রাজপথে ময়লা-আবর্জনা, ধুলোবালির কমতি নেই। সাধারণ পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দিয়ে রাস্তা ঝাড়ু দিয়েও এসব থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে পারছে না সিটি করপোরেশন। এবার তাই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বহরে যুক্ত হয়েছে নতুন যন্ত্র রোড সুইপার। যন্ত্রটি চালু করলেই মুহূর্তের মধ্যে রাস্তার ধুলোবালি-বর্জ্য পাইপ দিয়ে শুষে নেবে। ঝকঝকে তকতকে হয়ে যাবে রাস্তা।
ইতিমধ্যে যন্ত্রটি পরীক্ষামূলকভাবে কাজ শুরু করেছে এবং আশানুরূপ ফলও মিলেছে। ভালো ফল পাওয়া গেলে ভবিষ্যতে পুরো ডিএনসিসি এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের সিংহভাগ এ যন্ত্রের মাধ্যমে পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। ডিএনসিসি সূত্র জানায়, আনিসুল হক তার জীবদ্দশায় রোড সুইপার যন্ত্র ব্যবহারের উদ্যোগ নেন। সব প্রক্রিয়া শেষে রোড সুইপারটি ডিএনসিসির হাতে পৌঁছে। এটি সরবরাহ করেছে পল্টনের সোহেল এন্টারপ্রাইজ।
জানা গেছে, রোড সুইপারটি দেখতে অনেকটা কাভার্ডভ্যানের মতো। এর ইঞ্জিন দুই ভাগে বিভক্ত। একটির কাজ পথ মাড়ানো। অন্যটির কাজ রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া। সুইপার যন্ত্রটির সামনের দিকে রয়েছে দুটি সাকশন (শোষণ) পাইপ। প্রতিটি পাইপ একসঙ্গে দেড় ফুট ব্যাসের জায়গার ময়লা-আবর্জনা শুষে নিতে পারে।
যন্ত্রটি চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার ময়লা সাকশন পাইপের মাধ্যমে ওপরে অবস্থিত গার্বেজ ট্যাঙ্কারে জমা হয়। আরেকটি ইঞ্জিনের মধ্যমে গাড়িটি ধীরে ধীরে চলার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার সব ময়লা-আবর্জনা শুষে ট্যাঙ্কে নিয়ে যাবে। ট্যাঙ্কে ছয় টন বর্জ্য ধারণ করতে পারে। এছাড়া একটি পৃথক পানির ট্যাঙ্কও রয়েছে। প্রয়োজনে ট্যাঙ্ক থেকে পৃথক পাইপের মাধ্যমে রাস্তায় পানি ছিটিয়েও রাস্তা পরিস্কার করা যাবে।
প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা বর্তমানে যন্ত্রটি চালানো হচ্ছে। প্রতি ঘণ্টায় ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার পথ পরিস্কার হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও বাড়ানো সম্ভব। রাত ১২টার পর থেকে ভোর ৪-৫টা পর্যন্ত কাজ করছে রোড সুইপার। আপাতত মানিক মিয়া এভিনিউ, খেজুরবাগান, ক্রিসেন্ট লেক, বিজয় সরণি, ইন্দিরা রোড, গণভবন, সংসদ ভবনের আশপাশে পরিচ্ছন্নতার কাজে এটি ব্যবহূত হচ্ছে।
ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর রাজ্জাক বলেন, সাধারণ পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দিয়ে রাস্তা এত সুন্দরভাবে পরিস্কার করা সম্ভব নয়। ধুলোবালি রয়ে যায়। রাস্তার পাশে ঝাড়ূ দিয়ে বর্জ্য রেখে দিলে সেখান থেকে বর্জ্য তোলার পরও কিছু বর্জ্য পড়ে থাকে। রোড সুইপার ধুলার দানা পর্যন্ত টেনে নেয়। একটি রোড সুইপার ৩৬ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সমান কাজ করে। এমনকি বর্জ্য সরাসরি ল্যান্ড ফিলে নিয়েও ফেলতে পারে। এছাড়া এটির জ্বালানি খরচও বেশ কম।
ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল হাসনাত আশরাফুল ইসলাম বলেন, ২০১২ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সময়ে ডিএনসিসির ৭ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী মারা গেছেন। ৮ জন কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। মান্ধাতা আমলের পদ্ধতিতে রাস্তা ঝাড়ূ দিতে গিয়ে ১১ জন আহত হয়েছেন। এক কথায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের মাধ্যমে যেভাবে রাস্তা পরিস্কার করা হয়, তা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এ কারণেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডিএনসিসি চেয়েছে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে।
সোহেল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আজিজ মিয়া জানান, উন্নতমানের এ রোড সুইপারটির চ্যাসিস জাপানের হিনো কোম্পানির। আর সুইপার মেশিনটি ব্রিটেনের বিখ্যাত জনস্টন কোম্পানির। তারা তিন বছরের গ্যারান্টি দিয়েছেন। তবে ১৩ বছরেও এটার কিছু হবে না। এটির দাম চার কোটি ৯৫ লাখ টাকা। তিনি জানান, ভারতেও এত আধুনিক মানের রোড সুইপার এখনও ব্যবহার করা হয় না। গ্যারান্টির তিন বছর যাবতীয় দেখভাল করবে সরবরাহকারী। থাইল্যান্ডের একটি টেকনিক্যাল টিম এটি পরিচালনার জন্য তিনজনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে গেছে।
মেশিনটি পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত সোহেল এন্টারপ্রাইজের প্রকৌশলী বিজিত পাল জানান, সুইপার মেশিনটির ক্ষমতা ৮৫ হর্স পাওয়ার। এটি চালু করার পর যে মাত্রায় ভ্যাকুয়াম তৈরি হয়, তা আস্ত ইটও শুষে ভেতরে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু ঢাকার রাস্তার বর্জ্য এত ভারী নয়। মেশিনটি সুন্দরভাবেই চলছে।
জানা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড থ্রি ইয়ার নামক একটি প্রকল্পের অধীনে ২০১২ সালে স্বল্প ক্ষমতাসম্পন্ন ছয়টি সুইপার মেশিন আমদানি করা হয়। কিন্তু আমদানির পরই সেগুলো ব্যবহার করতে গিয়ে বিকল হয়ে যায়। সেগুলো আর রাজপথে ব্যবহার করা যায়নি।