প্রতিটি মানুষই জীবনে সফলতা অর্জন করতে চান এবং স্বচ্ছলভাবে জীবন-যাপন করতে চান। মাসের শেষে টাকা উপার্জন করাটাই বেশীরভাগ মানুষের জীবনে প্রধান ও মূল লক্ষ্য। অনেকের কাছে টাকা উপার্জনের ব্যাপারটি প্রধান লক্ষ্য না হলেও এটা যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
টাকা উপার্জনের জন্য সকলেই ছুটে চলছে। সকলে ব্যস্ত নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে, নিজেকে আরো বেশী দক্ষ করতে, বাড়তি কিছু টাকা উপার্জনের জন্য ওভার-টাইম ডিউটি করতে। কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ আয় করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিন্তু কেন এমনটা হয়? কখনো কি ভেবেছেন এই বিষয়ে?
কীভাবে নিজের জীবনে নিজের কাজকে নিয়ে সফল হওয়া সম্ভব এবং কীভাবে একজন অর্থবান মানুষ হওয়া সম্ভব সেটাই জানিয়েছেন ভারতের অন্যতম সফল ও অর্থবান ব্যবসায়ী মুকেশ আম্বানি। এই ‘বিজনেস ম্যাগনেট’ রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের (RIL) একই সাথে চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সর্ববৃহৎ শেয়ার হোল্ডার। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ফোর্বস ম্যাগাজিন প্রকাশ করে, পৃথিবীর ১৮তম ধনী মানুষ হলেন মুকেশ আম্বানি!
নিজের ক্যারিয়ারের সফলতা আনার সাথে সাথে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিকে যিনি নিয়ে গিয়েছেন সফলতার তুঙ্গে। অভিজ্ঞদের মতে, মুকেশ আম্বানির মাঝে এমন বিচক্ষণতা লক্ষ্য করা যায় যা তাঁকে অন্য সকলের মাঝে অনন্য করে তুলতে সাহায্য করে। কীভাবে নিজেকে একজন সফল ও অর্থবান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে? পারবেন জেনে নিন মুকেশ আম্বানির দেওয়া কিছু টিপস থেকে।
টাকাই সবকিছু নয়, কিন্তু এটা গুরুত্বপূর্ণ
মুকেশ আম্বানির বাবা প্রখ্যাত ব্যবসায়ী ধিরুভাই আম্বানি সবসময় বলতেন, ‘টাকাই সবকিছু নয়, কিন্তু টাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।‘ বাবার কথা এই কথাটি মুকেশ আম্বানি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন সবসময়ে। তার বাবার বলা এই কথাটির অর্থ হলো- সবসময় টাকা আয়ের পেছনেই দৌড়ানোর প্রয়োজন নেই। তবে টাকা আয় করার ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
স্বপ্ন দেখুন এবং সেই স্বপ্নকে সফল করতে পরিকল্পনা করুন
মুকেশ আম্বানি বিশ্বাস করেন শুধু টাকা আয়ের পেছনে দৌড়ানো ও সময় ব্যয় করা খুব ভুল কাজ। তবে ভালো কোন কিছু করতে চাওয়া, তার পেছনে সময় ব্যয় করা এবং সেই লক্ষ্যে দৌড়ে চলা একেবারেই ভুল কিছু নয়। তার মতে প্রত্যেকেরই নিজস্ব স্বপ্ন এবং সেই স্বপ্নকে ঘিরে সঠিক পরিকল্পনা থাকা উচিৎ।
হিরো হবার প্রয়োজন নেই, শুধু নিজের কাজটা ভালোভাবে করতে হবে
ভারতে সবচেয়ে বড় বিজনেস হাউজ পরিচালনা করেন মুকেশ আম্বানি। অথচ গণমাধ্যমে তাকে খুব কমই দেখা যায়। তিনি বিশ্বাস করেন, যিনি বিশেষ একটি কাজে ভালো হয়ে থাকেন তিনি প্রাকৃতিকভাবেই একজন আদর্শ ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। নিজেকে জনপ্রিয় করার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করাটা একেবারেই অনর্থক, যদি না নিজের কাজ ভালো হয়ে থাকে।
নিজের মনের কথা শোনার চেষ্টা করুন
মুকেশ আম্বানির নিজের অট্টালিকা তৈরি করা নিয়ে এবং আইপিএল এর দল কেনার ব্যাপার নিয়ে রয়েছে প্রচুর বিতর্ক। কিন্তু সকল কিছুর উর্ধ্বে তিনি সেই সিদ্ধান্তেই অটল থাকেন যেটা তার মন সায় দেয়। যে কারণে তিনি অনেক গুরুত্ব দিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে পরামর্শ দেন যে, প্রতিটি মানুষের ঠিক সেই কাজটিই করা উচিৎ যেটাতে তার মন সায় দেয়।
নিজের আশেপাশের সকলকেই বিশ্বাস করতে হবে কিন্তু কারোর উপরে নির্ভর করা যাবে না
ব্যবসা শুরুর দিকে মুকেশ আম্বানি নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি জানেন, কীভাবে জটিল ও কঠিন সময়কে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। তার মতে, প্রতিটি মানুষের উচিৎ তার আশেপাশের সকলকে বিশ্বাস করা। কিন্তু কোনোভাবেই নিজের কোন কঠিন সময়ে তাদের কারোর উপরে নির্ভর করা উচিৎ হবে না।
ঝুঁকি নেওয়াই শেখার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায়
মুকেশ আম্বানি বিশ্বাস করেন, নিজের ক্যারিয়ারের পথে যতগুলো পদক্ষেপ নেওয়া হবে তার প্রতিটি পদক্ষেপ সঠিক হবে এমন কোন কথা নেই। তবে, প্রতিটি পদক্ষেপই নেওয়া প্রয়োজন ভালো উদ্দেশ্য মাথায় রেখে এবং নতুন কিছু শেখার উদ্দেশ্যে। তার মতে, যে জীবনে কোন ঝুঁকি নিতে চান না, তিনি জীবনে কখনোই সফলতা অর্জন করতে পারবেন না।
কাজ করার স্পৃহাকে চাঙ্গা রাখতে হবে
নিজের কাজকে নিয়ে কখনোই ক্লান্তি বোধ করা যাবে না। মুকেশ আম্বানি জানান, নিজের কাজের প্রতি সবসময় ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখতে হবে এবং অবশ্যই নিজের কাজকে ভালোবাসতে হবে।
আশেপাশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে হবে
নিজের চারপাশের মানুষকে সবসময় অনুপ্রাণিত করতে হবে এবং চেষ্টা করতে হবে ইতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন মানুষের সাথে মেশার জন্য। প্রতিটি মানুষের উচিৎ, নিজের উন্নতির জন্য ভালো বন্ধুদের সাথে এবং মানুষদের সাথে মেশার চেষ্টা করা।
চারপাশের সকল ঘটনা সম্পর্কে জানতে হবে
মুকেশ আম্বানি বলেন, ‘চেষ্টা করতে হবে চারপাশে কী ঘটছে এবং মার্কেটের কী অবস্থা সেটা সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখার জন্য। আপনি যদি নিজেকে সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে দেখতে চান এবং প্রতিষ্ঠিত করতে চান তবে আপনাকে সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু করতেই হবে।’
ভবিষ্যৎ সময়ের জন্য উদ্ভাবন করুন
সবশেষে তিনি জানান, সফলতাই চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। প্রত্যেককের উচিৎ ভবিষ্যৎ সময়কে মাথায় রেখে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন জিনিস উদ্ভাবনের প্রতি খেয়াল রাখা। এতে করেই অর্জিত সফলতাকে ধরে রাখা সম্ভব হবে। সবশেষে, সত্যি এটাই যে কেবল পরিশ্রম এবং সদিচ্ছাই পারে একজন সাধারণ মানুষকেও বিশেষ ও সফল করে তুলতে।
তথ্যসূত্র: প্রিয় ডটকম।