নিজের একটি বাড়ির স্বপ্ন অধিকাংশ মানুষেরা দেখে থাকেন। কিন্তু এই স্বপ্ন পূরণের সবচেয়ে বড় বাধা হলো অর্থ। এই বাধা দূর করে আপনার স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করবে ব্যাংক। সহজ শর্ত এবং কিস্তিতে ফ্ল্যাট কিংবা জমি কেনার ঋণ দিচ্ছে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। শুধু তাই নয়, নির্মানধীন বাড়ি বা পুরানো বাড়ি সংস্কারে জন্যও ব্যাংক ঋণ দিয়ে থাকে। ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও বাড়ির ঋণ দেয়।
ঋণের পরিমাণ: পূর্বে গৃহ খাতে কম টাকা ঋণ দেওয়া হলেও ২০১৫ সালের পয়লা জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এই ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে এক কোটি বিশ লক্ষ করা হয়েছে। বেশির ভাগ ব্যাংক ফ্ল্যাট বা জমি মূল্যের ৭০% পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে। অর্থাৎ ১ কোটি টাকার ফ্ল্যাটে ব্যাংক ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থায়ন করতে পারবে। বাকি ৩০ লাখ টাকা জোগান দিতে হবে গ্রাহক নিজেকে। ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক জামানতের উপর নির্ভর করে ৫০% থেকে ৬০% পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে।
সুদের হার: ব্যাংক ভিন্নতা অনুযায়ী সুদের হারের পার্থক্য রয়েছে। তবে বেশির ভাগ সুদের হার ৯% থেকে ১০% হয়ে থাকে। এক নজরে কিছু ব্যাংকের গৃহ ঋণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। সিটি ব্যাংক: সিটি ব্যাংকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা সর্বোচ্চ এক কোটি বিশ লক্ষ পর্যন্ত ঋণ প্রদান করে। তাদের সুদের হার ৮.৭৫%।
ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক: ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের অ্যাসিটেন্ট অফিসার আবদুল্লাহ আল ফয়সাল জানান, “ আমরা গ্রাহকের কথা চিন্তা করে ঋণের উপর সর্বোচ্চ লভ্যাংশের হার ১৪.৫% ধার্য করে থাকি”। তিনি আরো বলেন শুধু নতুন ফ্ল্যাট বা জমি নয়, নির্মানাধীন বাড়ির ক্ষেত্রে ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক ঋণ প্রদান করে। সেক্ষেত্রে বাড়ির এক তলার কাজ সম্পূর্ণ হওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। তবে ঋণ পাবার জন্য অব্যশই ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের গ্রাহক হতে হবে।
আইএফআইসি ব্যাংক: আইএসআইসি ব্যাংক ৯.৫০% সুদে গৃহ ঋণ দিয়ে থাকে। সর্বোচ্চ ২৫ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধে তারা ঋণ দিয়ে থাকেন। আইডিএলসি: আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ৭০% পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে। তাদের সুদের হার ৯% থেকে ১০% হয়ে থাকে। ইস্টার্ন ব্যাংক: ইস্টার্ন ব্যাংক শতকরা ১০.৫০ থেকে ১১.৫০ পর্যন্ত সুদের হারে ঋণ প্রদান করে। এছাড়া ব্র্যাক ব্যাংক, লঙ্কা বাংলা ফিন্যান্স, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক সহ অন্যান্য ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান গৃহ ঋণ দিয়ে থাকেন। এমনকি আপনি চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও গৃহ ঋণ গ্রহণ করতে পারেন।
কারা ঋণ পাবেন: চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী উভয়ই গৃহ ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন। আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে মাসিক বেতন ৩৫,০০০ টাকা হওয়া প্রয়োজন। প্রাইম ব্যাংক সরকারি চাকুরিজীবীর ক্ষেত্রে ৩০,০০০ টাকা, বেসরকারি চাকুরীজীবীর ক্ষেত্রে ৪০,০০০ থেকে ৪৫,০০০ টাকা এবং ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে ৫০,০০০ থেকে ৫৫,০০০ টাকা মাসিক আয় দেখে থাকে।
পরিশোধের উপায়: মাসিক সমপরিমাণ কিস্তি পরিশোধে ঋণ দেওয়া হয়। অধিকাংশ ব্যাংক ২৫ বছর পরিশোধের শর্তে ঋণ প্রদান করে। ঋণ গ্রহণের প্রক্রিয়া: গৃহ ঋণ পাওয়ার জন্য খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে ব্যাংক ঋণ মঞ্জুর করে থাকে।
যে সকল কাগজপত্র লাগবে: ১। দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি ২। জাতীয় পরিচয় পত্র ৩। টিন/ ট্যাক্স সার্টিফিকেট ৪। আবেদনপত্র ৫। এক মাসের ইউটিলিটি বিলের কাগজপত্র ৬। বিজনেস কার্ড (ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে) ৭। গ্যারেন্টারের পরিচয় পত্র, ছবি ৮। বেতন বা আয় বিবরণী ৯। অন্য কোনো ঋণ নেওয়া থাকলে তার কাগজ পত্র ১০। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে তার কাগজপত্র ইত্যাদি।
নিজের একটি ফ্ল্যাট বা বাড়ির স্বপ্ন আর অধরা নয়। ঋণ গ্রহণ করে সহজে তৈরি করে নিতে পারেন আপনার আপন ঠিকানা। ব্যাংকগুলো ঋণ নিয়ে রয়েছে আপনার অপেক্ষায়। সূত্র: মো. আবদুল্লাহ আল ফয়সাল অ্যাসিটেন্ট অফিসার ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক লি. রিংক রোড শাখা।