আমাদের দৈনন্দিন জীবন পরিচালনা করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কঠিন ও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হয়। সঠিক উপায়ে এসব প্রতিক্রিয়ার মোকাবিলা করতে পারলে, কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না বরং আমাদের সক্ষমতা ও যোগ্যতা প্রমাণিত হয়। কিন্তু যদি সঠিকভাবে এসব কঠিন প্রতিক্রিয়া মোকাবিলা না করা হয় তবে তা বড় ধরনের বিপত্তি টেনে নিয়ে আসতে পারে। তাই আপনি এ আর্টিকেলটি থেকে ৬টি টিপস জেনে রাখুন। যার মাধ্যমে কঠিন প্রতিক্রিয়া সহজেই শুনতে ও মোকাবিলা করতে সক্ষম হবেন।
১. থামুন: মানব মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ন একটি অংশ হলো অ্যামিগডালা। বাদামের মতো আকৃতির এ জিনিসটিই আমাদের ভয় এবং আতঙ্কের জন্য দায়ী। ভয়, আতঙ্ক, আনন্দ, দুঃখ, হতাশা এমন নানা অনুভূতির জন্ম হয় এ অ্যামিগডালায়। সাধারণত মানুষের অ্যামিগডালা নিখুঁত থাকে, সে কারণে ভয়ের প্রবৃত্তি সাধারণত মানুষের মজ্জাগত। তবে যাদের অ্যামিগডালা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তারা সাধারণত অকুতোভয় স্বভাবের হয়ে থাকে।
যখন আমরা কঠিন প্রতিক্রিয়া শুনি তখন আমাদের মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা আলোড়িত হয়। আপনি যদি আপনার কর্মক্ষেত্রে বা কোনো কাজে কঠিন প্রতিক্রিয়া পান, তবে এমতাবস্থায় আপনি নিজেকে শান্ত রাখুন। সমালোচনার বিপরীতে পাল্টা কোনো প্রতিক্রিয়া করা থেকে নিজেকে সংযত রাখুন। সম্পূর্ণ বার্তাটি মনোযোগ দিয়ে শুনুন, সময় নিয়ে চিন্তাভাবনা করে আপনার মন্তব্য ব্যক্ত করুন। কারণ তাৎক্ষণিকভাবে কঠিন প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে আপনার মন্তব্য জানাতে গিয়ে বিব্রতকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারেন। গুণীজনেরাও বলে থাকেন, শান্ত মেজাজের জ্ঞান ও শিক্ষা উত্তেজিত মুহূর্তের জ্ঞান, শিক্ষা ও মন্তব্যের তুলনায় অধিক কার্যকর।
২. ধন্যবাদ দিন: আমি জানি আপনি কোনো কাজে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া শুনতে প্রত্যাশা করেন না। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হয়। আপনি আপনার কাজ ভালোভাবে করার পরও কঠিন প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতেই পারেন। তাই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পর আপনি সেটা কীভাবে মোকাবেলা করবেন, সে বিষয়ে নিজেকে সর্বদাই প্রস্তুত রাখতে হবে। প্রতিক্রিয়া সঠিক উপায়ে মোকাবেলা না করতে পারলে, তবে তা আপনার জন্য বড় ধরনের ক্ষতি বয়ে নিয়ে আসতে পারে।
তাই আপনি কারো থেকে কঠিন প্রতিক্রিয়া পেলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে তাকে ধন্যবাদ দিন। এতে তার সাথে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা করার পথ প্রশস্ত হবে। এবার আলোচনার মাধ্যমে সহজেই আপনি বিষয়টি মিমাংসা করতে সক্ষম হবেন। কিন্তু যদি তাকে ধন্যবাদ না দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পাল্টা আপনার প্রতিক্রিয়া জানাতেন, তবে তা আপনার জন্য অধিক খারাপ কোনো ফলাফল বয়ে নিয়ে আসতে পারতো।
৩. সত্যতা অনুসন্ধান করুন
ধরুন, আপনি যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেলেন, তা সম্পূর্ণ সত্য নাও হতে পারে। কিন্তু তা যে ১ শতাংশ হলেও সত্য তা নিজেকে বিশ্বাস করাতে চেষ্টা করুন। আপনি হয়তো প্রতিক্রিয়া পেলেন, “আপনি সবসময় দেরি করে অফিসে আসেন” এটা হয়তো সম্পূর্ণ সঠিক না। কিন্তু আপনি আজ নিশ্চয়ই দেরি করে অফিসে এসেছেন, এ কারণেই এ ধরনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেলেন, তাই ১ শতাংশ হলেও এ প্রতিক্রিয়ার সত্যতা রয়েছে।
আপনি যখন সত্যকে মেনে নিতে পারবেন, তখন নিজেকে সহজেই সংশোধন করে নিতে পারবেন। পরবর্তীতে আর এ ধরনের প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে না। কিন্তু যদি আপনি মনে করেন, এ প্রতিক্রিয়ার কোনো সত্যতা নেই, আপনার উপরে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে; এমন ধরনের মনোভাবের ফলে আপনি নিজেকে তো সংশোধন করতেই পারবেন না বরং আপনার ভুলের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকবে। যা আপনাকে পরবর্তী সময়ে আরো কঠোর কোনো প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি করতে পারে।
আমাদের লিডারশিপ প্রোগ্রামে প্রতিক্রিয়া মোকাবেলা করতে তিনটি কৌশল অবলম্বন করার ব্যাপারে বিশেষ জোর প্রদান করা হয়। প্রথমত, আপনি প্রতিক্রিয়াটি লিখে ফেলুন। দ্বিতীয়ত, প্রতিক্রিয়াটিতে কতোটুকু মিথ্যা আছে বলে আপনি বিশ্বাস করেন তা লিখে ফেলুন। তৃতীয়ত, প্রতিক্রিয়ায় কতোটুকু সত্যতা আছে বলে মনে করেন তা লিখে ফেলুন। এভাবে প্রতিক্রিয়ার সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হলে তা আপনি সহজেই মোকাবিলা করতে সক্ষম হবেন।
৪. নিদর্শন অনুসন্ধান করুন: আপনি কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পর নিজেকে প্রশ্ন করুন, এমন ধরনের প্রতিক্রিয়া আগেও পেয়েছিলেন কি না! যদি পেয়ে থাকেন তবে তা কীভাবে মোকাবিলা করেছিলেন? পূর্বের প্রতিক্রিয়া মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে কী কী ভুল করেছিলেন বা কতোটা সঠিক উপায়ে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছিলেন? তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। এবার বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে পূর্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন।
আর পূর্বেকার সময়ে এমন পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা না থাকলে, প্রয়োজনে আপনার পাশের অন্যকারো সাথে আলোচনা করুন। তাদের জীবনে এমন প্রতিক্রিয়া সামলানোর অভিজ্ঞতা থাকলে, তাদের কাছে থেকে তা শুনে আপনি শিক্ষা গ্রহণ করুন এবং কীভাবে আপনি আপনার পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন সে বিষয়ে নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। এতে কঠিন প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে আপনার মন্তব্য জানানোর ভঙ্গি কৌশলপূর্ণ ও সঠিক হওয়ার সম্ভবনা খুবই প্রবল রয়েছে।
৫. কৌতূহলের সাথে শুনুন: আপনি যখন কারো থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া শুনেন, তখন নিজেকে শান্ত ও চুপ রাখুন। আপনি যদি অন্যের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া শোনার সময় নিজেও কথা বলেন, তবে প্রতিক্রিয়া ভালোভাবে শুনতে পারবেন না এমনকি নিজের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার অপব্যাখাও তৈরি হতে পারে। যা আপনাকে আরো বেশি ঝামেলায় ফেলতে পারে।
তাই যখন প্রতিক্রিয়া শুনবেন, তখন কৌতূহল মন নিয়ে তা শ্রবণ করুন। এতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও আপনার মস্তিষ্কে ভালোভাবে ও সহজে বোধগম্য হবে। আর একটা কঠিন প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে আপনার প্রতিক্রিয়া কীভাবে জানাবেন তার কৌশল গ্রহণের পন্থাকে সহজ করে দিবে।
৬. প্রশ্ন করুন: প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার মাধ্যমে আপনার কাছে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পুরোপুরি বোধগম্য হয়ে যাবে। অনেক সময়ই কঠিন প্রতিক্রিয়াগুলো তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের মস্তিষ্ক ভালোভাবে বুঝে উঠতে পারে না। এমতাবস্থায় আপনার উচিৎ হবে প্রশ্ন করে সম্পূর্ণ বিষয়টাকে নিজের কাছে বোধগম্য করে তোলা।
প্রতিক্রিয়াই যদি ভালোভাবে বুঝতে না পারেন, তাহলে কীভাবে তা মোকাবিলা করবেন সে সিদ্ধান্ত কীভাবে নিবেন। তাই প্রশ্ন করার মাধ্যমে প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নিন। তারপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন, কীভাবে আপনি এ কঠিন প্রতিক্রিয়ার মোকাবিলা করবেন। এ ৬ টি টিপস মনে রাখলে আপনি যেকোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া খুব সহজেই মোকাবিলা করতে সক্ষম হবেন। তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।