আমি আপনার নতুন ব্যবসার প্রতি অভিবাধন জানাই এবং আমি জানি আপনার নতুন ব্যবসা শুরু করাটা অনেকটা উত্তেজনাময়। কিন্তু ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে রূপকথার পিছনে পড়ে যাবেন না বরং নিজেকে বিচক্ষণ ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলবেন এটাই আশা করি। যদি নিজের ব্যবসাকে দীর্ঘ মেয়াদে সফল দেখতে চান তবে নিচের চারটি মৌলিক বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখুন।
১। প্রথম ছয় মাসের জন্য যথেষ্ট পুঁজি হাতে রাখুন: ব্যবসায় লাভের মুখ দেখতে কতটা সময় নিবে তা ব্যক্তিগত ব্যবসার সাথে বড় শিল্পের সময়ের তারতম্য থাকতে পারে কিন্তু পরিচালনার মৌলিক বিষয়গুলো একই। প্রথম ছয় মাস ব্যবসায়ে সফল ভাবে টিকে থাকতে আপনার ব্যাংক হিসেবে যথেষ্ট টাকা রাখতে হবে।
নিজের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়ের জন্য একটি বাস্তব সম্মত বাজেট তৈরি করুন যেটা আপনাকে প্রথম কয়েক মাস ব্যবসায়ে টিকে থাকে সাহায্য করবে। বাজেটটি এমন ভাবে করুন যাতে পরিকল্পনার সাথে বেশি নড়চড় করতে না হয় আর তা হবে আপনার ব্যবসায়ের প্রথম ধাপের সফলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মাসিক ব্যয়ের একটি তালিকা তৈরি করে নিন আগে থেকেই যাতে আপনার ব্যয় সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা থাকে। যদি এরপর ও অতিরিক্ত ব্যয় চলে আসে তবে আপনার হাতের টাকা সেটাকে সামাল দিতে পারবে। মোট কথা হাতের পুঁজি আপনার ব্যবসা শুরুর প্রাথমিক ধাক্কা গুলোকে সামাল দিতে সাহায্য করবে যাতে আপনি শুরুতেই ব্যবসা গুটিয়ে না ফেলেন। আর এভাবেই ব্যবসায়ের প্রথম ধাপের সফলতা অর্জন করবেন।
২। প্রারম্ভিক গ্রাহকদের জন্য বিক্রি ও বাজারজাত কৌশল ঠিক করুন: উদ্যোক্তাদের জন্য একটা কথা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সব সময় মনে রাখা চাই, সেটা হল আপনার ব্যবসার প্রসারের জন্য প্রারম্ভিক গ্রহীতারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি হয়ত খুব ভালো পণ্য বা সেবা নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন কিন্তু প্রারম্ভিক গ্রাহক ছাড়া আপনার ব্যবসা ব্যর্থ হওয়ার পথে।
প্রারম্ভিক গ্রহীতাদের সঠিক সেবাদানের উপর নির্ভর করে আপনার ব্যবসার প্রসার গাণিতিক ভাবে হবে না জ্যামিতিক ভাবে হবে। আপনার বাজারজাতকরনের বাজেটের উপর নির্ভর করে একটি বাজারজাত পরিকল্পনা করুন যাতে আপনার প্রারম্ভিক গ্রহীতারা প্রাধান্য পায়। শুরু থেকেই এমন ভাবে যুক্ত থাকুন যাতে আপনার সাথে তাদের বিশ্বস্ততার সম্পর্ক গড়ে উঠে।
প্রাথমিক গ্রাহক অধিগ্রহণের ও একটা পরিকল্পনা করুন। পরবর্তীতে আপনার বিক্রির কাঠামো গড়ে তুলুন, বিক্রির কৌশল, চুক্তি, প্রস্তাবনা, পণ্যের তালিকা বা এমন কিছু যা গ্রাহকেরা ক্রয়ের সময় আপনার থেকে জানতে বা দেখতে চাইবে। মোট কথা শুরু থেকে বাজারজাত ও বিক্রির গ্রাহক বান্ধব কৌশলের জন্য পুরোপুরি প্রুস্তুত থাকুন।
৩। সহনশীলতা: উদ্যোক্তা হওয়ার সবচেয়ে কঠিন বিষয় হল আপনাকে অনেক বেশি সহনশীল হতে হবে, অনেক কঠোর পরিশ্রম করে ও নিজেকে স্থির রাখতে হবে। অনেকে এমনটি মনে করে যে উদ্যোক্তা হওয়া মানে আমি স্বাধীন, আসলে ব্যপার এত সহজ না। নিজের ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে আপনাকে ব্যবসার দৈনিক চাহিদা গুলো পূরণ করতে হবে।
ব্যবসায়ের প্রথম ছয় মাস থেকে এক বছর সময়টা খুবই কঠিন। ব্যবসা শুরুর আগেই আপনাকে যাচাই করে নিতে হবে আপনি শাররিক ও মানুসিক ভাবে এর জন্য প্রস্তুত আছেন কি না। এ সময়টাতে আপনাকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হতে পারে, সেজন্য প্রুস্তুত থাকুন।
দিনে লম্বা সময়ের কাজ, ব্যক্তিগত ছুটি ও অভ্যাস বিসর্জন, অনেক বেশি শাররিক ও মানুসিক চাপ অন্যান্য বিষয়গুলোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখুন। এসময়টাতে ব্যবসার জন্য নিজেকে পুরপুরি দিয়ে দিন। এসময়টাতে যদি আপনি নিজেকে ১০০ ভাগ দিতে না পারেন তবে ব্যবসা ও পরিপূর্ণটা অর্জন করতে পারবে না।
৪। ব্যবসায়ের ভিত্তি গঠন করুন: ব্যবসায়ের এসময়টাতে আপনার সম্পদের যোগানের সীমাবদ্ধতা থাকবে, সুতারাং আপনার সময় ও অর্থ সঠিক জায়গায় ব্যবহার করতে হবে। যদিও এসময়টাতে আপনার ব্যবসায় কি ঘটছে তা বুঝা আপনার জন্য সহজ হবে না কিন্তু আপনাকে প্রতিটি সংখ্যার প্রতি নজর রাখতে হবে। বিক্রির উৎসগুলো কোথা থেকে আসে সেগুলো পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে, পণ্য বা সেবার ক্রয় মূল্যের সাথে বিক্রয় মূল্যের তফাৎ, শতকরা কতভাগ মুনাফা তা পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।
যদিও আপনার প্রতিটি পণ্য ধরে এরকম হিসাব রাখা সহজ হবে না তবুও আপনাকে আপনার মত করে পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি ঠিক করে নিতে হবে। সহজ কথা হল আপনার ব্যবসা যেন একটি মজবুত ভিত্তির উপর দাড়ায়। অধিকাংশ ব্যবসা প্রথম বছরেই ব্যর্থতারমুখ দেখে, আশা করি আপনারটি সেরকম হবে না। দীর্ঘ মেয়াদে আপনার ব্যবসার শুভকামনা করছি। লেখক: এএইচএম জেড করিম তথ্যসূত্র: ইন্টানেট।