আগামী অর্থবছরের বাজেট দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের ছাড় দিয়েছেন, আবার কর আদায়ের নতুন উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
আয় আড়াই লাখ টাকা হলেই কর: প্রস্তাব: ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ টাকা বহাল রাখা হয়েছে। গত কয়েক বছরে এই করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। প্রভাব: আপনার আয় যদি এক বছরে আড়াই লাখ টাকার বেশি হয়, তাহলে আপনাকে কর দিতে হবে। গত জুলাই থেকে এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত আপনার হিসাব করে দেখুন, কত আয় করলেন। যদি আড়াই লাখ টাকা কিংবা এর বেশি হয়, তাহলে প্রস্তুতি নিন। কর আপনাকে দিতেই হবে। কয়েক বছর ধরেই এই করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি করা হয়নি। এর ফলে অনেকের জন্য এই খবর সুখকর না–ও হতে পারে।
গতবার যাঁদের আয় আড়াই লাখ টাকার কাছাকাছি গিয়ে করজালের বাইরে ছিলেন। এবার তাঁদের বেতন–ভাতা বা আয় বাড়লেই কর দিতে হবে। ভুগতে হবে তাঁদের, করজালে আটকে যাবেন তাঁরা। প্রতিবছর করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধির দাবি থাকলেও তা করা হয়নি। করমুক্ত আয়সীমা না বাড়িয়ে করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে অর্থমন্ত্রী একটি ফাঁদ পেতেছেন। বাজেট বক্তৃতায় তিনি যুক্তি দিয়ে বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশে করমুক্ত আয়সীমা মাথাপিছু আয়ের সমান বা এর চেয়ে কম। দেশে করমুক্ত আয়সীমা মাথাপিছু আয়ের দ্বিগুণ।
প্রতিবন্ধীর পিতামাতারা স্বস্তি পেলেন: প্রস্তাব: প্রতিবন্ধী সন্তানের পিতামাতা ও আইনানুগ অভিভাবকদের করমুক্ত আয়সীমা আরও ৫০ হাজার টাকা বেশি হবে। এ ধরনের পরিবারের সব শ্রেণির করদাতার ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য হবে। প্রভাব: গতবার বাজেটে ২৫ হাজার টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছিল। এবার আরও ৫০ টাকা বাড়ানো হলো। এর ফলে প্রতিবন্ধী সন্তানের পিতামাতা বা আইনানুগ অভিভাবকদের একটু স্বস্তি মিলবে। তাঁরা প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্য আগের চেয়ে বেশি টাকা খরচ করতে পারবেন।
উবার-পাঠাওয়ে গাড়ি দিলে রিটার্ন বাধ্যতামূলক: প্রস্তাব: রাইড শেয়ারিং সেবায় মোটরযান প্রদানকারীদের রিটার্ন দাখিল এবং ১২ সংখ্যার টিআইএন নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রভাব: নিজের গাড়িটি দিনের অনেকটা সময় বসে থাকে, বাড়তি আয়ের পথ হিসেবে উবার, পাঠাও, ওভাই, সহজ, লেটস গোর মতো রাইড শেয়ারিং সেবায় দেওয়ার চিন্তা করছেন। একটু ভাবুন। আপনাকে টিআইএন নিতে হবে। আবার বছর শেষে রিটার্নও দিতে হবে। মূলত করদাতা বাড়াতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আনুতোষিক আয়ের (পারকুইজিট) সীমা বাড়ল: প্রস্তাব: পারকুইজিট হিসেবে অনুমোদনযোগ্য খরচের সীমা ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। আগে ছিল ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। প্রভাব: এতে চাকরিজীবীরা সুবিধা পাবেন। চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, মোবাইল ফোন বিলসহ বিভিন্ন খাতে ভাতা পান তাঁরা। আগে পৌনে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত ছিল। এখন তা সাড়ে পাঁচ লাখ টাকায় উন্নীত করা হলো।
চাকরিজীবীরা সাবধান: প্রস্তাব: বেতনভোগী কর্মীরা রিটার্ন না দিলে ওই প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় নিরীক্ষা করা হবে। প্রভাব: মূলত কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীর (টিআইএন) সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গতবার এ ধরনের কর্মীদের ক্ষেত্রে টিআইএন নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। এবার রিটার্নও বাধ্যতামূলক করা হলো। অবশ্য দণ্ডের তির ছোড়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানের দিকে। কর্মীরা রিটার্ন না দিলে ওই প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় নিরীক্ষা করা হবে।
মিথ্যা তথ্য দিলে জেল-জরিমানা: প্রস্তাব: মিথ্যা তথ্য দিলে তিন বছরের জেলা কিংবা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রভাব: এতে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার প্রবণতা কমবে। কর ফাঁকিতে নিরুৎসাহিত হবেন করদাতারা।
ই-মেইলে সব নোটিশ: প্রস্তাব: করদাতাদের কাছে ই-মেইলেই সব নোটিশ যাবে। প্রভাব: এটি ভালো উদ্যোগ। করদাতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কর কর্মকর্তাদের দেখা হবে না। হয়রানি কমবে। রিটার্ন নথিতে ই-মেইল ঠিকানা দিলেই হবে। তবে সমস্যা হলো যাঁদের ই-মেইল নেই, তাঁদের কী হবে।
বাড়ি-গাড়ি থাকলে সম্পদ বিবরণী বাধ্যতামূলক: প্রস্তাব: সম্পদের পরিমাণ যা–ই হোক না কেন, মোটরগাড়ি, ফ্ল্যাট কিংবা গৃহসম্পত্তি থাকলে বার্ষিক রিটার্নের সঙ্গে সম্পদ বিবরণী দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রভাব: বাড়ি-গাড়িওয়ালাদের সম্পদ ও আয়-ব্যয়ের চিত্র পাওয়া যাবে।
তিন হাজার টাকা দিতেই হবে: প্রস্তাব: গতবারের মতো এবারও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন; অন্যান্য সিটি করপোরেশন এবং সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে ন্যূনতম কর যথাক্রমে ৫ হাজার টাকা, ৪ হাজার টাকা ও ৩ হাজার টাকা বহাল রাখা হয়েছে। প্রভাব: আড়াই লাখ টাকার আয় হলেই আপনাকে কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচ হাজার কর টাকা দিতে হবে।
ডেডলাইন ৩০ নভেম্বর : প্রস্তাব: আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমার সময় ডেডলাইন ৩০ নভেম্বর। আইনের অংশ হওয়ায় এটি ভবিষ্যতে বহাল থাকছে। প্রভাব: সময় আর বাড়বে না। প্রস্তুতি নিন।
তথ্যসূত্র: প্রথমআলো ডটকম।