দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, তবুও প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চিতলিয়া বাজার খেয়াঘাট ও বকচর ঘাটে ট্রলার নিয়ে যাত্রীদের অপেক্ষায় থাকেন তিনি। কখন যে তার কাঙ্ক্ষিত যাত্রীরা আসবেন এবং যাত্রীদের দেওয়া টাকায় চলবে সংসার। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও ট্রলার চালিয়ে তিনি সংসার চালাচ্ছেন হাসিমুখে। একেই হয়তো বলে অদম্য নারী! অদম্য নারীটির নাম জিয়াসমিন আক্তার। চলুন আজ জেনে নিই তার জীবন সংগ্রামের গল্প—
স্বামীর মৃত্যুর পর জীবন সংগ্রামে জিয়াসমিন: মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চল আধারা ইউনিয়নের বকচর গ্রামের এক অদম্য নারীর নাম জিয়াসমিন আক্তার (৩২)। হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৩ বছর আগে মারা যান জিয়াসমিনের স্বামী সবুজ সিকদার। স্বামীর মৃত্যুর পর জীবন সংগ্রামে জিয়াসমিন এখন রজতরেখা নদীর চিতলীয়া-বকচর নৌরুটে খেয়া পারাপারের একজন ট্রলার চালক। ইঞ্জিনচালিত এই ট্রলার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন এই অদম্য নারী।
সাধারণত পুরুষকেই আমরা ট্রলার চালাতে দেখি। কিন্তু নারী হয়েও পুরুষের মতোই জিয়াসমিন এখন নিজে ট্রলার চালান চিতলিয়া ও বকচর গ্রামের মধ্যকার খেয়া পারাপারে। দুই মেয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারের খরচ মেটাতে ট্রলার চালক হয়ে উঠেছেন জিয়াসমিন। তার বড় মেয়ে সাবরিন আক্তার বর্তমানে আধারা ইউনিয়নের সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ও ছোট মেয়ে সাদিয়া আক্তার বকচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।
অদম্য একজন: জীবনযুদ্ধে অদম্য নারী জিয়াসমিন জানান, চিতলিয়া-বকচর নৌরুটে রজতরেখার বুকে ট্রলার চালিয়ে সংসার চালাতেন তার স্বামী সবুজ সিকদার। বকচর গ্রামে স্বামী ও দুই কন্যা সন্তান নিয়ে সুখের সংসার ছিল তার। কিন্তু হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার স্বামীর বাল্ব অকেজো হয়ে যায়। একইসঙ্গে প্যারালাইসিস হয়ে দীর্ঘদিন ভোগেন তার স্বামী। এরপর ৩ বছর আগে তিনি মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর সংসারে উপার্জন করার মতো আর কেউই নেই। তাই অগত্যা স্বামীর রেখে যাওয়া ট্রলারের হাল ধরেন জিয়াসমিন নিজেই। ধরেন সংসারের হালও।
২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা রোজগার: প্রতিদিন সকাল ৬টার দিকে খেয়া পারাপারে ট্রলার চালাতে আসেন জিয়াসমিন। বাড়ি ফেরেন রাত ৮টার দিকে। ট্রলার চালিয়ে এই দীর্ঘসময়ে চিতলিয়া-বকচর নৌরুটে যাত্রী পারাপার করে থাকেন জিয়াসমিন। ট্রলারের ডিজেল খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা রোজগার করেন অদম্য এই নারী।
সত্যিই বিস্ময়কর!: যাত্রী ইলিয়াস মিয়া জানান, একজন নারী হয়েও পুরুষের মতোই চিতলিয়া-বকচর খেয়া ঘাটে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার চালিয়ে যাত্রী পারাপার করেন জিয়াসমিন। স্বামীর অবর্তমানে সংসারের উপার্জনক্ষম হয়ে উঠেছেন গ্রামের এই নারী। যা সত্যিই বিস্ময়কর। বলা চলে, জীবন সংগ্রামের এক অদম্য যোদ্ধা জিয়াসমিন।
অপর যাত্রী রতন সিকদার জানান, একজন নারী হয়ে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার চালিয়ে প্রতিদিন সকালে চিতলিয়া খেয়াঘাট থেকে যাত্রী বোঝাই করে বকচর গ্রামে নিয়ে যায়। আবার বকচর গ্রাম থেকে যাত্রী বোঝাই করে চিতলিয়া খেয়াঘাটে ফিরে আসেন। এভাবে রাত অবধি খেয়াঘাটে যাত্রী পারাপার করে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে সংসারের খরচ মেটাচ্ছেন জিয়াসমিন। রজতরেখা নদীর এই খেয়া পারাপারে একেকজন যাত্রী ১০ টাকা করে দিয়ে থাকেন। সারাদিন ৫০ থেকে ৬০ জন যাত্রী পারাপার করে থাকেন এই নারী।
তথ্যসূত্র: ইত্তেফাক ডটকম ডটবিডি।