পাতিপুকুরের নিত্যদা ব্যবসা শুরু করেছেন। কাপড়কাচা ডিটারজেন্ট গুঁড়োর। নাম দিয়েছেন “মিল্ক-শাইন” (মিল্ক-শাইন অর্থ দুধের মত উজ্জ্বল)। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে পাঠাচ্ছেন সেগুলো। মার্কেটিংয়ের দায়িত্ব একটি কোম্পানিকে দিয়েছেন। ডিটারজেন্টের চাহিদা যে খুব বেশী এমনটা না, ঠিকঠাক চলছিলো আর কি। বছরখানেকে বিক্রীবাটা মোটামুটি।
হঠাৎ করে বদলে গেলো দিন। চাহিদা বাড়তে লাগলো হুহু করে। সাপ্লাই দিয়ে উঠতে পারছেন না। বছরে যে ব্যবসা কয়েক লাখের মধ্যে ছিলো, সেটাই বেড়ে গিয়ে কয়েক কোটিতে দাঁড়িয়ে গেলো। নিত্যদা ব্যাঙ্ক থেকে প্রচুর টাকা লোন নিয়ে আলাদা ফ্যাক্টরি খুললেন। প্রচুর মানুষকে চাকরীতে নিলেন। নিজের জন্য পিএ রাখলেন। গাড়ী হলো ড্রাইভার সহ। বাড়ী হলো মার্বেল সহ। বাগানবাড়ী হলো। বৌ-বাচ্চা ছিলো, বান্ধবী হলো কয়েকজনা। তাদের জন্য আবার ফ্ল্যাট হলো, সে এলাহী আয়োজন যাকে বলে।
এবার নিত্যদা টিভিতে বিজ্ঞাপন দিলেন ডিটারজেন্টের। সদ্য হাল্কা প্রেমে লটকেছেন এমন এক স্থুলকায় বান্ধবীকে দিয়ে শাড়ী উড়িয়ে ডিটারজেন্টের দারুন একটা বিজ্ঞাপন তৈরী করলেন এবং বিজ্ঞাপনটা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলোতে দেখাতে শুরু করে দিলেন।
আশ্চর্য, বিজ্ঞাপন আরম্ভ হওয়ার দিন সাতেকের মধ্যেই ডিটারজেন্টের বিক্রী সাংঘাতিক ভাবে কমে গেলো। ডিস্ট্রিবিউটার্সরা মাল তোলা বন্ধ করে দিলেন। দোকানদাররাও মাল তুলছেন না। খবর নিয়ে জানা গেলো, প্রায় বিক্রী নেই ডিটারজেন্টের। মাথায় বাজ ভেঙে পড়লো নিত্যদার। ব্যবসা প্রায় যাবো যাবো করছে, বান্ধবীরাতো আগেই ভেগেছে। ফ্ল্যাট বেচে দিতে হলো গোটা দুই। ড্রাইভার ছাড়িয়ে দিলেন। পিএ-কে টাটা দিলেন।
হঠাৎ কি মনে হলো নিত্যদার। তিনি সেইসব গ্রামগুলোয় গেলেন, যেখানে তার কোম্পানির ডিটারজেন্ট পাউডার এতোদিন বিক্রী হতো হুড়মুড়িয়ে। গিয়ে তো প্রায় অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা। জানতে পারলেন ওখানকার মানুষগুলো এতোদিন বাচ্চাদের গুঁড়ো দুধ ভেবে প্যাকেটটা কিনতেন। দামেও সস্তা ছিলো। ফেনাও হতো বেশ। নামটাও ছিলো “মিল্ক-শাইন”, সঙ্গে আবার একটা দুধ সাদা গরুর ছবিও ছিলো। আর তাই সরল মানুষগুলো সরল ভাবেই এতোদিন খেয়ে যাচ্ছিলো মিল্ক ফ্লেভারের ডিটারজেন্ট দুধ। কিন্তু টিভিতে বিজ্ঞাপন দিয়েই হলো সর্বনাশ। যবে থেকে ওরা জানতে পারলো যে এটা দুধ নয়, সেদিন থেকে আর কেউ কিনছে না।
আজকাল নিত্যদা জুতোর ক্রীম বেচছেন। তার কাছে খবর আছে আফ্রিকায় উগান্ডার আদিবাসীরা পাউরুটিতে মাখিয়ে জুতোর ক্রীম খেতো। আসলে তারা জানতোই না ওটা জুতোর জন্য। খেতেও মিষ্টি মিষ্টি ছিলো। আর যে কোম্পানির ক্রীম, তারাতো ফুলে ফেঁপে একাকার। তাই নিত্যদা জুতোর ক্রীম বেচছেন আজকাল। যদি এখানেও…!
সংগৃহীত সূত্র: ইন্টারনেট।