1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

ভেঞ্চার ক্যাপিটাল আমাদের ব্যবসাকে সমৃদ্ধ করেছে

২০০৬ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে সদ্য স্নাতক এক স্বপ্নদ্রষ্টা তরুণের হাত ধরে যাত্রা করে ব্রেইন স্টেশন টোয়েন্টি থ্রি। কোম্পানি প্রতিষ্ঠার জন্য মূলধন কম থাকলেও উদ্যোক্তার আত্মবিশ্বাস ছিল অগাধ। প্রাথমিকভাবে বিজনেস ফোকাস ছিল আন্তর্জাতিক বাজার।

তবে ২০১০ সাল থেকে স্টার্টআপটি স্থানীয় বাজারভিত্তিক ব্যবসাও শুরু করে। এর পর থেকেই কোম্পানিটি ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে আসছে। বর্তমানে এ কোম্পানির অধীনে কাজ করছেন দুই শতাধিক সফটওয়্যার প্রকৌশলী। শুধু বাংলাদেশই নয়, ব্রেইন স্টেশন টোয়েন্টি থ্রি আজ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন, জার্মানি, কানাডা, সুইজারল্যান্ড ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিষ্ঠিত একটি নাম।

কোম্পানির যাত্রা, সম্প্রসারণ, ভেঞ্চার ক্যাপিটালের বিনিয়োগ ইত্যাদি নিয়ে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রাইসুল কবির। আমরা মূলত সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট করি। সফটওয়্যারের মধ্যে মূলত রয়েছে ওয়েব মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। দুই-আড়াই বছর ধরে আমরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও মেশিন লার্নিংয়ের দিকেও জোর দিচ্ছি।

দেশী-বিদেশী নানা প্রতিষ্ঠানকে আমরা সফটওয়্যার সেবা প্রদান করি। আমাদের প্রধান গ্রাহক হলো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। শুরুর দিকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করা হতো। ২০০৬ সালে ল্যাটিচিউড টোয়েন্টি থ্রি নামের একটি কোম্পানির কয়েকজন শেয়ারহোল্ডারের সঙ্গে পার্টনারশিপে আমি ব্রেইন স্টেশন টোয়েন্টি থ্রি প্রতিষ্ঠা করি।

ওই পার্টনাররাই মূলত কাজ করার জায়গা বা কম্পিউটারের ব্যবস্থা করেছিলেন। সব মিলিয়ে এখানে প্রায় ৬-৭ লাখ টাকার একটা বিনিয়োগ ছিল। আমার নিজের এখানে কোনো বিনিয়োগ ছিল না। আমরা ফিফটি-ফিফটি পার্টনার হিসেবে শুরু করি, আমার ফিফটি তাদের ফিফটি।শুরুতে আমরা বাইরের বিনিয়োগ নিতে আগ্রহী ছিলাম না। সে সময় বিপণী নামে আমাদের একটি ই-কমার্স সাইট ছিল।

মূলত বিপণীর জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যেই আমরা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি বিডি ভেঞ্চারকে অ্যাপ্রোচ করি। বিডি ভেঞ্চারের সঙ্গে বিপণীর সব ধরনের চুক্তিও হয়ে গেছে। কিন্তু বিপণীর একজন অংশীদার সে সময় ব্যবসা থেকে সরে যেতে চাইলে বিডি ভেঞ্চারকে আমরা টার্মশিট ফেরত দিয়ে দিতে চাই। টার্মশিট ফেরত দিতে চাইলে বিডি ভেঞ্চার খুবই অবাক হয়।

কারণ ভেঞ্চার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিন্তু কোনো রকম কোলেটারাল থাকে না। তারা তখন ২ কোটি টাকা আমাদের দিতে চাইছে এবং এজন্য তারা টার্মশিট দিয়ে দিয়েছে। আমি যদি স্বাক্ষর করে টাকাটা নিয়ে নিই, তাদের কিছু করার নেই। এ রকম অবস্থায় টাকাটা আমরা ফেরত দিচ্ছি, এতে তারা খুবই অবাক হয়েছে। তাই বিডি ভেঞ্চারই মূলত আমাকে প্রস্তাবটা দেয়।

তারা বলল, বিপণীতে বিনিয়োগ না করলেও তারা ব্রেইন স্টেশন টোয়েন্টি থ্রিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। আমার পার্টনাররা তখন বিনিয়োগ নিতে রাজি হচ্ছিলেন না। কারণ ব্রেইন স্টেশন একটি সার্ভিস কোম্পানি। এ ধরনের কোম্পানিতে বিনিয়োগ বেশি একটা দরকার হয় না। কারণ এখানে কাজ করে দ্রুত টাকা পাওয়া যাচ্ছে।

আমার কাছে মনে হলো, একটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ হলে অর্গানাইজেশনের ম্যাচিউরিটিটা বেশি আসে। বিডি ভেঞ্চার আসার আগে আমাদের কোনো ফিন্যান্স বিভাগ ছিল না, শুধু অ্যাকাউন্টস বিভাগ ছিল। অ্যাকাউন্টস ও ফিন্যান্সের মধ্যে কী পার্থক্য, সেটাও আমরা জানতাম না। আমাদের কোম্পানি সেক্রেটারি ছিল না।

করপোরেট গভর্ন্যান্সের জায়গাটায় আমাদের মারাত্মক ঘাটতি ছিল। তো আমি তখন ভাবলাম, যদি এ ধরনের প্রতিষ্ঠান টাকা দিয়ে শেয়ারহোল্ডার হয়, তখন তারা নিশ্চয় চাইবে প্রতিষ্ঠানটিতে করপোরেট গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠা করতে। সে জায়গা থেকেই পার্টনারদের আমি রাজি করাই এবং বিডি ভেঞ্চারের সঙ্গে আমরা চুক্তিতে আসি।

ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিনিয়োগে আসার পর আমরা তাদের কাছ থেকে নানা বিষয়ে পরামর্শ পেতে শুরু করলাম। তারা আমাদের বলল, এখানে অর্গানাইজেশনাল অনেক ঝুঁকি রয়েছে। বিডি ভেঞ্চার আসার পর প্রত্যেকটা পর্ষদ সভায় প্রশ্ন করত যে অ্যাকাউন্ট্যান্টস রিসিভেবল এত বেশি কেন। তাদের এসব প্রশ্নের কারণে আমরা নিজেদের শোধরাতে পেরেছি।

বিডি ভেঞ্চারের কাছ থেকে বিনিয়োগ পাওয়ার পর আমরা নতুন একটা ফ্লোর নিয়েছি। এছাড়া সেলস ও মার্কেটিংয়ে আমরা নিজেদের আরো সম্প্রসারিত করেছি। আমাদের জনবল বৃদ্ধি করেছি। নেদারল্যান্ডসে তখন একজন বিক্রয় প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এছাড়া কিছু দেশে মার্কেটিং এজেন্সি হায়ার করা হয়েছিল।

বিডি ভেঞ্চারের কাছ থেকে বিনিয়োগ পাওয়ার প্রথম বছরে আমাদের ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, দ্বিতীয় বছরে ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ও তৃতীয় বছরে ৪৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তিন বছরে গড়ে প্রায় ৩৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এখন আমাদের ভ্যালুয়েশন প্রায় ১০০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে আমাদের ভ্যালুয়েশন কত ছিল, সেটি আমরা প্রকাশ করতে চাইছি না।

এ মুহূর্তে আমরা দেখছি মার্কেটে বেশকিছু ভালো সুযোগ রয়েছে। আমাদের এখন অনসাইড সেলস অফিস থাকা দরকার। আমরা যদি বিদেশে সেলস অফিস করি, তাহলে আমাদের প্রবৃদ্ধি আরো দ্রুত বাড়তে পারে। এজন্য আমাদের নতুন বিনিয়োগে যাওয়ার প্রয়োজন হবে। অনেকের কাছ থেকে আমরা সাড়াও পাচ্ছি। আমাদের প্রবৃদ্ধির যে ধারা চলমান রয়েছে, তা অব্যাহত থাকলে আশা করছি ২০২৩ সালের মধ্যে আমরা আইপিওতে যাব। তথ্যসূত্র: বনিকবার্তা

More News Of This Category