দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্যামসাং নন-মেমোরি চিপ ব্যবসায় বছরে ৯৬০ কোটি ডলার (১১ ট্রিলিয়ন ওন) বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত চিপ ব্যবসায় প্রতি বছর এ পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হবে। এ বিনিয়োগের ফলে ১৫ হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করছে স্যামসাং। খবর রয়টার্স।
বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজার খারাপ সময় পার করছে। স্মার্টফোন উৎপাদন ও সরবরাহে এখনো বিশ্বের এক নম্বর প্রতিষ্ঠান স্যামসাং। কিন্তু বিশ্বের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বাজারে ডিভাইস বিক্রি বিবেচনায় শীর্ষস্থান হারিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে স্যামসাংয়ের কৌশলগত বাজার চীন অন্যতম। দেশটিতে স্মার্টফোন সরবরাহে এখন শীর্ষে রয়েছে স্থানীয় ব্র্যান্ড হুয়াওয়ে।
এছাড়া ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার হ্যান্ডসেট বাজারেও খুব বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে নেই স্যামসাং। যে কারণে ব্যবসা কৌশলে পরিবর্তন এনেছে প্রতিষ্ঠানটি। এরই অংশ হিসেবে স্মার্টফোনের পাশাপাশি নন-মেমোরি চিপ ব্যবসায় অবস্থান দৃঢ় করার পরিকল্পনা নিয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মেমোরি চিপ নির্মাতা স্যামসাং। কিন্তু নন-মেমোরি চিপ ব্যবসা খাতে পিছিয়ে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যে কারণে নন-মেমোরি চিপ ব্যবসায় আগামী ১২ বছরে মোট ১১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার (১৩৩ ট্রিলিয়ন ওন) বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস। এ বিনিয়োগের মাধ্যমে নন-মেমোরি সেমিকন্ডাক্টর ব্যবসার পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক চিপ উৎপাদন কার্যক্রম জোরদার করবে প্রতিষ্ঠানটি।
সেমিকন্ডাক্টর বিভাগে বিনিয়োগের অংক স্যামসাংয়ের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়নি। বিশ্লেষকদের ধারণা, মোবাইল বিভাগের পাশাপাশি স্যামসাংয়ের রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছে চিপ বিভাগ। যে কারণে সেমিকন্ডাক্টর বিভাগে আগামী এক যুগ বার্ষিক সর্বোচ্চ ১০ ট্রিলিয়ন ওন বিনিয়োগ করবে প্রতিষ্ঠানটি।
এইচআই ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটিজের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক সং মাইউং-সাপ জানিয়েছেন, নন-মেমোরি চিপ ব্যবসা খাতে আগ্রাসী নীতি অনুসরণ করছে স্যামসাং। ক্রমবর্ধমান এ ব্যবসা খাতে বিনিয়োগে উদারনীতি অনুসরণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু একটা বিষয় নিশ্চিত নয়, ভবিষ্যতে নন-মেমোরি চিপের চাহিদা কেমন থাকবে এবং বাজার পরিস্থিতি কেমন দাঁড়াবে। কাজেই এ ব্যবসা খাতে স্যামসাংয়ের বিনিয়োগ বিষয়ে এত আগাম কোনো পূর্বাভাস দেয়া যাচ্ছে না।
বিবৃতিতে স্যামসাং জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় তাদের কর্মী সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে। তারা ৬০ ট্রিলিয়ন ওন নতুন করে উৎপাদন অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় করবে এবং বাকি অর্থ স্থানীয়ভাবে গবেষণা এবং উন্নয়নে (আরঅ্যান্ডডি) ব্যয় করবে। বৈশ্বিক মেমোরি সেমিকন্ডাক্টর খাতে এরই মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে স্যামসাং। নতুন বিনিয়োগের ফলে নন-মেমোরি চিপ বাজারে নেতৃত্বদানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রেন্ডফোর্সের তথ্যমতে, নন-মেমোরি চিপ বাজারের ১৯ শতাংশ দখলে নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে স্যামসাং। এ চিপ বাজারে শীর্ষে রয়েছে তাইওয়ানভিত্তিক সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা টিএমএমসি। স্যামসাং মেমোরি ও নন-মেমোরি সেমিকন্ডাক্টরের পাশাপাশি এক্সিনোস প্রসেসর উৎপাদন করে আসছে। এ প্রসেসর প্রতিষ্ঠানটির বেশকিছু হ্যান্ডসেটে ব্যবহার করা হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নন-মেমোরি চিপ ব্যবসা সম্প্রসারণে দেশটির সরকারের সমর্থন পাবে স্যামসাং। অবশ্য কী ধরনের সমর্থন দেয়া হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি তিনি। এ বিষয়ে দেশটির সরকারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে আগামী মাসের প্রথম দিকে।