জমে উঠেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। মেলার ১৭তম দিন শুক্রবার মেলা প্রাঙ্গণে মানুষের ঢল নামে। সকালে গেট খুলে দেয়ার আগেই মেলায় প্রবেশের জন্য মানুষজনকে সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। গৃহস্থালি সামগ্রী, নিত্যপণ্য ও দেশীয় ইলেকট্রনিক্স পণ্যের প্যাভিলিয়নে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় বেশি ছিল। প্রথমদিকে অনেকে ঘুরতে এলেও এখন সবাই সাধ্যমতো কেনাকাটা করছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, দেশীয় ইলেকট্রনিক্স প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যমুনা ইলেকট্রনিক্স (১৫নং প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন) ক্রেতাদের জন্য সর্বোচ্চ ছাড় দিচ্ছে। মাত্র ১২ হাজার টাকায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি এলইডি টিভি, ১৮ হাজার ৮১০ টাকায় ১৪৮ লিটারের ফ্রিজ বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। একই সঙ্গে পণ্যের মডেলভেদে ২২ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া প্রতি ১০ হাজার টাকার কেনাকাটায় এক হাজার টাকা ক্যাশ ভাউচার ও প্রতি হাজারে একশ’ টাকার গিফট ভাউচার দিচ্ছে। পরবর্তী সময়ে যমুনা ইলেকট্রনিক্সের যে কোনো পণ্য কিনলে ক্যাশ ভাউচার ব্যবহার করা যাবে। আর গিফট ভাউচার যমুনা ফিউচার পার্কের বিনোদন কেন্দ্রগুলোর (কার্নিভাল, ফিউচার ওয়ার্ল্ড, প্লেয়ার্স ক্লাব ও ব্লক বাস্টার সিনেমাস) টিকিট কেনার সময় ব্যবহার করা যাবে।
মেলায় নগদ টাকার পাশাপাশি যমুনা ইলেকট্রনিক্স প্রতিটি পণ্য ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ৩-৬ মাসের কিস্তিতে কেনার সুযোগ দিয়েছে। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংকের আমেরিকান এক্সপ্রেস ও ভিসা কার্ড, ইস্টার্ন ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে পণ্য কেনা যাবে।
যমুনা ইলেকট্রনিক্স প্যাভিলিয়ন ইনচার্জ সত্যজিৎ রায় যুগান্তরকে বলেন, সর্বোচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার করে যমুনার প্রতিটি পণ্য বানানো হয়। এ কারণে অল্পদিনেই যমুনার এলইডি টিভি, ফ্রিজ, এসি, মোটরসাইকেল ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এক সময় দেশে শুধু সাদা ও গ্রে কালারের ফ্রিজের প্রচলন ছিল। যখন যমুনা ইলেকট্রনিক্স ডিপ ফ্রিজ ও ফ্রিজ উৎপাদনে এলো, তখন থেকেই ফ্রিজের রং ও ডিজাইনে বৈচিত্র্য আনা শুরু করে। এখন যমুনার দেখাদেখি অনেক দেশীয় প্রতিষ্ঠান কালারফুল ফ্রিজ বানাচ্ছে। যমুনার ফ্রিজ ও ডিপ ফ্রিজের শতাধিক রং ও স্টাইলিশ ডিজাইন রয়েছে। এ ছাড়া দেশ সিরিজের ফ্রিজও ক্রেতার কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে।
তার মতে, দেশের ৭৫ শতাংশ ক্রেতা ফ্রিজ কিনতে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। বিক্রয়কর্মীদের আকর্ষণীয় কথায় মজে এবং বাইরের চাকচিক্য দেখে ফ্রিজ কেনে। এ কারণে অল্পদিনেই প্রতারিত হয়। অথচ ফ্রিজ কেনা উচিত বৈশিষ্ট্য দেখে। এখন দেশেই আন্তর্জাতিক মানের ফ্রিজ উৎপাদন হচ্ছে, কিনলে প্রতারিত হবেন না।
মেলা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ৯টায় উন্মুক্ত করার পর থেকেই দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে থাকে। টিকিট কাউন্টারে বেলা বাড়ার সঙ্গে লাইনের সারিও দীর্ঘ হতে থাকে। দুপুরেই মেলা কানায় কানায় ভরে ওঠে। সব স্টল-প্যাভিলিয়নে ছিল ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড়। মেলার পরিবেশ স্বাভাবিক ও শৃঙ্খলার মধ্যে রাখতে ভেতরে-বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বেগ পোহাতে হয়েছে।
বিকালে মেলায় প্রবেশের জন্য গাড়ির ভিড় বাড়তে থাকে। এ কারণে মূল সড়কের দুই দিকে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেকে মেলায় প্রবেশের জন্য চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে হাঁটতে দেখা গেছে। আর মিরপুরের বাসিন্দাদের খামারবাড়ি থেকে হেঁটে মেলা প্রাঙ্গণ পার হয়ে আবারও বাসে চড়তে দেখা গেছে।
এবার বাণিজ্য মেলার ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পশ্চিম ট্রাফিক বিভাগ। মেলা প্রাঙ্গণে দায়িত্বরত ট্রাফিক কনস্টেবল জানান, মেলা ১০টা থেকে শুরু হলেও সকাল ৯টা থেকেই গাড়ির চাপ বাড়ছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় এ অবস্থা।