওয়া গেছে।
গবেষণায় বেশির ভাগ বয়স্ক ব্যক্তির স্বাস্থ্যের অবনতির জন্য অতিরিক্ত বসে থাকাকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দিনে অন্তত পাঁচ ঘণ্টা টিভি দেখা অক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। প্রবীণ ব্যক্তিদের যতটুকু শারীরিক পরিশ্রম করা দরকার ছিল, সেটা তাঁরা করেননি। যখনই পরিশ্রমের কথা মনে পড়েছে, সেটা পরে করবেন ভেবে রেখে দিয়েছেন। অবশ্য গবেষকেরা অক্ষমতার ঝুঁকিকে প্রভাবিত করে—এমন বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন।
এই গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির এক্সারসাইজ অ্যান্ড নিউট্রিশন সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান লররেটা ডিপ্রিয়েট্রো বলেন, বৃদ্ধদের শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা তাঁদের স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। প্রতি সন্ধ্যায় তাঁদের টেলিভিশন দেখার ঘণ্টাগুলো সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক।
তথ্যসূত্র: প্রথমআলো ডটকম।