জীবনের সবচেয়ে আকর্ষনীয় সময়, দুরন্ত কৈশোরে প্রত্যেকটি ছেলের স্বপ্নে দাঁপিয়ে বেড়ায় যে রাজকুমারী তার নাম “বাই সাইকেল”। আর এই বাই সাইকেলের সাথে প্রেমের কারনে যে নামটি সকল কিশোরের কাছে ডাল-ভাত হয়ে গেছে সেটি হলো ডানলোপ টায়ার। যার ফল স্বরূপ তাকে প্রথম সফল ও বানিজ্যিক নিউমেটিক টায়ার (লোহার রিং এর উপর রাবারের তৈরী বায়ুপূর্ন টায়ার) প্রস্তুতকারক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
জন বয়েড ডানলোপ। একজন ভেটেনারিয়ান। “ডানলোপ টায়ার” কোম্পানীর প্রতিষ্ঠাতা। ৫ই ফেব্রুয়ারী ১৮৪০ সালে স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহন করেন। ভেটেরিনারি সার্জন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ভেটেরিনারি মেডিসিন বিষয়ে পড়তে এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন।
ডিভিএম ডিগ্রী অর্জনের পর নিজের ক্যারিয়ার শুরু করতে ১৮৬৭ সালে তিনি স্কটল্যান্ড থেকে আয়ারল্যান্ডে চলে আসেন। সেখানে তিনি তার ভাই জেমস্ ডানলোপের সাথে মিলে “ডওনি ভেটেরিনারী ক্লিনিক” প্রতিষ্ঠা করেন। এই ক্লিনিকের মাধ্যমে তিনি ভেটেরিনারি প্যাক্টিস শুরু করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে প্রসিদ্ধ ভেটেরিনারিয়ান হিসেবে পরিচিতি পান। তৎকালীন আয়ারল্যান্ডে ভেটেরিনারিয়ানদের মাঝে তিনি অন্যতম প্রসিদ্ধ ভেটেরিনারি প্যাক্টিশনার ছিলেন।
ডক্টর, জন বয়েড ডানলোপের ১০ বছর বয়সী ছেলের স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে তাকে নিয়মিত সাইকেল চালাতে বললে, জন বয়েড ডানলোপ তার ছেলেকে নিয়মিত সাইকেল চালাতে নিয়ে যেতেন। সেখানে তিনি দেখলেন শুধু চাকা সহ যে সাইকেল এগুলো চালাতে অনেক সমস্যা হয়। কিন্তু সেই চাকার উপর যদি রাবারের আস্তরন দেয়া যায় তবে সাইকেল চালানো অনেক সহজ হয়ে যায়। এরপর তিনি এই বিষয়ে অনেক গবেষনা করেন।
অবশেষে ১৮৮৭ সালে প্রথম নিউমেটিক টায়ার প্রস্তুত করেন (যদিও আর. ডাব্লিউ. থমসনকে প্রথম আবিষ্কারক বলা হয় কিন্তু তিনি এটি বাস্তবিক ও বানিজ্যিকভাবে প্রস্তুত করতে অসফল হন)। ৭ ই ডিসেম্বর ১৮৮৮ সালে তিনি তার তৈরী নিউমেটিক টায়ারের স্বত্ত্ব লাভ করেন। ধীরে ধীরে তার সৃষ্টি টায়ার জনপ্রিয় হতে থাকে। একবার এক সাইকেল প্রতিযোগীতায় জন বয়েড ডানলোপের সৃস্টি নিউমেটিক টায়ার ব্যবহার করে এক সাইক্লিস্ট প্রথম হয়ে যায়। এরপরেই এই টায়ারের জনপ্রিয়তা গগনচুম্বী হয়ে পরে।
দীর্ঘ ২৫ বছর প্রানী চিকিৎসা করার পর ১৮৯২ সালে তিনি অবসর নেন এবং তার এক সহকর্মীর সাথে টায়ার প্রস্তুতকারক কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেন। এই মহান ভেটেরিনারিয়ান, ১৯২১ সালের ২৩ শে অক্টোবর, ৮১ বছর বয়সে আয়ারল্যান্ডে পরলোকগমন করেন।
সূত্রঃ উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেট