১. বেতন : একের পর এক জরিপে উঠে এসেছে, কর্মীদের কাছে বেতনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর কেনই বা হবে না? সবাই নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী বেতন পাওয়ার প্রত্যাশা করেন। সুতরাং নিয়োগকর্তাদের উচিত সর্বোচ্চ সামর্থ্য অনুযায়ী কর্মীদের বেতন-বোনাস দেওয়া।
২. উন্নত স্বাস্থ্যবীমা : গ্লাসডোরের সাম্প্রতিক গবেষণায় এটি কর্মীদের জন্য শীর্ষ উপকারিতা হিসেবে উঠে এসেছে। স্বাস্থ্যবীমার মাধ্যমে কর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়ানো যায়। এ ছাড়া স্বাস্থ্য ভালো থাকলে কর্মীদের উৎপাদনশীলতাও অটুট থাকে। আর নিয়োগকর্তারাও যে কর্মীদের সুস্বাস্থ্য এবং ভালো থাকার ব্যাপারে যত্নবান তা প্রকাশিত হয় স্বাস্থ্যবীমা প্রদানের মধ্য দিয়ে; যা কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধিতেও সহায়ক হয়।
৩. কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য : সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, কর্মীরা বেতনের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেন কাজের সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য স্থাপনকে। এই ভারসাম্যের অভাবে প্রচুরসংখ্যক কর্মী তাঁদের বর্তমান চাকরি ছেড়ে দেওয়ার জন্য নতুন চাকরির সন্ধান করেন। কোনো কর্মীকে তাড়ানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো তাঁকে দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করানো।
কারণ অফিসে বেশি সময় দিতে গিয়ে ব্যক্তিগত আগ্রহ, শখ এবং পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে কাটানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় না। এর ফলে অনেকে কম সময় দিতে হবে এমন চাকরির সন্ধান করেন। সুতরাং কর্মীদের ধরে রাখতে হলে তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য যেন নষ্ট না হয় সেদিকেও নিয়োগকর্তাদের খেয়াল রাখতে হবে। এ জন্য কর্মঘণ্টা একটু শিথিল রাখতে হবে। এতে যে নিয়োগকর্তাদের ব্যয়ে খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে তেমনটা ভাবা ঠিক নয়।
৪. অগ্রগতি এবং পেশাগত উন্নয়নের সুযোগ : গ্যালাপের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, এখনকার প্রজন্মের ৮৭ শতাংশ বলেছেন, কর্মক্ষেত্রে পেশাগত উন্নয়নের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যে কর্মক্ষেত্রের পেশাগত উন্নয়ন কর্মসূচি সন্তোষজনক সেখানে নতুন প্রজন্মের কর্মীরা কাজ করতে বেশি আগ্রহী থাকেন। সুতরাং নিয়োগকর্তাদের উচিত কর্মীদের পেশাগত দক্ষতা বাড়ানো এবং উন্নয়নের ব্যাপারে বিশেষভাবে যত্নশীল হওয়া।
কোনো কম্পানির নিজস্ব গণ্ডির ভেতরেই পেশাগত অগ্রগতির সুযোগ থাকলে কর্মীরা সহজে সে কম্পানি ছেড়ে যান না। গ্যালাপের জরিপে দেখা গেছে, ৯৩ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁরা তাঁদের আগের চাকরিটি ছেড়েছেন প্রমোশন না হওয়ায়। কম্পানির ভেতরেই পেশাগত উন্নতি ও অগ্রগতির সুযোগ থাকলে কর্মীদের দীর্ঘদিন ধরে রাখা সম্ভব হবে।
৫. অর্থপূর্ণ ও ব্যক্তিগত লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল : অনেক কর্মীই এমন চাকরি খোঁজেন যাতে তাঁর জীবনটা অর্থপূর্ণ হবে এবং যার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যেরও মিল আছে। তবে এখনো বেশির ভাগ কর্মীই চাকরি নেওয়ার ক্ষেত্রে অর্থ উপার্জনের বিষয়টিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। কিন্তু নতুন প্রজন্মের ৫০ শতাংশ কর্মীই নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং মূল্যবোধের সঙ্গে মিল রেখে চাকরি খোঁজেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা কম বেতনে কাজ করতেও প্রস্তুত আছেন।
এখনকার প্রজন্মের কর্মীরা প্রধানত সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল এবং সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে আগ্রহী এমন কম্পানিতেই কাজ করতে বেশি পছন্দ করেন। ফলে এখনকার প্রজন্মের আস্থা অর্জন করতে হলে কম্পানিগুলোকে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা অবলম্বন করতে হবে।
এ ছাড়া সমাজে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারকারী এবং সমাজের বৃহত্তর কল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর প্রতিও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। সুতরাং প্রতিভাবান কর্মীদের ধরে রাখতে হলে বেতন বাড়ানোর পাশাপাশি নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং সামাজিক তত্পরতায়ও যুক্ত হতে হবে। ফোর্বস অবলম্বনে মাহবুবুল আলম তারেক তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।