মুক্তা আক্তারের পরিচয় এখন ‘খাদিরানী’। তিনি দেশীয় পণ্যের উদ্যোক্তা। তবে মুক্তা থেকে খাদিরানী হয়ে ওঠার গল্পটা মোটেও সহজ ছিল না। এর জন্য তাকে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন মুক্তা। তখন ৫ম শ্রেণিতে পড়েন। তখনো তেমন বুঝতেন না বাবা হারানোর ব্যথা। এখন যতই বড় হচ্ছেন, ততই বুঝছেন বাবা হারানোর পর কী কষ্ট করতে হয়। বাবা মারা যাওয়ার পর চার ভাই, তিন বোনের বিশাল সংসার আগলে রেখেছেন মা রৌশনআরা খন্দকার।
মুক্তা আক্তারের জন্ম সীমান্তবর্তী কুমিল্লার বিবির বাজারে। বর্তমানে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য ব্যবসা করবেন বলে ঠিক করেন। কিন্তু কী ব্যবসা করবেন, তা ভেবে উঠতে পারছিলেন না। শেষে নিজের টিউশনির ২৩৭০ টাকা দিয়ে অনলাইনে খাদি কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। ১ বছরে তার মোট বিক্রি দাঁড়ায় ১২ লাখ টাকার উপরে।
মুক্তা আক্তার বলেন, ‘টিউশন করে নিজের পড়ার খরচ বহন করতাম। সেই টিউশনির টাকাকে পুঁজি হিসেবে কাজে লাগিয়েছি। শুরুতে আমার পরিবারের সাপোর্ট পাচ্ছিলাম না। লুকিয়ে লুকিয়ে কাজ করতে হয়েছে অনলাইনে। এরপর যখন বিক্রি বাড়তে থাকলো; তখন পরিবার আমাকে সাপোর্ট দেওয়া শুরু করলো।’ তিনি বলেন, ‘তবে এ ক্ষেত্রে বড় সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে ফেসবুক ভিত্তিক ই-কমার্স গ্রুপ।
গ্রুপটি আমাকে সাধারণ থেকে অসাধারণ করে তুলেছে। সে কারণেই আজ সবাই খাদিরানী বলেই চেনে।’ খাদি নিয়ে কেন কাজ শুরু করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে মুক্তা বলেন, ‘খাদি প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার পথে। আমাদের কুমিল্লার ঐতিহ্য এভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী জোগান দিতে পারেন না তাঁতিরা। অনেকে কাজও বন্ধ করে দিয়েছেন।
যদি এমন হতে থাকে, তাহলে অচিরেই খাদি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তাই কুমিল্লার ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে আমার এ উদ্যোগ।’ তিনি আরও বলেন, ‘খাদি নিয়ে কাজ করার জন্য প্রথমে কুমিল্লার তাঁতিদের সাথে কথা বলি। তাদের কারখানায় যাই। গিয়ে খুব হতাশ হই। খুব অল্প সংখ্যক তাঁতি কাজ করছেন। অনেকে বলেছেন, আপনারা কাজ দিলে করতে পারবো।
কিন্তু তখনো আমি নতুন। বুঝতে পারছিলাম না যে, কী করবো। তবুও সাহস নিয়ে কাজ শুরু করলাম।’ তিনি মনে করেন, খাদি নিয়ে কাজ করলে অনেকের কর্মসংস্থান তৈরি হতে পারে। প্রান্তিক মানুষের অর্থনীতির স্বাধীনতা দিতে পারে। আর খাদি কাপড় শতভাগ পরিবেশবান্ধব। এ কাপড় তুলার তৈরি এবং সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত। তাই খাদি কাপড় স্বাস্থ্যকর। খাদি কাপড় টেকসই।’
মুক্তা বলেন, ‘খাদি কাপড় গরমে ঠান্ডা এবং শীতে উষ্ম অনুভূতি দেয়। সর্বোপরি এটি বিদেশি পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনবে। আমি খাদি নিয়ে কাজ করার পর কুমিল্লা থেকে মিনিমাম ৫০ জন উদ্যোক্তা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে খাদি নিয়ে কাজ করছেন। ফলে কুমিল্লার খাদি তাঁতিরা অনেকে এগিয়ে এসেছেন।’
খাদি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার পরিকল্পনা হচ্ছে- খাদিতে বিভিন্ন ধরনের ফিউশন আনা। শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, কুর্তিসহ অনেক আইটেম নিয়ে কাজ করা। সফলতার একটাই সূত্র, লক্ষ্য ঠিক করে লেগে থাকা আর পরিশ্রম করা। খাদি নিয়ে বিশ্ব দরবারে জায়গা করে নেওয়াটাই এ উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য।’ তথ্যসূত্র: জাগো নিউজ।