1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

বাড়িতে পানির পাম্পের সমস্যায়!

নিজের বাড়ি নিয়ে মহাঝামেলার মধ্যে আছেন শরীফ সাহেব। তিনি চাকরি করেন একটা সরকারী ব্যাংকে। লোন নিয়ে পাঁচতলা বাড়ি তৈরি করেছেন। দোতলায় নিজের পরিবার নিয়ে থাকেন শরীফ সাহেব। বাকি সব ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়েছেন। প্রতিমাসে যে টাকা ভাড়া পান তা মন্দ নয়। এভাবেই দিন ভালই কাটছিল তার। কিন্তু কিছুদিন ধরে বাড়ি নিয়ে নানা সমস্যায় তাকে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে বাড়ির পানি তোলার পাম্পটি হঠাৎ করে নষ্ট হয়ে গেলে বাড়িজুড়ে কারবালা শুরু হয়ে যায়। পানির জন্য ভাড়াটিয়াদের হৈচৈ চেঁচামেচিতে মাথা খারাপ হওয়ার যোগাড় বাড়িওয়ালা শরীফ সাহেবের। তড়িঘড়ি করে নতুন আরেকটা পাম্প এনে লাগানো পর স্বস্তি নেমে আসে। খুব বেশিদিন হয়নি আগের পানির পাম্পটা লাগানো হয়েছিল। এত তাড়াতাড়ি ওটা নষ্ট হয়ে যাবে শরীফ সাহেব ভাবতে পারেননি।

শরীফ সাহেবের মতো অনেকেই তেমন সমস্যায় আছেন নিজের বাড়ি নিয়ে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাপনে পানির প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি। পানির অপর নাম জীবন- কথাটা সব সময় উচ্চারিত হয়। আমাদের সবার দৈনন্দিন জীবনধারায় পানির রয়েছে বহুমুখী ব্যবহার। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত প্রতিদিনই পানির প্রয়োজন। প্রাচীনকালে মানুষের ব্যবহৃত পানির প্রধান উৎস ছিল, নদী ও ঝরনা। সময়ের বিবর্তনে মানুষের পানি সংগ্রহ ব্যবস্থায় ঘটেছে। আমূল পরিবর্তন। কুয়া, টিউবওয়েলের ধারাবাহিকতায় পানি সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে বিদ্যুতচালিত পানির পাম্প। পাম্পের সাহায্যে মাটির গভীর স্তর থেকে খুব সহজে পানি তোলা যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তিও বদলে যাচ্ছে দ্রুত। মাটির গভীর থেকে আরও গভীরে পানি তোলার কাজে ব্যবহৃত হয় সাবমার্সেবল পানির পাম্প।

সাবমার্সেবল পানির পাম্প প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ ফুট নিচে স্থাপন করা হয়। এই পাম্প ব্যবহার করা হয় মূলত কৃষি ও ক্ষেতখামারের কাজে। পাম্পের কয়েলের ওপর নির্ভর করে পাম্পটির কাজ করার সামর্থ্য। বাজারে দু’ধরনের পানির পাম্প পাওয়া যায়। একটি হলো ক্ল্যাসিক পানির পাম্প, আরেকটি হলো সাবমার্সেবল পানির পাম্প। ক্ল্যাসিক পানির পাম্পগুলো বেশি ব্যবহৃত হয় বাসাবাড়িতে পানি তোলার কাজে। শহরাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে এ ধরনের পানির পাম্প। পানির পাম্প ছাড়া মাটির গভীর থেকে পানি তোলা কষ্টসাধ্য।

শুধু ঢাকা শহরের গৃহস্থালির দৈনন্দিন পানির চাহিদা মেটাতে বাজারে প্রচলিত পাম্পের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। একতলা থেকে পাঁচতলা বাড়ির জন্য প্রয়োজন এক ঘোড়া শক্তিসম্পন্ন পানির পাম্প। এক ঘোড়া পানির পাম্প পাঁচতলার ওপরে ঘণ্টায় ১০০০ লিটার পানি তুলতে পারে। সাত থেকে আটতলা বাড়ির জন্য প্রয়োজন দুই ঘোড়া পানির পাম্প। দুই ঘোড়া পানির পাম্প সাত থেকে আট তলার ওপরে ঘণ্টায় ১২০০ থেকে ১৫০০ লিটার লিটার পানি তুলতে পারে। ১০ থেকে ১২ তলা বাড়ির জন্য প্রয়োজন তিন ঘোড়া পানির পাম্প। তিন ঘোড়া পানির পাম্প ১০ থেকে ১২ তলার ওপরে ঘণ্টায় ১৮০০ থেকে ২০০০ লিটার পানি তুলতে পারে।

শিল্প কারখানার জন্য ছয় ঘোড়া শক্তির পানির পাম্প ব্যবহার করা হয়। ছয় ঘোড়া পানির পাম্প প্রতি ঘণ্টায় ১০ থেকে ১২ হাজার লিটার পানি উত্তোলন করতে পারে। বাজারে রয়েছে নানা ধরনের বিভিন্ন কোম্পানির পানির পাম্প। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গাজী, এজি, পেডরোলো, আরএফএল, পারটেক্স প্রভৃতির কথা বলা যায়।

এই কোম্পানিগুলোর পানির পাম্প প্রায় সব ইলেক্টনিক সামগ্রীর দোকানে পাওয়া যায়। এগুলোর দাম ১৩,৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৭৫,০০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে প্রতিটি পাম্পের রয়েছে দুই থেকে তিন বছরের ওয়ারেন্টি। এর মধ্যে কোন পাম্প জ্বলে গেলে কিংবা বড় কোন সমস্যা হলে পাম্প কেনার সময় দেয়া ওয়ারেন্টি কার্ড দেখিয়ে কোন রকম খরচ ছাড়া পাম্পটি সারিয়ে নেয়া যাবে। সবার আগে লক্ষ্য রাখতে হবে বিদ্যুত চলে যাওয়ার পর পাম্পের সুইচটি যেন অন করা না থাকে। সুইচ অন করা থাকলে হঠাৎ বিদ্যুত আসার পর ঝটকায় পাম্পটি বিকল হয়ে যেতে পারে। লাইনে পানি না থাকলেও পাম্প অনেক সময় জ্বলতে থাকে। এ অবস্থায় স্বাভাবিকভাবে পাম্পটি গরম হয়ে জ্বলে যেতে পারে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকাটাই উত্তম। আর পাম্প চলাকালীন সময়ে সঠিক মাত্রায় ভোল্টেজ সরবরাহের জন্য ভোল্টেজ ষ্টাবিলাইজার ব্যবহার করলেও আপনার পাম্পটি সুরক্ষিত থাকবে আরও বহুদিন।

তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকন্ঠ।

More News Of This Category