স্বাভাবিকভাবে টাকাকে সাফল্য পরিমাপের মানদণ্ড হিসেবে মনে করা হয়। কিন্তু ধারণার সঙ্গে একমত নন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ব্যবসায়ী ও লেখক পিটার কোহান। তার মতে সাফল্য নির্ভর করে আপনি আপনার সময়কে কিভাবে কাজে লাগাচ্ছেন তার উপর।বিশ্বজুড়ে অর্থ উপার্জনকে সাফল্য পরিমাপের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করার এক ধরনের প্রবণতা চলে আসলেও ধারণাটির সঙ্গে একমত নন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ব্যবসায়ী ও লেখক পিটার কোহান। তাঁর মতে, অর্থ উপার্জনের হার নয়; বরং সাফল্য নির্ভর করে মানুষ তার সময়কে কিভাবে কাজে লাগাচ্ছে তার উপর।
মার্কিন ব্যবসা ও প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম বিজনেজ ইনসাইডারে লেখা এক নিবন্ধে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন। নিবন্ধে তিনি বলেন, যদি অর্থের পরিমাণ দিয়েই কারো সাফল্য পরিমাপ করা হতো তবে বলতে হবে বিশ্বের কেউই সত্যিকার অর্থে সফল নয়। বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি বিল গেটস এর সম্পদের পরিমাণ ৮৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার উল্লেখ করে পিটার কোহান বলেন, গেটস যে প্রতিবছরই কাঙ্ক্ষিত মুনাফা অর্জন করেছেন তা ঠিক নয়।
বিল গেটসের মতই ব্রিজওয়াটার এসোসিয়েটস এর কর্ণধার রে ডালিওর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য বলে উল্লেখ করেন পিটার। ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, গেল বছর ব্যক্তিগতভাবেই ৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেন ডালিও। পিটার বলেন, ‘আপনি যদি মনে করেন যে, আয়ের কারণেই এ দুই ব্যক্তির সাফল্য এসেছে তবে তারা কেউই সে অর্থে সফল নয়। আপনাকে তখনই সফল বলা যাবে যখন প্রতিবছরই আপনি এমন সাফল্য পেতে থাকবেন। আবার শীর্ষস্থান দখল করলে আপনার লক্ষ্যও বদলে যাবে।’
তাই সাফল্যের এক ব্যতিক্রমী সংজ্ঞাই দিয়েছেন পিটার। তার মতে, সাফল্য হলো কিভাবে আপনি আপনার সময়টা কাজে লাগাচ্ছেন তার উপর নির্ভরশীল। কীভাবে সফল হতে হবে? পিটারের পরামর্শ হলো, যখন কারো মনে হবে সে এত অর্থ উপার্জন করে ফেলেছে যে তাকে আর মাসিক কোনো বিল নিয়ে চিন্তা করতে হয় না তখন তাকে নিজের সময়ের সঠিক উপযোগ করা শিখতে হবে। অনেকেই হয়তো এমন আর্থিক স্বাধীনতা তৈরি করতে পারেন না। সবারই তো আর বিল গেটসের মত কাড়ি কাড়ি টাকা থাকে না। তবে কী তারা সফল হবেন না?
পিটারের মতে, অনেক অর্থ না থাকলেও কিংবা একেবারে দারিদ্য অবস্থা থেকেও মানুষ সময়কে কাজে লাগিয়ে সফল হতে পারে। তিনি বলেন, মানুষ যে কাজটি করতে চায়, তা যদি সে করতে পারে তবেই সে সুখী, তবেই সে সফল। তাঁর মতে, কোন ব্যক্তি হয়তো এমন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে, যেখানে অনেক টাকা বেতন দেয়া হয়, কিন্তু সেখানে তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে, তবে ওই ব্যক্তির উচিত হবে সে প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে দেয়া। সফল হওয়া প্রত্যেকটি মানুষেরই লক্ষ্য। আর ছাত্রজীবন থেকেই এর চর্চা শুরু করা প্রয়োজন বলে মনে করেন পিটার।
তাই শিক্ষার্থীদেরকে সময়কে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে এবং কাজের ব্যাপারে তিনটি পরামর্শ দেন তিনি। পিটার মনে করেন, প্রত্যেক ব্যক্তিই কি করতে চান এবং কেন করতে চান এ ব্যাপারে নিজেকে তিনটি প্রশ্ন করা উচিত। প্রশ্ন তিনটি হলো: ১. আমি কি আমার কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান? ২. আমি কি আমার কাজে বিশ্ব সেরাদের একজন? ৩. আমার কাজের সঠিক মূল্যায়ন কি আমি পাবো?
সাধারণত মানুষ বুঝতেই পারে না তাদের টাকা কি খাতে লাগালে তাদের সন্তুষ্টি আসবে। কেউ নতুন ব্যবসা শুরু করে, কেউ ব্যাংকে রাখে কিন্তু কেউই কাঙ্খিত সাফল্য পায়না। তাই এক্ষেত্রে পিটার তার শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেয়ার উপদেশ দেন। আর এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যেকোনো সফল ব্যক্তিকে এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর জিজ্ঞাসা করতে পারে। তবে তাদেরকে আরো কিছু প্রশ্ন করার পরামর্শ দেন পিটার।
প্রশ্নগুলো হলো: ১. আপনার কোম্পানিতে সবাই কাজের ব্যাপারে নিষ্ঠাবান ও উৎসাহী? কর্মচারীরা শুধু তাদের দায়িত্ব পালন ছাড়া আর কি করে থাকে? ২. আপনার কাজের ক্ষেত্রে প্রতিভাবান ব্যক্তিরা এমন কি করে থাকে যা একজন কম যোগ্য ব্যক্তি করতে পারেন না। ৩. এই কাজের ক্ষেত্রে সবাই কি সঠিক কাজের মূল্যায়ন পাচ্ছে? এটা সন্তুষ্টির নাকি হতাশার? সন্তুষ্ট এবং হতাশ কর্মচারীদের মধ্যে মূল পার্থক্য কোথায়? পিটার মনে করেন শিক্ষার্থীরা যদি এমন ১০ থেকে ১৫টি সাক্ষাতকার নিতে পারে তবে জীবনে তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে এবং তাদের সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারবে। কারণ সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানো এবং নিজের কাজে সন্তুষ্ট থাকার মাঝেই প্রকৃত সাফল্য রয়েছে।
তথ্যসূত্র: প্রিয় ডটকম।