একসময় পাটখড়ি শুধু গরিবের জ্বালানি আর ঘরের বেড়া দেওয়ার কাজে লাগত। সেই পাটখড়ি এবার নিয়ে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা। দেশের পাটখড়ি থেকে তৈরি কার্বন পাউডার রপ্তানি হচ্ছে চীনে। ইতোমধ্যে সারা দেশে পাটখড়ি থেকে কার্বন তৈরির বেশ কয়েকটি কারখানা গড়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। যার একটি কারখানা গড়ে উঠেছে পাবনার বেড়ায়।
বেড়া উপজেলার কৈটোলা ইউনিয়নের মানিকনগর গ্রামে গড়ে ওঠা কিউলিন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের উদ্যোক্তারা জানান, গত ছয় মাস ধরে এখানে বিপুল পরিমাণ কার্বন বা চারকোল তৈরি হয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। তারা আরও জানান, পাটখড়ির কার্বন দেশের ব্যবসাবাণিজ্যে নতুন দিগন্তের সৃষ্টি করেছে। পাটখড়ি থেকে উৎপাদিত কার্বন পাউডার বা চারকোল রপ্তানি করা হচ্ছে চীনে। দিন দিন বাড়ছে এ পণ্যের রপ্তানি। জাতীয় অর্থনীতিতে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সেই সঙ্গে বাড়ছে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ। বর্তমানে এ কারখানায় ৬০ শ্রমিক কাজ করছেন। আবার পাটখড়ির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকের পাট চাষে আগ্রহও বাড়ছে।
চার বছর আগে পাটখড়িকে কার্বন বানিয়ে রপ্তানির পথ দেখান ‘ওয়াং ফেই’ নামের এক চীনা নাগরিক। তার দেখানো পথে দেশে বর্তমানে কার্বন তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে ২৫টি। এর মধ্যে অন্যতম পাবনার বেড়ায় প্রতিষ্ঠিত কিউলিন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। কারখানার নির্বাহী পরিচালক জুলিয়ান জানান, এই কার্বন উৎপাদনে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার না করায় কারখানা রয়েছে পরিবেশবান্ধব। বর্তমানে চীনে রপ্তানি হলেও আগামীতে অন্যান্য দেশেও রপ্তানি হওয়ার আশা রয়েছে। তিনি আরও জানান, মোবাইলের ব্যাটারি, প্রসাধনী, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ, কার্বন পেপার, কম্পিউটার ও ফটোকপির কালি, আতশবাজি, ফেসওয়াশের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার হয় পাটখড়ির কার্বন।
কার্বন তৈরি সম্পর্কে জুলিয়ান জানান, এজেন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকা থেকে পাটখড়ি কিনে আনা হয়। এর পর সেগুলো বিশেষ চুল্লিতে লোড করে আগুন জ্বালানো হয়। তার পর ১০-১২ ঘণ্টা জ্বালানোর পর চুল্লিটির মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যাতে কোনোভাবে অক্সিজেন প্রবেশ করতে না পারে। এভাবে চার দিন রাখার পর সেখান থেকে বের করে ক্যাশিং করে কার্বন প্যাক করা হয়।
একটি কারখানায় দৈনিক ৫০০ মণ পাটকাঠির চাহিদা রয়েছে। মৌসুমে প্রতি মণ পাটকাঠি কিনতে হয় ১৮০-২০০ টাকা দরে। যখন মৌসুম থাকে না, তখন দাম পড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। জুন-জুলাই দুই মাস ছাড়া সারা বছর মিল চালু থাকে। দেশে বর্ষাকালে ও চীনে গরমে দুই মাস কারখানা বন্ধ থাকে। একটি কারখানায় মাসে ১৫০-২০০ মেট্রিকটন ছাই উৎপাদন হয়। প্রতিটন ছাই বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা বিক্রি হয়।
বিশেষ চুল্লির মাধ্যমে পাটকাঠি পুড়িয়ে ছাই করা হচ্ছে। পোড়ানোর পর প্রযুক্তির মাধ্যমে কার্বনগুলোকেই মূলত ধরে রেখে প্যাকেট করা হচ্ছে।এ কারখানায় বিদ্যুৎ বেশি লাগে না, কারখানা স্থাপনে বিনিয়োগের পরিমাণও খুব বেশি নয়। তা ছাড়া পাট প্রধান এলাকায় কাঁচামাল পাওয়া যায় সহজেই।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, পাটখড়ির কার্বন বা চারকোল রপ্তানিতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে ৫৪ কোটি টাকা রপ্তানি আয় হয়েছে। তবে বাংলাদেশ চারকোল উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (প্রস্তাবিত) সূত্রমতে, বাস্তবে এ খাত থেকে বর্তমানে বৈদেশিক মূদ্রা আয় হচ্ছে ১৫০ কোটি টাকা। তাদের ধারণা, এ খাত থেকে বছরে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আয় হওয়া সম্ভব। পাট অধিদপ্তরের সূত্রমতে, দেশে বছরে পাটখড়ি উৎপাদন হয় ৩০ লাখ টন। এর ৫০ শতাংশকেও যদি কার্বন করা যায়, তবে দেশে বছরে উৎপাদন দাঁড়াবে ২ লাখ ৫০ হাজার টন।
তথ্যসূত্র: আমাদের সময় ডটকম।