বিশ্বে পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। আর দেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ (৮৪ দশমিক ৬%) আসে এই শিল্প থেকে। এই শিল্পের উন্নয়নের মূলে আছে কম দামের শ্রমের প্রাচুর্য। তবে দক্ষ জনশক্তির অভাব এই শিল্পের বিকাশে মূল অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। তাই শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে সরকার এ লক্ষ্যে হাতে নিয়েছে ‘স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’ নামের একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় ৪১ হাজার ৩১০ জনকে প্রশিক্ষণ দিতে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ একটি চুক্তি সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সঙ্গে। প্রশিক্ষণ ক্লাস ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে বলে বিকেএমইএ সূত্র জানায়। তবে প্রতি এক থেকে ছয় মাস পরপর বিভিন্ন মেয়াদের বিভিন্ন বিষয়ের ক্লাস শুরু হবে। প্রশিক্ষণের জন্য কোনো ফি দিতে হবে না।
বিকেএমইএর এসইআইপি প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়ক রুপালি বিশ্বাস বলেন, নতুনদের এই শিল্পের জন্য দক্ষ করে তোলা এবং যাঁরা বর্তমানে কাজ করছেন, তাঁদের দক্ষতা আরও বৃদ্ধি করাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। রুপালি বিশ্বাস জানান, পুরো প্রশিক্ষণের বিষয়টিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যাঁরা বর্তমানে এ পেশায় নিয়োজিত আছেন, তাঁদের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধিসংক্রান্ত ‘আপ-স্কিলিং ট্রেনিং প্রোগ্রাম’ এবং নতুনদের জন্য থাকবে ‘ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং প্রোগ্রাম’ ও ‘স্কিল ট্রেনিং প্রোগ্রাম-অপারেটর ট্রেনিং’।
পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য: দক্ষতা বৃদ্ধিসংক্রান্ত এই প্রশিক্ষণটি হবে কারখানায়। লিন ম্যানুফ্যাকচারিং সিস্টেম, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং, গার্মেন্টস কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স সিস্টেম, ফেব্রিক অপটিমাইজেশন অ্যান্ড কাটিং টেকনোলজি, ফায়ার সেফটি ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট এবং সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স নর্মস—এই ছয়টি বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এর মধ্যে প্রথম তিনটি বিষয়ের প্রশিক্ষণের মেয়াদ হবে দুই মাস এবং পরবর্তী তিনটি বিষয়ের জন্য প্রশিক্ষণের মেয়াদ এক মাস। প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ঢাকা, সাভার, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন কারখানায়। শুধু তাঁরাই এই প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন, যাঁরা বর্তমানে এ পেশায় নিয়োজিত আছেন।
প্রতিবছর ১০ হাজার ২১০ জন করে তিন বছরে মোট ৩০ হাজার ৬৩০ জন এই প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পাবেন। এই প্রকল্পের আওতায় ৪১ হাজার ৩১০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রতি এক থেকে ছয় মাস পরপর বিভিন্ন মেয়াদের বিভিন্ন বিষয়ের ক্লাস শুরু হবে। প্রশিক্ষণের জন্য কোনো ফি দিতে হবে না
নতুনদের জন্য: নতুনদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে ও শ্রমিক পর্যায়ে। প্রশিক্ষণ সাজানো হয়েছে তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক—এ দুইভাবে। বিকেএমইএর নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তত্ত্বীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন কারখানায় ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে অ্যাপারেলস মার্চেন্ডাইজিং, সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স অ্যান্ড সিএসআর ইস্যুজ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড লিন ম্যানুফ্যাকচারিং, প্রোডাকশন প্ল্যানিং অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, টেক্সটাইল টেস্টিং অ্যান্ড ল্যাব ম্যানেজমেন্ট, ফায়ার সেফটি ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট, মার্কেট অ্যানালাইসিস অ্যান্ড এক্সপোর্ট প্রমোশন এবং টেকটিস অব কমার্শিয়াল অ্যাকটিভিটিস বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এই বিষয়গুলোর প্রশিক্ষণের ব্যাপ্তি হবে এক থেকে ছয় মাস। ডিগ্রি, স্নাতক অথবা ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি আছে যাঁদের, তাঁরাই এই প্রশিক্ষণ পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের ইনস্টিটিউট অব অ্যাপারেলস রিসার্চ অ্যান্ড টেকনোলজিতে (আইএআরটি) এই প্রশিক্ষণগুলো দেওয়া হবে। ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে প্রথম বছর ১ হাজার ৮৮০ জন এবং পরবর্তী দুই বছর ১ হাজার ৯৭০ জন করে তিন বছরে মোট ৫ হাজার ৮২০ জন প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন।
কর্মী পর্যায়ের ‘অপারেটর ট্রেনিং’ নামে একটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এই প্রশিক্ষণের মেয়াদ হবে এক মাস। যে কেউ লিখতে বা পড়তে পারলেই এই প্রশিক্ষণ পাওয়ার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের ওয়ার্কার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে। প্রথম বছর ১ হাজার ৮০ জন এবং পরবর্তী দুই বছর ১ হাজার ৮৯০ জন করে তিন বছরে মোট ৪ হাজার ৮৬০ জন কর্মী পর্যায়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পাবেন।
বাছাই প্রক্রিয়া: প্রতিটি বিষয়ে প্রতি ব্যাচে ৩০ জন করে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পাবেন বলে জানান রুপালি বিশ্বাস। একটি বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই ৩০ জনকে আসতে হবে। প্রতি ব্যাচ শুরুর আগে জাতীয় পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়। আবেদনকারীদের মধ্যে যোগ্যতার শর্ত পূরণকারীদের একটি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।
যোগাযোগ: বিকেএমইএ, প্ল্যানার্স টাওয়ার (পঞ্চম তলা) সোনারগাঁও রোড, বাংলামোটর, ঢাকা। ফোন: ৯৬৭০৪৯৮, ৯৬৭২২৫৭
তথ্যসূত্র: প্রথমআলো ডটকম।