কর্মজীবনের শুরুতে একটা সময় দোটানা থেকেই যায়। এই চাকরিটা করে ‘জীবনে কি কিছু করতে পারব?’ এই পেশা কি ‘জব স্যাটিসফেকশন’ দেবে? এসব প্রশ্ন থাকে না যদি পেশার সঙ্গে নেশাটাও এক হতো, তাহলে পুরোপুরি সুখী চাকরিজীবন হতো। নিজের উৎসাহ, আবেগ, ভালো লাগা এসব মিলিয়ে এমন একটি কাজের সন্ধান পেলে খারাপ হতো না।
অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় মার্কেটিংয়ে আছেন, কিন্তু ক্রিয়েটিভ ফুলফিলমেন্ট নেই। আবার কেউ নিজেকে লিডারশিপ রোলে দেখতে চান; কিন্তু সুযোগ নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, দীর্ঘদিনের অভ্যাস ত্যাগ করে নতুন করে চিন্তা করাটা ধাতে নেই। ‘চলছে চলুক’ ধরনের মানসিকতা বারবার বাধা দিচ্ছে নতুন কিছু করার ভাবনা। যতই হোক, এই মন্দার বাজারে সচ্ছল ক্যারিয়ার ছেড়ে হঠাৎ নেশা আর পেশাকে এক করতে উঠেপড়ে লাগলে হবে কেন। তার চেয়ে কষ্টমষ্ট করে মাস পার করে বেতন নিয়েই কোনোরকম সন্তুষ্ট থাকা যাক।
তবে যুগ বদলেছে। বদলেছে ক্যারিয়ারের গতিবিধিও। অনেকেই ভালো লাগার জায়গাটাকে গুরুত্ব দিয়ে পেশা বদলাচ্ছেন। বর্তমান চাকরিজীবন নিয়ে যদি সন্দিহানে থাকেন, তাহলে অন্যরকম ভেবে দেখুন। এ রকম কিছু পরিস্থিতি হতে পারে, যখন ক্যারিয়ারে দিক বদলানোর কথা ভাবাই যায়।
অনেকেই জেনেবুঝে ক্যারিয়ার নির্বাচন করে না। প্রায় দেখা যায় সেশনজটে তিন-চার বছর গচ্চা দিয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ করেই জীবিকার তাগিদে ঢুকে পড়ে কোনো না কোনো চাকরিতে। আবার কেউ কোনো নির্দিষ্ট দক্ষতার জন্য চাকরি জোটে। কিন্তু সেই কর্মক্ষেত্রকে আগামী ২৫টা বছর দিতে মোটেও রাজি নই। সচেতনভাবে সেই ক্যারিয়ার না অনুসরণ করে থাকলে, অন্য কিছু ভাবা বিফলে যাবে না।
একবার পেশাগত দক্ষতা ভেবে নিলে, চাকরির বাজারে নিজের অবস্থান বিচার করা যায়। কীরকম পেশায় নিজেকে খাপ খাওয়ানো যাবে তা ভাবার দরকার। নিজের রুচির সঙ্গে মানানসই এমন কাজ করতে হবে যা নিজেকে উজ্জীবিত করবে। ধরুন আপনি ভ্রমণপিপাসু, নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে পছন্দ করেন। তাহলে পর্যটন নিয়ে আগ্রহী হতে পারেন। ট্যুরিজম কোম্পানিতে কাজ করতে হয়তো আপনার মন্দ লাগবে না।
আবার ক্রিয়েটিভ আইডিয়া মাথায় গিজগিজ করলে ঢুকতে পারেন অ্যাড ফার্মে। একটা সময় আপনার কর্মক্ষেত্র ছিল কর্মপ্রার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় সেক্টর। কিন্তু মন্দা অর্থনীতির প্রভাবে এখন উল্টো ছবি। এই সময় দ্রুত ট্র্যাক চেঞ্জ করা যেতে পারে। অন্য পেশায় কাজ করতে গেলে যে স্কিলস প্রয়োজন তা আপনার থাকলে দ্রুত ভেবে দেখুন।
কোন ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার মতো পেশাদারের চাহিদা বাড়ছে তার নিয়মিত খোঁজ রাখুন। এমন কিছু প্রফেশনাল ট্রেনিং করে রাখুন যা থাকলে লম্বা রেসে নিজেকে নিয়েই ধরতে পারবেন বাজি। নিজের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য সেই মতো মাস্টারপ্ল্যান করে রাখুন। কর্মক্ষেত্রে এখন প্রতিনিয়ত বিবর্তন চলছে। তৈরি হচ্ছে নিত্যনতুন কাজের সুযোগ। ডেটা সায়েন্টিস্ট, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট, সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটার, সোশ্যাল অ্যাড মেকিং, অল্টারনেট পাওয়ার, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি। বিবর্তনের যুগে কোনো এক পেশার অংশীদার হতে পারেন।
ঝালিয়ে নিন নিজের স্কিলস। টেকনিক্যাল জ্ঞান আহরণ কিংবা কায়েন্ট ম্যানেজমেন্ট। নানা স্কিলসেট দিতে পারে নতুনের সন্ধান। আর সেই সন্ধান পৌঁছে দিতে পারে আপনাকে লক্ষ্যে। তাই এক কাজ করতে করতে কান্ত হয়ে পড়লে পেশা পরিবর্তনের কথা ভাবুন। এভাবেই হয়তো ভালো লাগা কাজের সন্ধান পেয়ে যাবেন।
তথ্যসূত্র: মানবকন্ঠ ডটকম।