আমাদের দেশে নারীরা এমন কিছু সমস্যা মোকাবিলা করেন যেটা একই সমাজের একজন পুরুষকে মোকাবিলা করতে হয় না । তবুও অনেক নারী আছেন যারা জীবন সংগ্রামে লড়াই করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তেমনি একজন নারী উদ্যোক্তার গল্প এটি ।
সুরাইয়া পারভীন শিমুল। জন্মস্থান ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা কোটপাড়ায়। সেখানেই বেড়ে ওঠা।
লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করছেন একটি বেসরকারি কলেজে। বিবাহ বন্ধনেও আবদ্ধ হয়েছেন। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়েই তার সংসার। স্বামীও একজন ব্যবসায়ী। তবে শিক্ষকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি সুরাইয়া, হয়েছেন উদ্যোক্তা। নিজে সফল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যকেও সফল হওয়ার জন্য করে যাচ্ছেন সহযোগিতা ।
কাপড়ের নানান ডিজাইনের কাজ যেমন- সালোয়ার কামিজ, শাড়ি, ওড়না, কুশন কভার, বিছানার চাদরসহ সকল ধরনের কাপড়ের ডিজাইনের কাজ করছেন তিনি। নিজে কাপড় কিনে সেগুলোতে নানারকম ডিজাইন করতে দিচ্ছেন তার অধীনে কর্মরত নারী কারীগরদের কাছে। তারা নিখুঁতভাবে সুই-সুতা দিয়ে বিভিন্ন ডিজাইন তৈরি করছেন। নারীরা ডিজাইন শেষে এসব কাপড় আবার জমা দিচ্ছেন। বিনিময়ে নিচ্ছেন পারিশ্রমিক।
এসব তৈরি কাপড় অর্ডারের মাধ্যমে ক্রয় করছেন ক্রেতারা। সুরাইয়া শিমুল এসব পণ্য বিক্রির জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ‘শৈলকুপা নারী অঙ্গ’ নামে একটি পেইজও খুলেছেন। সেখানে তার তৈরি কাপড়ের রিভিও দিচ্ছেন। সেটা দেখে কারও পছন্দ হলেই অর্ডার করে পণ্যটি নিচ্ছেন ক্রেতারা। মান ভালো হওয়ায় বেশ দ্রুতগতিতেই তার ব্যবসা এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, বর্তমানে কর্মী হিসেবে তার অধীনে ছয়জন মেয়ে কাজ করছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি এই কাজ করে তারা নিজের খরচ বহনসহ ধরছে সংসারের হাল। কথা হয় কর্মী হিলারী খাতুনের সাথে। তিনি জানান, বর্তমানে ঝিনাইদহ কেসি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে লেখাপড়া করছেন তিনি। লেখাপড়ার পাশাপাশি যেটুকু সময় পান সে সময় অপচয় না করে সুঁই সুতা দিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের কাজ করেন । মাস শেষে যা আয় হয় তা নিজের ও সংসারের কাজে ব্যয় করেন। তবে প্রথমে তার এই কাজ পরিবার থেকে না মানলেও বর্তমানে সবাই খুশি ।
তিনি আরও জানান, তাদের এই তৈরি কাপড় বিক্রি করার তেমন জায়গা না থাকায় অনেক সময় সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তৈরি কাপড়ের মান ভালো হলেও অনেক সময় ক্রেতাসংকটে ভুগতে হয় । বিশেষ কোনো সুবিধা পেলে তাদের এই কাজ আরও এগিতে যাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। অন্যদিকে হিলারী খাতুনের ছোটবোন নিলা খাতুনও বড়বোনের কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে শুরু করেছে সেলাইয়ের কাজ। বেশ ভালো আয়ও করছে।
নিলা খাতুন বলেন, ‘বড়বোনের কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমিও শুরু করেছি। পড়ালেখার পাশাপাশি যেটুকু সময় পাই এই কাজ করি। এইকাজে স্বাধীনতা আছে তাই ভালো লাগে। আয়ও ভালো। তাই বসে না থেকে অবসর সময়ে এই কাজ করি। নিজের খরচসহ পরিবারের আর্থিক চাহিদা পূরণ করতে পারি। তাতে পরিবারের মানুষও খুশি।
সুরাইয়া শিমুল বলেন, ‘২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল কলেজে একটা মেয়ে মাত্র ১৫০ টাকার জন্য আত্মহত্যা করে। বিষয়টি ভেবে অনেক খারাপ লাগে যে মাত্র অল্প কিছু টাকার জন্য একটা জীবন চলে গেল। সেই থেকেই ভেবেছি নারীদের নিযে কিছু করবো। সেই লক্ষ্য থেকেই আজ উদ্যোক্তা হয়েছি। নিজে উপার্জন করছি সাথে অন্যকেও সুযোগ করে দিচ্ছি। চেষ্টা করছি ভালো কিছু করার । এ থেকে যা আয় হচ্ছে সেটা দিয়েই বেশ ভালোভাবেই চলছি। কলেজের দেওয়া বেতনের টাকা খরচ করা লাগছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের তৈরি কাপড় সেল দেওয়ার মতো তেমন সুযোগ না থাকায় অনেক সময় সমস্যায় পড়তে হয়। কারিগরদের টাকা দিতে হিমশিম খেতে হয় । পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমাদের এই কার্যক্রম আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো। সঙ্গে নারীদের অর্থ উপার্জনের পথ বড় পরিসরে খুলে দিতে পারবো।’ তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।