এলাকাভেদে রাজধানীতে ফ্ল্যাটের দামের তারতম্য অনেক বেশি। ঢাকার অভিজাত এলাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনতে আপনাকে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে, তা দিয়ে অনেক এলাকায় তিন-চারটি ফ্ল্যাট কেনা যাবে। যাঁদের আর্থিক সক্ষমতা বেশি তাঁদের কথা ভিন্ন। পছন্দ হলে তাঁরা যেকোনো দামেই ফ্ল্যাট কিনতে পারেন। তবে মধ্যম আয়ের মানুষকে এলাকাভিত্তিক দামের খোঁজটি নিতে হয়।
যাঁরা তুলনামূলক কম দামে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছেন, তাঁরা যেতে পারেন মিরপুর, উত্তরা, সবুজবাগ, বাসাবো, বনশ্রী, খিলগাঁও এলাকায়। এসব এলাকায় আপনি প্রতি বর্গফুট সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকার মধ্যে ফ্ল্যাট পাবেন। এসব এলাকায় আরেকটু ভালো মানের ফ্ল্যাট খুঁজলে ব্যয় করতে হবে প্রতি বর্গফুট পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা।
রাজধানীর ধানমন্ডির কিছু এলাকা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, মোহাম্মদপুর, ঢাকার ইস্কাটন, সেগুনবাগিচাসহ কিছু এলাকায় ফ্ল্যাট কিনতে আপনাকে মধ্যম পর্যায়ের দাম দিতে হবে। এসব এলাকায় ভালো লোকেশন ও চওড়া রাস্তার পাশে ফ্ল্যাট কিনতে ব্যয় করতে হবে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা। গুলশান, বারিধারা, ধানমন্ডি লেকের পাশের ভবন ও বনানীর কিছু এলাকায় ফ্ল্যাট কিনতে গেলে প্রতি বর্গফুট ১৫ হাজার টাকার বেশি দাম দিতে হবে।
তবে ফ্ল্যাটের দাম কত হবে, তা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানভেদে যেমন মানের ভিন্নতা থাকে, তেমনি দামেও তারতম্য হয়। ভবনের অবস্থান, এলাকার পরিবেশ, রাস্তার আকার, নির্মাণশৈলী ইত্যাদির ওপরও ফ্ল্যাটের দামের কম-বেশি হওয়া নির্ভর করে।
ভবন যে এলাকায়ই হোক, প্রবেশের রাস্তা সরু হলে ফ্ল্যাটের দাম কম হয়। যেসব ভবন অনেক খালি জায়গা রেখে গড়ে ওঠে, খেলার মাঠ, সুইমিংপুলসহ বিভিন্ন সুবিধা থাকে, সেসব ভবনের ফ্ল্যাটের দাম অনেক বেশি পড়ে।
সার্বিকভাবে আপনাকে বিবেচনা করতে হবে, আপনি কী ধরনের ফ্ল্যাট চান, আর কত টাকা ব্যয় করতে ইচ্ছুক। সবকিছু মিলে গেলে ফ্ল্যাট বুকিং দেওয়ার এখনই সময়। কারণ, আবাসন খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে বিক্রি-বাট্টা ভালো না থাকায় ফ্ল্যাটের দাম বাড়েনি। এখন ঋণের সুদের হার কমেছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। ফলে আবাসন খাত ভালোর দিকে যাচ্ছে।
কয়েকটি আবাসন কোম্পানি ও ঋণদাতা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঢাকার কোন এলাকায় ফ্ল্যাটের দাম কেমন, সে সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়। জানতে চাইলে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের বিপণন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফরহাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার সব এলাকায় নির্মাণ খরচ প্রায় সমান। তবে ফ্ল্যাটের দাম নির্ভর করে জমির দামের ওপর। যেসব এলাকায় জমি পাওয়া যায় এবং দাম তুলনামূলক কম, সেখানে ফ্ল্যাটের দামও কম।
বড় কোম্পানির বিপণন বিভাগের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাটের চলতি দাম সম্পর্কে খোঁজ রাখতে হয়। সেই অভিজ্ঞতা থেকে ফরহাদুজ্জামান বলেন, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া ও সাভারে প্রতি বর্গফুট সাড়ে তিন থেকে চার হাজারের মধ্যেই ফ্ল্যাট পাওয়া যাবে। মিরপুরের এলাকাভিত্তিক ফ্ল্যাটের দামে পার্থক্য আছে। সেখানে গাড়ি প্রবেশের মতো রাস্তার পাশে ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুট পাঁচ হাজার টাকার কমে মিলবে না। আবার মূল রাস্তা থেকে ভেতরের দিকে ভবন হলে ফ্ল্যাটের দাম আরও কিছু কম হবে।
ফ্ল্যাটের দামের দিক দিয়ে ধানমন্ডিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় বলে উল্লেখ করেন ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ওই কর্মকর্তা। তাঁর মতে, ধানমন্ডির ৬, ৭, ৮, ৯সহ যেসব সড়কে এখন পুরোপুরি আবাসিক এলাকা আছে, সেখানে স্বনামধন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ফ্ল্যাট কিনতে প্রতি বর্গফুট ৯ থেকে ১৬ হাজার টাকা দাম পড়বে। লেকের পাড়ে বাড়ি হলে ফ্ল্যাটের দাম হবে প্রতি বর্গফুট ১৫ হাজার টাকার ওপরে।
আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তর গুলশানে একেকটি ফ্ল্যাটের দাম পড়ে প্রতি বর্গফুট ২০ হাজার টাকার ওপরে। একটু কমে পাওয়া যায় নিকেতন এলাকায়, সেখানে কেনা যাবে প্রতি বর্গফুট ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে। অন্যান্য এলাকায় প্রতি বর্গফুট ১৫ হাজার টাকার আশপাশে ফ্ল্যাটের কেনাবেচা হচ্ছে।
বনানীতে কিছু এলাকায় ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুট ১৫ হাজার টাকার বেশি। তবে সাধারণ এলাকায় প্রতি বর্গফুট ১০ হাজার টাকার আশপাশের দামে ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ব্লকভেদে প্রতি বর্গফুট ৪ থেকে ৮ হাজার টাকায় ফ্ল্যাট মেলে।
পুরান ঢাকায় বেশ কিছু প্রকল্প আছে লক্ষ্মী বিল্ডার্সের। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কর্মকার বলেন, সেখানে এখন সবচেয়ে বেশি দামে ফ্ল্যাট বিক্রি হয় ওয়ারী এলাকায়। ওয়ারীতে প্রতি বর্গফুট ৮ থেকে ১০ হাজার, লক্ষ্মীবাজারে ৬ থেকে ৮ হাজার, স্বামীবাগ ও নারিন্দায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় ফ্ল্যাট মেলে।
বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে ফ্ল্যাটের দাম ঢাকার মতো বেশি নয়। চট্টগ্রামের এবিসি হোল্ডিংসের পরিচালক আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, সেখানে ফ্ল্যাটের দাম এলাকাভেদে প্রতি বর্গফুট ৩ থেকে ৯ হাজার টাকার মধ্যে। শহরের দক্ষিণ খুলশী, নাছিরাবাদ, হিলভিউ, জামালখান, নন্দনকানন, চাটগাঁওয়ের মতো এলাকায় একটু বেশি দাম পড়ে। তবে অন্যান্য এলাকায় প্রতি বর্গফুট ৪ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে মানসম্মত ফ্ল্যাট পাওয়া যায়।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।