শুরু হলো পবিত্র রমজান। পাশাপাশি ঈদুল ফিতরের উৎসব উদ্যাপনের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে ঘরে ঘরে। চিরাচরিত রেওয়াজ অনুসারে এই ঈদে পোশাক-আশাক কেনার উদ্যোগটাই থাকে প্রধান। হাল আমলে তৈরি পোশাকের প্রতিই ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। তবে যাঁরা ঈদের সজ্জায় একটু ভিন্নতা আনতে চান, তাঁরা নিজেদের পছন্দমতো নকশা ও ডিজাইনের পোশাক তৈরি করিয়ে নেন।
নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, মৌচাক মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, গজ কাপড়ের ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা বেড়েছে। সেই সঙ্গে ব্যস্ততা বেড়েছে আর ব্লক-বাটিক, এমব্রয়ডারি, কারচুপি, হ্যান্ড পেইন্ট কারিগরদের। তাঁদের দম ফেলার ফুরসত নেই।
গ্রীষ্মের এই তপ্ত দিনে আরামদায়ক পোশাক হিসেবে সব সময়ই এ দেশে জনপ্রিয় ছিল ব্লক-বাটিকের নানান রঙের অলংকরণের সুতির পোশাক। ফ্যাশনের ধারা বদলে ঈদের বাজারে অনেক বিদেশি পোশাকের আবির্ভাব ঘটলেও দেশি নকশার পোশাকের চাহিদা এখনো কমেনি। মোম বাটিক, একরঙা, দুরঙা অথবা তিন রঙের মিশ্রণের নকশার চাহিদাই বেশি। অনেকেই তাঁদের ঈদের পোশাকে কারিগরদের দিয়ে পছন্দের নকশা করিয়ে নিচ্ছেন।
নিউমার্কেটের তৃতীয় তলায় ব্লক-বাটিক, কারচুপির দোকানের সারি। টেবিল পেতে সেখানে দিনরাত চলছে রং আর সুতার কাজ। ব্লক করে সেখানেই শুকানো হচ্ছে রঙিন কাপড়। মিরপুরের কালশীর হিয়া আফরোজ এসেছেন পছন্দের নকশায় ঈদের পোশাক তৈরি করাতে। তিনি জানালেন, থান কাপড়ের দোকান থেকে কাপড় কিনে পছন্দমতো ডিজাইন করে থ্রিপিস তৈরি করান। এরপর নকশার কাজ। রং ও নকশার ভিত্তিতে প্রতিটি থ্রি-পিসে ব্লক-বাটিক প্রভৃতির কাজ করাতে খরচ হয় ২০০ থেকে ৬০০ টাকা। এতে পোশাকে ভিন্নতা আসে।
ঈদের পোশাক একটু জমকালো করে তুলতে অনেকের আগ্রহ থাকে এমব্রয়ডারি, কারচুপির প্রতি। নানা ধরনের এমব্রয়ডারিতে নানান বর্ণিল সুতায় জর্জেট, সিল্কের পোশাকে ফুটে ওঠে আকর্ষণীয় নকশা। কারিগরদের নিজস্ব নকশার পাশাপাশি ক্রেতারাও নিজেদের পছন্দের নকশার ছবি কারিগরদের দেখিয়েও করিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। কারচুপিতেও নানা রঙের পুঁতি, জরির সুতা আর বাহারি পাথরের ব্যবহার পোশাকে বাড়তি সৌন্দর্য যোগ করে।
উত্তরা থেকে এসেছেন আকলিমা রহমান। তিনি ঈদের জন্য ২০টি শাড়ির অর্ডার দিয়েছেন নিউমার্কেটের ব্লক কারিগর নুর হোসেন মিয়াকে। তিনি জানালেন, ঈদের জন্য পরিবারের সব সদস্যকেই কিছু না কিছু দেওয়ার থাকে। সে কারণে রোজার শুরুতেই তিনি কেনাকাটা কিছুটা এগিয়ে রাখছেন।
কারচুপির কারিগর মনির হোসেন জানালেন, ঈদের আগে কাজের চাপ বাড়লেও তাঁরা মজুরি বাড়ান না। কারণ, তাঁদের ক্রেতারা সবাই কোন ধরনের কাজে কেমন মজুরি, তা জানেন। কারচুপির নকশার ধরন অনুসারে শাড়িতে দেড় হাজার থেকে তিন হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। কারিগরেরা জানালেন, সাধারণত ১০ রোজা পর্যন্ত তাঁরা কাজের ফরমাশ নিয়ে থাকেন। তবে তাঁদের কাজ চলে চাঁদরাত পর্যন্ত।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো ডটকম।