1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

নিজ হাতে তিলে তিলে গড়া প্রতিষ্ঠান থেকে বিতাড়িত সিইও

নিজ হাতে তিলে তিলে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পর সেখান থেকে বিতাড়িত হওয়ার মতো ঘটনা করপোরেট জগতে হরহামেশাই দেখা যায়। এ দলে রয়েছেন অ্যাপলের স্টিভ জবস, উবারের ট্র্যাভিস কালানিকসহ অনেকেই। কিন্তু তারা ঠিকই সামলে নিয়েছেন। নতুন উদ্যমে শুরু করেছেন নতুন উদ্যোগ। অনেকে অবশ্য আগের কোম্পানিতে ফিরেছেনও।

স্টিভ জবস: প্রযুক্তি দুনিয়ার প্রবাদপুরুষ স্টিভ জবস। তিনিও কিন্তু অ্যাপলে চাকরির নিশ্চয়তা পাননি। পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বিরোধে ১৯৮৫ সালে কোম্পানি ছাড়তে হয় তাকে। তত্কালীন সিইও জন সুলির সঙ্গে বিরোধেই নাকি এমটি ঘটেছিল। এরপর স্টার্টআপ নেক্সট কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন এবং দ্রুতই সফল প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলেন। এ ঘটনার ১২ বছর পর নেক্সট কম্পিউটারকে কিনে নেয় অ্যাপল। জবস ফিরে আসেন পুরনো কর্মক্ষেত্রে। মাসখানেকের মধ্যেই তত্কালীন (১৯৯৭ সাল) সিইও গিল অ্যামেলিওকে সরিয়ে সিইও হন তিনি।

ট্র্যাভিস কালানিক: ২০১৭ সালের জুলাইয়ে রাইড শেয়ারিং কোম্পানি উবারের সিইও পদ থেকে ইস্তফা দেন ট্র্যাভিস কালানিক। এ সিদ্ধান্ত নেয়ার বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই কোম্পানিটি নানা ধরনের কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে। এর জেরে পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না। একপর্যায়ে উবার বোর্ডের চাপে পদত্যাগ করেন তিনি।

কালানিক ২০১৮ সালের মার্চে ‘টেন ওয়ান হানড্রেড’ নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন এবং কোম্পানিটি রিয়েল এস্টেট স্টার্টআপ সিটি স্টোরেজ সিস্টেমের অধিকাংশ শেয়ার কিনেছে বলে ঘোষণা দেন। এর এক বছর পরই কালানিক ও সিটি স্টোরেজ সিস্টেমস ক্লাউড কিচেনস নামে একটি খাবার সরবরাহের স্টার্টআপ চালু করে।

জ্যাক ডোরসি: ইভ উইলিয়ামসকে সঙ্গে নিয়ে ২০০৬ সালে টুইটার প্রতিষ্ঠা করেন জ্যাক ডোরসি। দুই বছর পর এই উইলিয়ামসই তাকে সিইওর পদ থেকে সরিয়ে দেন। অথচ এই মাইক্রোব্লগের মাধ্যমটির আইডিয়া ডোরসিই দিয়েছিলেন। নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে ২০০৯ সালে ৩ হাজার ১০০ কোটি ডলারে মোবাইল পেমেন্ট প্লাটফর্ম স্কয়ার প্রতিষ্ঠা করেন ডোরসি।

টুইটারের চাকরি হারানোর পর ফেসবুকের সিইও মার্ক জাকারবার্গ নাকি তাকে লোভনীয় অফার দিয়েছিলেন বলে শোনা যায়। ২০১৫ সালে অন্তর্বর্তীকালীন সিইও হিসেবে ডোরসিকে টুইটারে ফিরিয়ে আনা হয়। যদিও পদবি থেকে ‘অন্তর্বর্তীকালীন’ শব্দটি ঝেড়ে ফেলতে বেশি দিন লাগেনি তার। বর্তমানে টুইটার ও স্কয়ার দুটি কোম্পানিরই সিইও ডোরসি।

পলমার লাকি: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মালিকানাধীন ওকোলাস ভিআর বিভাগ পলমার লাকির হাতেই প্রতিষ্ঠিত। মাত্র ২৬ বছর বয়সে এ দায়িত্ব পান তিনি। ২০১৭ সালে ফেসবুক থেকেই তাকে চলে যেতে হয়। হিলারি ক্লিনটনবিরোধী একটি মেমে গ্রুপে অর্থায়নের অভিযোগ ওঠার পর এই পরিণতি হয়। ওকোলাস ও ফেসবুক ছাড়ার পর লাকি প্রতিষ্ঠা করেন অ্যান্ডোরিল। সরকারের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি ‘ভার্চুয়াল’ সীমান্ত নির্মাণ করছেন তিনি, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে পরিচালিত হবে।

পার্কার কনরাড জিনফিটস: ২০১৩ সালে ক্লাউডভিত্তিক সফটওয়্যার কোম্পানি জেনেফিটস প্রতিষ্ঠা করেন পার্কার কনরাড। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানিটি মূলত সফটওয়্যারের মাধ্যমে মানবসম্পদ বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করে থাকে। তবে বিভিন্ন এজেন্টকে দেয়া লাইসেন্সের প্রক্রিয়া নিয়ে জেনেফিটসের বিরুদ্ধে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

এছাড়া একটি তদন্তে প্রমাণিত হয়, বিভিন্ন রাষ্ট্রে স্বাস্থ্য বীমা বিক্রির জন্য অননুমোদিত দালালদের সহায়তা নেয় কোম্পানিটি। এসব বিতর্কের জের ধরেই ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জেনেফিটস থেকে পদত্যাগ করেন পার্কার। জেনেফিটস থেকে সরে আসার পর ২০১৭ সালে রিপলিং নামে এক উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি।

জেরি ইয়াং ইয়াহু: ১৯৯৪ সালে তাইওয়ানের বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জেরি ইয়াং প্রতিষ্ঠা করেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সার্চ ইঞ্জিন ইয়াহু। ২০০৭ সালে তিনি কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর বছরখানেক পরই মাইক্রোসফটের একীভূত প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন তিনি। ঘটনাটির পর ইয়াহুর শেয়ারদরে ব্যাপক ধস নামে এবং বিনিয়োগকারীরা অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েন।

এ সময় পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা পদত্যাগের জন্য জেরিকে বারবার চাপ দিতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত তিনি চাপের মুখে নতিস্বীকার করে নেন। তবে সিইও হিসেবে পদত্যাগ করলেও ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি ইয়াহুর বোর্ড সদস্য ছিলেন। ইয়াহু থেকে চলে আসার পর নিজের বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান এএমই ক্লাউড ভেঞ্চারসের মাধ্যমে কয়েক ডজন নতুন স্টার্টআপে বিনিয়োগ করেন জেরি। ২০১৪ সাল থেকে তিনি চীনাভিত্তিক ই-কমার্স কোম্পানি আলিবাবার বোর্ডে নিয়োজিত রয়েছেন।

অ্যান্ড্রু ম্যাসন গ্রুপন
২০০৮ সালে অ্যান্ড্রু ম্যাসনের হাত ধরে আত্মপ্রকাশ করে ডিসকাউন্ট সাইট গ্রুপন। শিকাগোভিত্তিক গ্রুপন তার ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের কম খরচে বিভিন্ন স্থানীয় ব্যবসায়িক চুক্তি ও স্কলারশিপ পাইয়ে দেয়। শুরুতে কোম্পানিটি দুর্দান্তভাবে এগোতে থাকলেও শেয়ারবাজারে নিবন্ধিত হওয়ার পর কোম্পানিটির পতন শুরু হয়। গ্রুপনের প্রবৃদ্ধিতে হতাশ হয়ে পড়েন বিনিয়োগকারীরা।

২০১২ সালের ডিসেম্বর সিএনবিসির প্রতিবেদনে ম্যাসনকে ‘বছরের সবচেয়ে জঘন্য সিইও’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এর কয়েক মাস পরই ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিজ কোম্পানি থেকে ম্যাসনকে বিতাড়িত করা হয়। গ্রুপনে নিজ অধ্যায় সমাপ্ত হওয়ার পর দুটি নতুন স্টার্টআপ শুরু করেন ম্যাসন। প্রথমটি ছিল স্মার্টফোনের জন্য অডিও ট্যুর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডেট্যুর। ২০১৮ সালের এপ্রিলে এটি বিক্রি হয়ে যায়।

মার্টিন এবারহার্ড টেসলা
মার্ক টারপেনিংকে সঙ্গে নিয়ে ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অটোমোটিভ ও এনার্জি কোম্পানি টেসলা ইনকরপোরেশন গড়ে তোলেন মার্টিন এবারহার্ড। ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি কোম্পানিটির সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কোনো কারণ না দেখিয়েই সিইওর পদ থেকে সরিয়ে দেয় টেসলার পরিচালনা পর্ষদ।

বর্তমানে এবারহার্ড টিভেনি নামে নতুন একটি স্টার্টআপ চালু করেছেন। কোম্পানিটি ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য ব্যাটারি সিস্টেম এবং অন্যান্য জিনিসপত্র তৈরি করে। সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও বিজনেস ইনসাইডার

More News Of This Category