দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার আরজুমানআরা সফল নারী উদ্যোক্তা। আমেরিকান টার্কি পাখি খামার গড়ে তুলে সে এখন স্বাবলম্বী। সমাজের সকলে এখন তাকে সম্মান করে ও তাকে চিনে। কিন্তু কিছুদিন আগেও তাকে কেউ চিনত না। তার এ পরিচিতি সম্মান এনে দিয়েছে তার প্রবল আত্মপ্রত্যয়, অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে উঠা তার ইকো এগ্রো ফার্ম।
আরজুমানআরা জানান ছোট থেকে তার ইচ্ছা ছিল নিজেকে একজন সফল উদ্যক্তা হিসেবে গড়ে তুলে সমাজে নিজস্ব পরিচয়ে মাথা উঁচু করে দাড়াতে। কিন্তু বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে ভূগোল বিষয় নিয়ে অনার্স পাশ করার পর তার পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়ে যায়। স্বামীর সংসারে গিয়েও থেমে থাকেনি তার স্বপ্ন।
ইউটিউবের মাধ্যমে জানতে পারে বাংলাদেশে আমেরিকান টার্কি পাখি পালন করা হচ্ছে। সঠিক ভাবে খামার করলে লাভবান হওয়া সম্ভব। তার মনে উৎসাহের জন্ম নেয়। স্বামীর অনুমতিক্রমে তার পিতার বাড়ীর ছাদে ২০১৬ সালে প্রথমে ১০০ টার্কি পাখির বাচ্চা নিয়ে শুরু করে পরীক্ষা মুলক খামার। সফল ভাবে পাখিগুলিকে বড় করতে সক্ষম হয়। পরে উপজেলা সদরের ১/২ কিঃ মিঃ দুরে উত্তর শ্যামপুর মৌজায় ৬ বিঘা জমি কিনে নিরিবিলি পরিবেশে বানিজ্যিক ভাবে টার্কি পাখির খামার শুরু করে।
বাংলাদেশে টার্কি পাখির খামার খুব একটা বেশি নেই। কষ্টকরে বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করে টার্কি পাখির বাচ্চা কিনে এনে তা বড় করার কাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে পাখিগুলি ডিম দেওয়া শুরু করে। কিন্তু ডিম থেকে বাচ্ছা ফুটানোর কোন ব্যবস্থা তার খামারে না থাকায় পুনরায় ইউটিউব থেকে তথ্য সংগ্রহ করে একটি অটোমেটিক ইনকিউবেটর মেশিন নিয়ে এসে ব্রিডিং ফার্ম শুরু করে এবং অভিজ্ঞতা না থাকার পরেও উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে সফল ভাবে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোতে সক্ষম হয়।
এ পর্যন্ত তিনি তার মেশিনের মাধ্যমে ফুটানো প্রায় ১ হাজার বাচ্চা দেশের বিভিন্ন খামারীদের কাছে বিক্রি করেছে। বাচ্চাগুলি সুস্থ্য ভাবে বড় বেড়ে উঠছে।তার মেশিনে প্রতিমাসে ২৫ হাজার বাচ্চা ফুটানোর ক্ষমতা রয়েছে।বর্তমানে তার খামারে টার্কি পাখির ১ হাজার প্যারেন্টস পালিত হচ্ছে। তারা এখন মাসে প্রায় দেড় হাজার অধিক ডিম দেয়।
খুব অল্প সময়ে তার খামারটির সুনাম এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এ পর্যন্ত স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগন পরিদর্শন করেছেন।সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান প্রতিদিন দুর দুরান্ত থেকে তার খামারটি দেখার জন্য বিভিন্ন শ্রেনীর লোকজন আসছে।
তার ছোট রাজু আহমেদ জানান প্রথম দিকে আপন জন ও প্রতিবেশীদের থেকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে তাকে। শিক্ষিত মেয়ে হয়ে চাকুরী না করে এসব খামার করছে কেন? মেয়ে মানুষের দ্বারা এসব হয় না এমন বিভিন্ন ধরনের কথা। কিন্তু তার স্বামী, শশুরবাড়ীর লোকজন, বাবা তাকে সব সময় সাহস যুগিয়েছে এবং তাদের সার্বিক সহযোগীতায় সে তার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছে। এখন তাকে আর কেউ এসব বলেনা। কেউ তাকে ছোট করে দেখেনা। বরং তার সফলতা দেখে এলাকার অনেক নারীরা উৎসাহিত হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ মোঃ শফিউল ইসলাম জানান কোন প্রকার প্রশিক্ষন ছাড়াই শুধু মাত্র ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়ে টার্কি পাখির মত অপরিচিত পাখির খামার গড়ে সফলতা অর্জন করা সত্যিই সাহসিতার পরিচয় দিয়েছে নারী উদ্যোক্তা আরজুমান আরা। বর্তমানে তিনি টার্কি মুরগীর সাফল্যের পর উঢ পাখির পালন শুরু করেছে।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।