প্রতিনিয়তই বিকাশ ব্যবহার করেন বনশ্রীর গাজী মাজহার। নিয়মিত বাড়ি টাকা পাঠান এই বিকাশেই। আবার ছোটো-খাটো টাকা আনার ক্ষেত্রেও জনপ্রিয় এই লেনদেন মাধ্যমটি ব্যবহার করেন। কিন্তু টাকা উত্তোলন করতে গেলেই পড়েন বিপাকে।
ক্যাশ-আউটের ক্ষেত্রে প্রতি হাজার টাকায় এজেন্টকে নগদ ২০ টাকা গুণতে হয়। অথচ দোকানদারের নেয়ার কথা নির্ধারিত সাড়ে ১৮ টাকা।
মাজহার বলেন, জেনেশুনেও হাজারে দেড় টাকা বেশি দিতে হয়। অনেক সময় এখানে কিছু করার থাকে না। যেন সাড়ে ১৮ টাকা নয়, ২০ টাকাই চার্জ কেটে রাখার নিয়ম হয়ে গেছে। শুধু মাজহার নয়, বিকাশ ব্যবহারী অনেকেরই অভিযোগ এমন।
বিকাশের কর্মকর্তারা বলছেন, সিস্টেমের মধ্য থেকে এজেন্টদের বাড়তি দেড় টাকা নেয়ার সুযোগ নেই। কারণ, ক্যাশ-আউটের ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন থেকেই হাজারে সাড়ে ১৮ টাকা কেটে নেয়া হয়। কোনোভাবেই ২০ টাকা কাটতে পারে না দোকানদাররা। তবে কি বিকাশই এই বাড়তি টাকা কেটে নেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে?
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান মার্কেটিং অফিসার মীর নওবত আলী বলছেন, এজেন্ট বা বিকাশের যে দোকানগুলো আছে- তারা চার্জ হিসেবে বাড়তি দেড় টাকা নিতে পারে না। মাজহার বলছিলেন চার্জ হিসেবে বিকাশ ভাঙতি না রেখে একটা পূর্ণ সংখ্যা করলে ভালো হতো- যেমন সেটা হতে পারে ১৫ টাকা বা ১৮ টাকা। কারণ পূর্ণ সংখ্যা না রাখার কারণে এজেন্টরা বেশিরভাগ সময় দেড় টাকা ফেরত দিতে পারেন না। ফলে বাড়তি দিয়েই ২০ টাকা গুণে আসছি।
এবিষয়ে বনশ্রী এলাকার বিকাশ এজেন্ট শরিফুল ইসলাম রিপন বলেন, প্রতি হাজারে বিকাশের চার্জ ১৮.৫০ টাকা। কিন্তু গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতি হাজারে বিশ টাকা নেয়া হয় খুচরা টাকা সমস্যার জন্য। আর গ্রাহকও বিশ টাকা দিতে আপত্তি করে না বলেই সব এজেন্ট তা নিচ্ছে বলে মনে হয়। তবে কেউ যদি সাড়ে ১৮ টাকা দেয় তাহলে আমারা সেটিই নিয়ে থাকি। কখনো কোন এজেন্ট ২০ টাকা চার্জ দাবি করেছে এমন শোনা যায়নি।
রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বিকাশ অ্যাপের আনুষ্ঠানিক পরিচয় পর্বে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কামাল কাদীরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ক্যাশ আউট করার ক্ষেত্রে বিকাশ হাজারে সাড়ে ১৮ টাকা চার্জ নেয়। যার বড় একটি অংশ এজেন্ট বা দোকানদারদের পকেটে যায়। আর সীমিত কিছু আসে বিকাশের কাছে। বাকিটা মোবাইল ফোন অপারেটররা পেয়ে থাকে।
কামাল কাদীর বলেন, হাজারে চার্জ হিসেবে যে সাড়ে ১৮ টাকা নেয়া হয়, তার ৭৭ শতাংশ এজেন্টদের পেছনে যায়, ৭ ভাগ যায় মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছে। আর বাকি ১৬ ভাগ দিয়েই বিকাশ তার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
“এই ১৬ শতাংশ অর্থ দিয়ে অফিস খরচ, প্রযুক্তি খরচ, কর্মীদের বেতন, বিদ্যুৎ খরচ, মেইনটেন্যান্সসহ সব ধরনের খরচ মেটানো হয়।”
এজেন্ট ও দোকানগুলোকে কেন চার্জের ৭৭ শতাংশ দেয়া হয়- সে সম্পর্কে তিনি বলেন, যেখান থেকে ক্যাশ-আউট বা ক্যাশ-ইন হচ্ছে, ওই দোকানদারদের তো ব্যবসা করার আরও অনেক সুযোগ আছে।
‘তারা চাইলে চানাচুর বিক্রি করতে পারে, মুড়ি বিক্রি করতে পারে। আবার সাবান, কোক বিক্রি করতে পারে। রিটার্ন যদি পর্যাপ্ত না হয়, তবে তিনি তো বিকাশের ব্যবসা করবেন না।’ এই হিসেবে এজেন্টরা যদি মোটা অংশই পেয়ে থাকেন, তবে গ্রাহকদের কাছ থেকে তাদের বাড়তি দেড় টাকা পকেটে ভরার কথা নয়। মীর নওবত আলী বলেন, এই টাকা তো আর বিকাশ নেয় না। বিকাশের সিস্টেমে নির্ধারিত যে টাকা বেঁধে দেয়া আছে, সেটা বিকাশই গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে অটোমেটিক কেটে নেয়। দোকানদারদের এই টাকা কেটে নেয়ার সুযোগ নেই।
“তবে যদি ২০ টাকা তারা নিয়ে থাকে এবং কেউ অভিযোগ করলে অবশ্যই ওই এজেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।” বিকাশ গ্রাহকের বাড়তি দেড় টাকা কেটে নেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে- এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে গ্রাহকদেরই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ আমাদের সার্ভিসে উল্লেখই করা থাকে- কত টাকা কেটে নেয়া হবে?
সম্প্রতি চালু হওয়া অ্যাপ দেখিয়ে তিনি বলেন, আমাদের অ্যাপে চার্জ প্রতি হাজারে সাড়ে ৩.৫০ টাকা কমিয়ে ১৫ টাকা করা হয়েছে। যা ক্যাশ-আউটের ক্ষেত্রে গ্রাহককে জানিয়ে দেবে। বিকাশের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা অবিচল থাকায় তাদের জন্যই এই অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। ছবি ও রেখা সমৃদ্ধ অ্যাপে নির্ভুলভাবে লেনদেন করা সম্ভব হবে।
গুগল অ্যাপ স্টোরে গিয়ে বিনামূল্যে অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে যেকোনো স্মার্টফোনে। যারা এই অ্যাপ ব্যবহার করছেন তারা পার্সোনাল বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে চার্জ ফ্রি সুবিধা পান। আরও আকর্ষণ রমজান মাসে কেনাকাটার ক্ষেত্রে এই অ্যাপের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করলে ২৫ শতাংশ ক্যাশ-ব্যাক পাবেন গ্রাহকরা।
তথ্যসূত্র: আরটিভি অনলাইন।