একটি ছোট আকারের ব্যবসা প্রথমে ধারণা হিসেবে শুরু হয়, পরবর্তিতে ধারণাটিকে কার্যে পরিণত করতে হয়। অনেকেই ধারণাটিকে বাস্তবে পরিণত করতে গিয়ে ঝুঁকি ভেবে হতাশায় ভোগেন এবং এটাকে বোঝা মনে করেন। যে কোন বড় লক্ষ্যের মত এটাকে কতগুলো ছোট ছোট ধাপে ভাগ করলে ব্যবসা শুরু করার প্রয়োজনীয় কাজগুলো সহজে আয়ত্তে আনা সম্ভব। ছোট আকারে ব্যবসা শুরু করার সহজ ধাপগুলো এখানে আলোচিত হল।
১. ব্যবসার ধারণাটি লেখা:
ছোট আকারের ব্যবসার চাবিকাঠি হল বিষয়গুলো সহজ এবং কম খরচের মধ্যে রাখা। ব্যয় শুধু টাকা পয়সার ক্ষেত্রে নয়, সময়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অনেকে তার ছোট আকারের ব্যবসায়িক ধারণাটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী ব্যবসায়িক পরিকল্পনার ফাঁদে আটকে ফেলেন। আমি সব সময় এক থেকে দুই পাতার একটি সহজ ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করার পরামর্শ দিয়ে থাকি যার মধ্যে মৌলিক কৌশলসহ ব্যবসার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও ছক সন্নিবেশিত থাকে। যাকে ব্যবসায়িক ভাষায় বিজনেজ প্ল্যান বলে।
২. আইনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ:
ব্যবসা শুরু করার জন্য নির্ধারিত ফি প্রদান সাপেক্ষে আপনাকে শহর অথবা পৌর কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে হবে। একক মালিকানায় ব্যবসা শুরু করা ভাল কারণ এতে আপনার আইনগত বৈধতার সহায়ক তথ্যাদি এবং মাশুল দুইই কম লাগবে। আপনি এটাকে ব্যবসা হিসিবে নথিভুক্ত করতে পারেন যখন দেখবেন যে আপনার উদ্যোগটি প্রথম তিন অথবা ছয় মাসের মধ্যে লাভজনক এবং টেকসই হয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি কোন অভিজ্ঞ ব্যক্তির নিকট থেকে পরামর্শ নিতে পারেন।
৩. বাজেট নির্ধারণ করুন:
আমি খুব গুরুত্বের সাথে পরামর্শ দিব বাজেট যতদূর সম্ভব ছোট রাখতে। ব্যবসা শুরু করতে যতটুকু আপনি খরচ করতে সক্ষম হবেন ততটুকু আপনাকে বাজেট নির্ধারণ করতে হবে। ব্যবসায়ে আপনি যদি নিজে অর্থের যোগানদাতা হন তাহলে একটা সময় নির্ধারণ করুন যাতে বাজেট শেষ ও লাভ অর্জনের সময়ের সমম্বয় হয়। আপনার ব্যবসাটি এমনভাবে শুরু করুন যাতে করে আপনি ত্রিশ থেকে নব্বই দিনের মধ্যে বিনিয়োগকৃত মূলধন থেকে লাভ বের করতে পারেন। সাধারনত ছোট ব্যবসার ক্ষেত্রে এটা সম্ভব।
৪. ব্যবসার হিসাব চালু:
আপনার পছন্দমতো কোন ব্যাংকে আপনার ব্যবসার একটি হিসাব চালু করতে হবে। আপনার ব্যবসার ধরণ যেমনই হোক না কেন, ব্যবসায়ের হিসাবটি আপনার ব্যক্তিগত হিসাব থেকে আলাদা রাখতে হবে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা তাদের ব্যবসার হিসাবটি ব্যক্তিগত হিসাব থেকে আলাদা রাখেন না, যা একটি বড় ভুল। ব্যাংক থেকে কোন ঋণ সুবিধা গ্রহণ করবেন না। শুধু হিসাবটি পরিচালিত করবেন যাতে করে ব্যবসায়ের টাকা ব্যক্তিগত টাকা থেকে আলাদা রাখা যায়।
৫. ব্যবসা শুরু করুন:
ফেসবুক, গুগলসহ অন্যান্য কম্পিউটার অ্যাপস এবং বিভিন্ন উদ্ভাবনী উপায়ে বিনাখরচে আপনি আপনার পন্যের পরিচিতি বাড়াতে পারেন। আপনি আপনার এলাকার ছোট অন্যসব ব্যবসায়িদের সঙ্গে আপনার ব্যবসার পণ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলতে পারেন এবং জেনে নিতে পারেন তাদের কোন কোন বিষয়গুলো আপনার কাজে আসতে পারে। সব শেষে এখন আপনি আপনার পণ্য স্থানীয়ভাবে বাজারজাত শুরু করতে পারেন এবং আপনার পণ্য সম্পর্কে তাদের অভিমত ও প্রত্যাশা জেনে নিতে পারেন। এভাবে আপনি আপনার কিছু পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে ছোট আকারের ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
সর্বোপরি আপনি অবশ্যই এই পাঁচটি ধাপ অনুসরণ করে অনেক টাকা রোজগার করতে না পারলেও সমস্ত অর্থ এবং সময় বিনিয়োগ করার পূর্বে আপনার ছোট ব্যবসায়ের সক্ষমতা যাচাই করতে পারবেন।
লেখক: ব্যাংকার
তথ্যসুত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন ডটকম।