করোনাকালে যেখানে ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দাভাব, সেখানে ময়মনসিংহে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন নারী উদ্যোক্তা। চাকরির অপেক্ষায় না থেকে, ব্যবসায় নেমেছেন তারা। এসব উদ্যোক্তারা অনলাইনে বিক্রি করছেন ঘরে তৈরি নানান খাবার ও পণ্য। চলমান সময়ে বাড়ছে বেচা-বিক্রি। তাদের দেখে উৎসাহিত হয়ে অনলাইন ব্যবসায় আসছেন নতুন নতুন নারী উদ্যোক্তা।
মাস ছয়েক আগে নিজের বাড়ির সামনের গাছের আমের আচার দিয়ে অনলাইন কেন্দ্রিক ব্যবসায় আসেন ময়মনসিংহ শহরের অনি ওয়াহিদ। অনি’স কিচেন নামে ফেসবুকে পেজ খুলে শুরু হয় বেচাবিক্রি। শুরুতে ৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন তিনি। এরপর পেছনে ফিরে তাকাতে হচ্ছে না তার। তার ফেসবুক পেজে যোগ হচ্ছে নিত্য-নতুন পণ্য।
তিনি জানান, অনলাইনে ব্যবসা নারীদের জন্য সহজ ও নিরাপদ। আর করোনাকালীন সময়ে ঘরে বসেই এসব করা যাচ্ছে। তিনি বলছেন, এই খাতে অনেকে আগ্রহী হচ্ছে। তাদের প্রশিক্ষণ ও পুঁজির ব্যবস্থা হলে উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি হবে অনেকের কর্মসংস্থান। ময়মনসিংহ নগরীর কাচিঝুলি এলাকার তরুণী জান্নাতুল নাঈম রাত্রি।
আনন্দ মোহন কলেজে মাস্টার্সে পড়াশোনা করছেন তিনি। পুতি দিয়ে তৈরি করতে পারেন সুন্দর সুন্দর মালা-গহনা। ১১৭ টাকা বিনিয়োগে একটি পুতির মালা দিয়ে অনলাইন ব্যবসায় নাম লিখিয়ে গত সাত মাসে তার আয় ৫০ হাজার টাকা। নিজের চুলের যত্ন নিতে হাতে তৈরি তেল ব্যবহার করেন ইন্দিরা পাড়ার নাজনীন আরা মেঘলা।
সম্প্রতি সেই তেল দিয়েই শুরু করেন অনলাইন ব্যবসা। ম্যাজিক হেয়ারওয়েল নামে এই তেল তৈরি করে তার অনলাইন ব্যবসা ২৫০ টাকা দিয়ে শুরু করলেও গত ৯ মাসে তিনি আয় করেছেন ৫ লাখ টাকা। কাশর এলাকার গৃহিনী মারিয়া রাদিয়াতুল রহমান। বিয়ের ৫ বছর পর অনুভব করেন নিজের কিছু একটা করা দরকার। শ্বশুরবাড়িতে তার সুনাম ভালো রাঁধুনীর।
তাই ঠিক করলেন রান্নাবান্নার গুণকে কাজে লাগানো যায় কিভাবে। ছয়মাস আগে অনলাইনে ফ্রেস কিচেন নামে একটি পেজ খুলে শুরু করে দেন তিনি। গরুর মাংসের তেহারী দিয়ে যাত্রা শুরু তার। বর্তমানে গড়ে দিনে পাঁচ হাজার টাকার তেহেরি বিক্রি করেন তিনি। সঙ্গে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের খাবারের ওয়ার্ডার নেন তিনি।
দ্রুত এক্সপ্রেস নামে স্থানীয় একটি ডেলিভারি সার্ভিস আছে তারা ফ্রেস কিচেনের খাবার পৌঁছানোর কার করছে। দ্রুত এক্সপ্রেসের মালিক মুফতি মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ জানান, স্থানীয় একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন তিনি। পাশাপাশি অনলাইনে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ময়মনসিংহে মারিয়া রাদিয়াতুল রহমানের মতো ২৫ জন নারী উদ্যোক্তাদের পণ্যের ডেলিভারির কাজ করছেন তিনি।
আটজন যুবক কাজ করে যারা সাইকেলে অনলাইনে ওয়ার্ডার করা পণ্য পৌছে দিচ্ছেন গ্রাহকদের কাছে। এই আটজনকে ৩৬ হাজার টাকা বেতন দেন তিনি। করোনাকালে ময়মনসিংহে বাড়ছে এমন অনলাইন কেন্দ্রিক নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা। নিজের গুণকে ব্যবসার কাজে রুপান্তরিত করছেন তারা। তাদেরই একজন ফারজানা তাসমিম।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স পাশ করে গৃহিনী হিসেবেই চলছিলো জীবন। সেলাই ও তুলির কাজ ভালো জানেন। এক মাস আগে সভ্যতার ছোঁয়া কালেকশন নামে একটি পেজ খুলে শুরু করেন অনলাইন বিজনেস। এক এক করে বিক্রি বাড়তে থাকে তার।
তিনি বলেন, স্বল্প সুদে বা বিনা সুদে ঋণ পাওয়া গেলে অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হবে। নিত্য পণ্য অনলাইনে বেচা-বিক্রি হচ্ছে বেশি। তাই চাহিদা রয়েছে, এখন প্রয়োজন উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা। লা লেডিসের স্বত্বাধিকারী ফাতেমা ইয়াসমিন বলেন, অনেকে চিন্তা করছেন অনলাইন ব্যবসা করবেন। তবে তারা শংকায় ভুগছেন। তাদের বলবো বেশি পুঁজি নিয়ে নামার দরকার নেই। অল্পতেই করেন কিন্তু শুরু করে দিন। পরিশ্রম করলে এখানে সফলতা আসবেই।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব উদ্যোক্তদের জন্য কি করা হচ্ছে এমন প্রশ্ন ছিল ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমানের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসায় নারী উদ্যোক্তাদের সহযোগীতায় কাজ করছেন তারা। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতে তাদের কাজে সহায়তা করার পাশাপাশি যেসব নারী উদ্যোক্তারা মফস্বলে থাকেন সেখানকার উপজেলা নির্বাহী কর্মর্কতার সঙ্গে সংযুক্ত করে দিচ্ছি। যাতে তারা তাদের সমস্যাগুলো সহজে সমাধান করতে পারে। তথ্যসূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ।