বিশ্বের শীর্ষ রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ তহবিল হিসেবে পরিচিত নরওয়ের গভর্নমেন্ট পেনশন ফান্ড গ্লোবাল (জিপিএফজি)। তহবিলটি তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান এবং উত্তোলনে তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে। তবে বিপি ও শেলের মতো যেসব প্রতিষ্ঠানের নবায়নযোগ্য জ্বালানি ইউনিট রয়েছে, সেগুলোয় মালিকানা বহাল রাখবে তহবিলটি। খবর গার্ডিয়ান ও বিবিসি।
নরওয়ের রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ তহবিলটিতে ১ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থমূল্যের সম্পদ গচ্ছিত আছে। সম্পদের দিক থেকে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রায়ত্ত তহবিল যেমন চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত তহবিলের চেয়েও এগিয়ে আছে তহবিলটি। তহবিলটি জানিয়েছে, তারা তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে বিনিয়োগ বন্ধ করে দেবে। নরওয়ের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শেই কৌশলগত পরিবর্তনের এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তহবিলটি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছিল, তেল ও গ্যাস খাতে বিনিয়োগ কমালে অর্থনীতির জন্য তা সুফল বয়ে আনতে পারে। তহবিলটির ১ দশমিক ২০ শতাংশ ইকুইটির ওপর কৌশলগত এ পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে, যার অর্থমূল্য প্রায় ৬৬ বিলিয়ন নরওয়েজিয়ান ক্রোন। জিপিএফজি জানিয়েছে, নরওয়ের অর্থনীতিকে রক্ষার উদ্দেশ্যেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
একই উদ্দেশ্যে তেল খাতের সম্প্রসারণকেও সীমিত করে আনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তবে যেসব ফসিল জ্বালানি কোম্পানির নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ রয়েছে, সেগুলোর অংশীদারিত্ব বহাল রাখবে তহবিলটি। বিশ্বের বড় বড় জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি ইউনিট রয়েছে, সেগুলোতে অংশীদারিত্ব বহাল রেখেছে জিপিএফজি। শেলে ২ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং বিপিতে ২ দশমিক ৩০ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে তহবিলটির। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অংশীদারিত্ব বহাল রাখার কারণ, তহবিলটি বিশ্বাস করে সবুজ জ্বালানি উন্নয়নে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
জিপিএফজি তাদের ১৩৪টি প্রতিষ্ঠানের মালিকানা বিক্রি করে দেবে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্যের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান টুলো অয়েল, প্রিমিয়ার অয়েল, সকো ইন্টারন্যাশনাল, অফির এনার্জি ও নস্ট্রাম অয়েল অ্যান্ড গ্যাস। জিপিএফজির ঘোষণার পর প্রত্যেকটি কোম্পানির শেয়ারের দাম পড়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দাম যৌথভাবে ১৩ কোটি পাউন্ড হ্রাস পেয়েছে।
নরওয়ের অর্থমন্ত্রী সিভ জেনসেন জানান, তেলের দামের দীর্ঘস্থায়ী পতনের কারণে আমাদের তহবিলটি সংকটের মধ্যে আছে। এ সংকট কমানোর উদ্দেশ্যেই নতুন উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়েছে। যেসব কোম্পানি তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান এবং উত্তোলনে জড়িত, সেগুলোর মালিকানা বিক্রি করে দেয়াটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ বহুমুখী জ্বালানি খাতে সম্প্রসারিত করেছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানা বিক্রি না করাই যৌক্তিক।
গ্রিনপিস ইউকের অয়েল ক্যাম্পেইনার চার্লি ক্রনিক জানান, আংশিকভাবে তেল ও গ্যাস খাতে বিনিয়োগ প্রত্যাহারকে স্বাগত জানাই। এ উদ্যোগের মাধ্যমে এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, যেসব প্রতিষ্ঠান তেল ও গ্যাস সম্প্রসারণে বিনিয়োগ করছে, তারা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু যে পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে তা নয়, বিনিয়োগকারীদের কাছেও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
তিনি বলেন, বিনিয়োগ প্রত্যাহারের বর্তমান প্রস্তাব থেকে বিপি শেল বাদ পড়লেও, ভবিষ্যতে তারাও শাস্তির আওতায় চলে আসতে পারে। যদি এ প্রতিষ্ঠানগুলো ফসিল জ্বালানির পেছনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে, তবে তাদের মালিকানাও বিক্রি করে দেয়া হতে পারে।
ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের পরিচালক টম সানজিলো জানান, বিশ্বের শীর্ষ তহবিলটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তারা এটা করছে কারণ, ফসিল জ্বালানি ঐতিহাসিকভাবে যে ভূমিকা পালন করে আসছিল, এখন আর সে মূল্য বহন করছে না।
তার মতে, সমন্বিত তেল কোম্পানিগুলোর জন্য এটা একটা সাবধানবাণী। তাদের বুঝতে হবে, বিনিয়োগকারীরা এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে বেশি জোর দিচ্ছে। জিপিএফজির বিনিয়োগ কৌশল থেকে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা যাচ্ছে। আর তা হলো মাটির নিচ থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণকারী বিজনেস মডেলগুলো অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে।