সফল হতে মানুষ পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছোটাছুটি করছে। একটু সুখের আশায় পরিবার-পরিজন ছেড়ে প্রতিনিয়ত পাড়ি জমাচ্ছে দূর প্রবাসে। কুমিল্লার কৃতি সন্তান মো. হোসেন তেমনই একজন সফল প্রবাসী। পরিশ্রমের ওপর ভর করে আজ তার এ পরিবর্তন। ওমানে উটের ঘাস বেচেই হোসেন নিজের ভাগ্য গড়েছেন।
ভাগ্য বদলের আশায় ২৬ বছর আগে পাড়ি জমান মরুময় দেশ ওমানের সালালাতে। অক্লান্ত পরিশ্রম আর সততা দিয়ে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কোটিপতি সফল ব্যবসায়ী হিসেবে। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সালালাতে শুরুতেই সাধারণ শ্রমিক হিসেবেই তার যাত্রা। তিন বছর হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর নিজ উদ্যোগে ওমানি আবায়ার ছোট একটি দোকান দিয়ে শুরু করেন নিজের ব্যবসা। এরপর থেকে তাকে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি।
বর্তমানে সালালার মেইন বিজনেস এরিয়া হাফা ও নিউ সালালাহতে রয়েছে ১৮টি দোকান। এছাড়াও ইতোমধ্যে তিনি সালালাহ আল কুফ এলাকায় নির্মাণ করছেন ৩৫০টি দোকান। স্থানটিতে বাংলাদেশিদের দ্বিতীয় বৃহত্তম মার্কেট। এছাড়াও তিনি শখের বশে একটি এগ্রিকালচার প্রোজেক্ট করেছেন। মরুদ্যানে সবুজের বিপ্লব ঘটিয়েছেন এ বাংলাদেশি হোসেন।
সালালাহ থেকে প্রায় ২০০ কিমি দূরে ছেচর নামক মরুভূমিতে ৬ কিমি এরিয়া নিয়ে বিশাল এক এগ্রো প্রোজেক্ট রয়েছে তার। উটের ঘাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন সবজি উৎপাদন করে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন সালালাতে। ঘাস চাষাবাদ করে বছরে প্রায় ৩ কোটি টাকা বিক্রি করছেন। স্বল্প সময়ে দ্রুত ফলনশীল এই ঘাস মাত্র ৩৫ দিনেই বিক্রির উপযোগী হয়ে যায়।
জানা গেছে, উটের এ ঘাস বছরে ৯ বার ফলন হয়। একবার লাগানোর পর সাধারণত ৮/৯ বছর আর ঘাস লাগানোর দরকার হয় না। যতবেশি কাটা হয় ততো ফলন বেশি হয়। এক বান্ডেল ঘাস বাংলাদেশি টাকায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়, প্রতি ৩৫ দিনে প্রায় ১৫,০০০ বান্ডেল ঘাস উৎপাদন হয়, সবমিলে প্রতি ৩৫ দিনে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩০ লাখ টাকার ঘাস বিক্রি হচ্ছে।
তার এই কোম্পানিতে ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানিসহ সবমিলে প্রায় ১৫০ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন, এর ভেতর বেশিরভাগই বাংলাদেশি শ্রমিক। দুই ছেলে দুই মেয়ে নিয়ে বেশ সুখে শান্তিতেই বসবাস করছেন ওমানে, বড় মেয়ে ইন্ডিয়ান স্কুলে ক্লাস নাইনে এবং বড় ছেলে ইন্ডিয়ান স্কুলে ক্লাস সিক্সে পড়ছে।
একজন বাংলাদেশি হয়েও ছেলে-মেয়েদের কেন ইন্ডিয়ান স্কুলে পড়াচ্ছেন এমন প্রশ্ন করলে হোসেন বলেন, সালালাহতে পরিবার নিয়ে প্রায় ৩০০ বাংলাদেশি বসবাস করছে, অথচ এখানে বাংলাদেশ স্কুল নেই, তিনি দূতাবাসের কাছে একটি স্কুলের জন্য বিনীত অনুরোধ করেন। তথ্যসূত্র: এগ্রোবিজ।