হয়তো সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। তার সেখানে বসবাসও শুরু করলেন। কিন্তু কিছুদিন পর জানতে পারলেন ইট, বালি, সিমেন্টের বদলে আপনার ফ্ল্যাটটি তৈরি হয়েছে কার্ডবোর্ড জাতীয় জিনিস দিয়ে! কেমন লাগবে?
গল্প মনে হলেও বাস্তবে এ রকম ঘটনাই ঘটেছে, ঘটছে।
কিছুদিন আগে তিন কোটি টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট কেনেন এক নারী। সেখানে বসবাস শুরু করতেই বুঝতে পারেন এই ফ্ল্যাটে কিছু গোলমাল রয়েছে। ফ্ল্যাটের দেয়ালে ঠেস দিলেই মনে হচ্ছে যেন ভেঙে যাবে। দেওয়ালে জোরে হাত চাপলেই বসে যাচ্ছে। বিষয়টি বিস্তারিত জানার জন্য তিনি এক স্থপতিকে ডেকে আনেন। ওই স্থপতি ফ্ল্যাটের দেয়াল পরীক্ষা করে জানান, সিমেন্ট বালি দিয়ে নয়, এই ফ্ল্যাটের দেয়াল তৈরি করা হয়েছে জিপসাম বোর্ড দিয়ে। এই ধরনের বোর্ডকে প্লাস্টার বোর্ডও বলা হয়। আর এই বোর্ডের পিছনে রয়েছে গ্লাসউল জাতীয় পদার্থ। তাই এই দেওয়ালে টোকা মারলেই ফাঁপা আওয়াজ হচ্ছে, আর ঘুষি চালালেই ভেঙে যাচ্ছে দেয়াল।
ঘটানটি ভারতের মুম্বাইয়ের। ওই নারীর নাম শিল্পী থাড়। মুম্বাইয়ের ওয়াডলায় রয়েছে লোধা গ্রুপের বিশাল রেসিডেন্সি কমপ্লেক্স। সেখানেই দিয়োরো টাওয়ারে ওই নারীর ফ্ল্যাট।
ফ্ল্যাটের ভঙ্গুরতা জনসমক্ষে তুলে ধরতে শিল্পী তার বন্ধু ও সমাজকর্মী কৃষ্ণারাজ রাওয়ের সাহায্য নিয়ে একটি ভিডিও তৈরি করেন। তাতে তারা তুলে ধরেন কীভাবে হাল্কা ধাক্কাতেই ভেঙে পড়ছে ফ্ল্যাটের দেয়াল।
বিচারের আশায় শিল্পী মুম্বাইয়ের পুলিশ কমিশনারের কাছে ফ্ল্যাটের নির্মাতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগও দাখিল করেছেন।
ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড হতেই ভাইরাল হয়ে যায়। তখন নির্মাতা সংস্থা লোধা গ্রুপ দাবি করে ভিডিওটি জাল। এ জন্য তারা শিল্পীকে আইনী নোটিসও পাঠায়।
তবে ফ্ল্যাট কেবল শিল্পীই নন, টাওয়ারে বসবাসকারী অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন। যেমন বিপুল সিংভি জানিয়েছেন, এই ফ্ল্যাট মোটেও বসবাসযোগ্য নয়। কিন্তু উপায় নেই বলে তাঁকে এখানেই থাকতে হচ্ছে। তবে জিপসামের দেয়াল সম্পর্কে নাকি তিনি আগে থেকেই জানতেন।
লোধা গ্রুপের মুখপাত্র বলেছেন, ‘ফ্ল্যাট নিয়ে যারা খুশি নন তারা আদালতে যেতেই পারেন। দু’জনের কাছ থেকে এ রকম অভিযোগও আমরা পেয়েছি।’ ফ্ল্যাটের দেয়াল প্রসঙ্গে তার জবাব, ‘ড্রাইওয়াল প্রযুক্তিতেই এর দেয়াল তৈরি করা হয়েছে। দেয়াল তৈরির প্রচলিত পদ্ধতি থেকে এটি দ্বিগুণ খরচবহুল।’
ড্রাইওয়াল নিয়ে সাফাই দিতে গিয়ে দুবাইয়ের বু্র্জ খলিফার উদাহরণও টেনেছেন তিনি। মুম্বাইয়ের নামকরা কিছু হোটেল ও হাসপাতালও এই প্রযুক্তিতে তৈরি বলে দাবি করেছেন লোধা গ্রুপের মুখপাত্র।