যখনি কেউ কোন পণ্য বা সেবা ক্রয় করে, সে কাস্টমার। আর যে ব্যাবহার করে সে হচ্ছে কনজ্যুমার। এখানে একজন কাস্টমার চাইলে নিজের ব্যাবহারের জন্যেও পণ্য ক্রয় করতে পারেন। আবার ব্যাবসা করা, উপহার দেয়া বা পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্যেও কিনে থাকতে পারেন। আবার কনজ্যুমার যিনি, তিনি পণ্য নিজে নাও কিনতে পারেন। অন্য কেউও তাকে কিনে দিতে পারে।
উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে কাস্টমারের দুইটি প্রকারভেদ করা হয়েছে। ১/ ট্রেড কাস্টমারঃ (Trade Customer) যিনি পণ্য কিনে সেই অবস্থায় অথবা তাতে পরিবর্তন এনে পুনরায় বিক্রয় করে থাকেন। ২/ ফাইনাল কাস্টমারঃ (Final Customer) যিনি নিজের ব্যাবহারের জন্য পণ্য কিনে থাকেন। তিনি একইসাথে কাস্টমার এবং কনজ্যুমার।
এছাড়াও ব্যাবসায়িক পারপাসে কাস্টমারের বিভাজন করার জন্য RFM Classification ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। বব স্টোনের আবিস্কৃত এই ক্লাসিফিকেশনকে বিহেবিয়রাল ক্লাসিফিকেশনও বলা হয়ে থাকে। R (Recency)– শেষ কবে একজন ক্লায়েন্ট আপনার থেকে পন্য নিয়েছে তার উপর ভিত্তি করে এই ক্লাসিফিকেশন করা হয়ে থাকে।
F (Frequency) – কত অল্প সময়ের ব্যাবধানে একজন কাস্টমার পন্য ক্রয় করে তার উপর ভিত্তি করে এই ক্লাসিফিকেশন করা হয়। নিয়মিত এবং অনিয়মিত। M (Money) – কোন কাস্টমার বেশী টাকা ব্যয় করে তার হিসেব করে ডিভাইড করা হয়।
এছাড়াও আরো অনেক ভাবে কাস্টমারের ক্লাসিফিকেশন করা হয়: লয়েল কাস্টমার, ডিসকাউন্ট কাস্টমার, ইমপালসিভ কাস্টমার, নিড বেসড কাস্টমার, ওয়ান্ডারিং কাস্টমার। এবার আসি কনজ্যুমার নিয়ে। এখানে শুধু সেসকল কনজ্যুমার নিয়ে কথা বলা হয়েছে, যারা একসাথে কাস্টমার এবং কনজ্যুমার। কনজ্যুমারের প্রকারভেদ প্রায় এক ডজন!
আরগুমেন্টেটিভ কনজ্যুমার হচ্ছে তারা যে সকল ক্লায়েন্ট প্রচুর দরদাম এবং পন্যের গুনগত মান নিয়ে সে অনেক ভালো জানে এরকম একটি উপস্থাপন করবে। এদেরকে কিঞ্চিত ট্রিকি ওয়েতে হ্যান্ডেল করতে হয়। প্রথমত তাকে যথেস্ট পরিমানে বলার সুযোগ দিতে হয়। যথাসম্ভব বিতর্ক এড়িয়ে যেতে হয়। “এজ লাইক এজ,কাস্টমার ইজ অলওয়েজ রাইট”
স্কাই টাইপ কাস্টমার হচ্ছে নার্ভাস এবং পন্য ক্রয়ের ব্যাপারে অনভিজ্ঞ। পন্যের মান নিয়ে কনফিউজড থাকে, এবং কিছুটা লাজুক সভাবের হওয়াতে এরা ইচ্ছামত প্রশ্নও করে না। চট করে আস্থা তৈরি না হলে এরা না কিনেই ব্যাক করে। এই ক্ষেত্রে বিক্রেতার করনিয় হল, তাদেরকে প্রথম থেকেই গুরুত্ব দেয়া, পন্যের বিষয়ে সাজেশন দেয়া। আমার পন্য ভালো হবে এই টাইপ না বলে, আপনার জন্য এই পন্যটি ভালো হবে, এভাবে প্রেজেন্ট করা।
সাইলেন্ট কনজ্যুমাররা কথাবার্তা বলতে চায় না। এমনকি তাদেরকে আস্ক করলেও সবসময় উত্তর দেয় না। এরা স্কাই টাইপ কনজ্যুমার থেকেও এক ডিগ্রী উপরে। এদের আরো কৌশলে হ্যান্ডেল করতে হয়।
বাচাল কনজ্যুমাররা হচ্ছে সাইলেন্ট কনজ্যুমার এর ঠিক বিপরীত। এরা প্রয়োজন থেকেও দুই লাইন বেশী কথা বলবে। এসের ডিল করা তুলনামূলক সহজ। কারন, তাকে কিভাবে প্রেজেন্ট করলে সে নেবে, সেটা সে তার কথায়ই প্রকাশ করে দেয়।
সন্দেহপ্রবন কনজ্যুমার রা বেশ কমপ্লেক্স। তারা সবসময় এরকম একটা মানসিকতা বহন করে যে, সকল ব্যাবসায়ী তাকে ঠকানোর জন্য বসে আছে। এরা প্রচুর উল্টাপালটা প্রশ্ন করে যে, অনেক সময় সেলস পারসনের রাগ ধরে রাখতেই কস্ট হয়। এদের এটিচিউড থাকে যে, সে পরিক্ষক আর বিক্রেতা পরিক্ষার্থী। এমনকি এদের ফিক্সড প্রাইসের দোকানেও দরদাম করতে দেখা যায়। এদের হ্যান্ডেল করতে গেলে, পন্যের মানের ব্যাপারে সুক্ষ ব্রিফিং, প্রমানসরুপ কোন ডেমো ইত্যাদি প্রদান করা যেতে পারে।
ফ্রেন্ডলি টাইপ কাস্টমার রা বেশ জেন্টেলম্যান। এরা খুব একটা বারগেইন করে না। পন্যের মানের ব্যাপারেও বিক্রেতার উপর আস্থা রাখে। আগের কোন মন্দ অভিজ্ঞতা থাকলে সেটিও শেয়ার করে এবং আশা করে যে, এভার ভালো সেবাটি পাবে।
হেজিটেন্ট কনজ্যুমার রা সব সময় সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। ছোটবেলা থেকে যারা বাবা মায়ের পছন্দে সব কেনাকাটা করে এসেছে, তাদেরকে এই টাইপের মধ্যে সহজেই পাওয়া যায়। এদের হ্যান্ডেল করতে গেলে পন্যের অনেক ধরনের ভেরিয়েশন না দেখিয়ে একটিতে ফোকাস করতে হবে।
ইমপেশেন্ট বা অধৈর্য কাস্টমাররা খুবই এটেনশান সিকার হয়। তারা চায় যে কোন একটি শপে প্রবেশ করা মাত্রই সেলস পারসোন আগ্রহ নিয়ে তার কাছে আসবে এবং তার কি প্রয়োজন জানতে চাইবে। এইটুকু এটেনশন না পেলে তারা অনেক সময় ক্রয় না করেই দোকান ত্যাগ করে। যদিও অনেকক্ষেত্রে দোকানদাররা ভাবে যে, ধুর! একজন গেলে কি হবে! কিন্তু অধিকাংশক্ষেত্রে এরাই বিগ এমাউন্টের কাস্টমার হয় এবং খুব বেশী দরদামও করে না।
সার্কাস্টিক কাস্টমার হচ্ছে সব কিছু নিয়ে মজা করা লোকজন। এরা অনেক সময়ই সেলসপারসোন কে নিয়ে অথবা পন্য নিয়ে ফাজলামো করে থাকে। মোস্ট ব্যাটার ওয়ে হচ্ছে, তাদের ফাজলামোগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে স্রেফ ইগনোর করা।
পম্পাস টাইপ কাস্টমার নিজেকে নিয়ে সব সবসময় গর্বিত। তার অর্থ সম্পদ, ক্লাস, জ্ঞান, ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড, সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি নিয়ে সবসময়ই খুব হ্যাপি এরা। এদেরকে হাই প্রাইস এবং বেস্ট কোয়ালিটি প্রোডাক্ট প্রেজেন্ট করতে হয়। ডিসকাউন্ট, বোনাস এসব কখনোই না।
রুড টাইপ কাস্টমার সবসময় সেলস পারসোনদের সাথে উদ্ধত আচরণ করে। এদের সাথে তর্কে যাওয়া এবং ম্যানার শেখাতে যাওয়া উচিৎ নয়। তার আচরণ ইগনোর করে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস ব্রিফিং এ গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রতিবন্ধী কাস্টমার, এরা সবসময় স্পেশাল কেয়ার ডিজার্ভ করে। এদের সাথে আচরনে কখনোই আর দশ জন কনজ্যুমার থেকে চেঞ্জ আনা যাবে না।
ইম্পালসিভ টাইপ কনজ্যুমার হচ্ছে এক্সিকিউটিভ টাইপ পারসোন। এরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়, পন্যের মান কিংবা প্রাইস নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না এবং সহজেই বিরক্ত হয়ে যায়। এদের ক্ষেত্রে প্রোডাক্টের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা অনুচিত, কারণ তার সেটা শোনার আগ্রহ/ সময় কোনটিই নেই।
Group Shopper Customer, এরা দলবল নিয়ে কেনাকাটা করতে যায়। এরা হতে পারে স্টুডেন্ট (ক্লাসমেট), ফ্রেন্ড কিংবা কলিগ। এদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল কিনলে সবাই কিনবে না হলে কেউ কিনবে না। এদের ক্ষেত্রে এটিচিউডে বুঝে নিতে হবে দলনেতা কে। সব দলেই একজন থাকে, যে বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে। সবার আগে তাকে এটেনশন দিতে হবে এবং কনভিন্স করতে হবে।
ক্লায়েন্টঃ কাস্টমার এবং কনজ্যুমার নিয়ে অনেকটা জানলাম। এবার জেনে নিই ক্লায়েন্ট কি? অনেক বইপত্রেই কাস্টমার এর সমার্থক শব্দ হিসেবে ক্লায়েন্ট ব্যাবহার করা হয়ে থাকে এবং অনেকেই মনে করে কাস্টমার এবং ক্লায়েন্ট সেইম।
মুলত এদের মধ্যে সুক্ষ পার্থক্য রয়েছে। কাস্টমার হচ্ছে যে সরাসরি আপনার পন্য বা সেবাটি ক্রয় করে। আর ক্লায়েন্ট হচ্ছে যে পেশাগত সেবা ক্রয় করে। স্পেশালি পরামর্শ অথবা সমাধান। ডাক্তার, উকিল এদের কাস্টমার হয় না, ক্লায়েন্ট হয়।
‼শেষ কথা এটাই বলবো, একজন ব্যাবসায়ী তখনি সফল যখন সে কাস্টমারকে ক্লায়েন্টে রুপান্তর করতে পারে। পন্য কিনতে এসে সে যেন আপনার প্রফেশনালিজমে মুগ্ধ হয়ে পরের বার আপনার থেকে সাজেশন নেয় যে, কোন পন্যটি তার জন্য ভালো। তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।