মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীর সংখ্যা ৮৬ লাখ। ২০১২ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক সমীক্ষা অনুযায়ী, এসব শ্রমিকের প্রায় ৮৮ শতাংশই কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই বিদেশে যান। কিন্তু ছয় মাস কিংবা এক বছরের একটি প্রশিক্ষণ বিদেশে যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকের পারিশ্রমিক দুই থেকে তিন গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য দেশে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আছে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে ৫১টি। বিদেশে যেতে ইচ্ছুক যে কেউ এসব প্রতিষ্ঠান থেকে নামমাত্র ফি দিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। বাংলাদেশ জার্মান টেকনিক্যাল সেন্টারের অধ্যক্ষ মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সাধারণত একজন দক্ষ শ্রমিক আরেকজন অদক্ষ শ্রমিকের তুলনায় তিন গুণ বেশি পারিশ্রমিক পান। অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে বিদেশে গেলে কাজ পাওয়া যায়, কিন্তু পারিশ্রমিক তেমন পাওয়া যায় না। দেশের বিভিন্ন জেলায় জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তালিকাভুক্ত ৫১টি প্রতিষ্ঠানে স্বল্পমেয়াদি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। www.bmet.gov.bd/BMET/trainingHomeAction ঠিকানায় গিয়ে ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর ঠিকানা ও যোগাযোগের নম্বর পাওয়া যাবে।
এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, বাগেরহাট ও সিরাজগঞ্জে চারটি মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউট রয়েছে। আর রাজধানীর দারুস সালামে বাংলাদেশ-কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার এবং মিরপুর ২ নম্বরে বাংলাদেশ-জার্মান টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে। বাকি ৪৫টি কেন্দ্র দেশের ৪৫টি জেলায় অবস্থিত।
চট্টগ্রামের মঞ্জুরুল ইসলাম বিদেশি একটি শিপিং কোম্পানির জাহাজে চাকরি করছেন ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। শুরুতে ২০ হাজার টাকা বেতন পেতেন। পরে দেশে ফিরে একটি মেরিন ইনস্টিটিউটে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ নেন। এখনো ৬০ হাজার টাকা বেতন পান।
কী ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়
স্বল্পশিক্ষিত ব্যক্তিদের কথা বিবেচনা করেই এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ-কোরিয়া ট্রেনিং সেন্টারের অধ্যক্ষ মো. শাখাওয়াত আলী বলেন, বিদেশে গিয়ে কাজ পাবেন, বিষয়টি মাথায় রেখেই এখানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। তবে শুধু বিদেশে নয়, এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে যে কেউ দেশেও স্বাবলম্বী হতে পারেন। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে হাউস কিপিং, গার্মেন্টস শিল্পের বিভিন্ন ধরনের কাজ, রেফ্রিজারেশন, এয়ারকন্ডিশনিং, টাইলস ফিটিং, ওয়েল্ডিং ও ফেব্রিকেশন, ভাষা, তথ্যপ্রযুক্তি ও অটোমোবাইল এবং ইলেকট্রনিকসের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে সব কেন্দ্রে সব ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে যোগাযোগ করে সেখানে কোন কোন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তা জেনে নিতে হবে।
কারা ভর্তি হতে পারবেন
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে ভর্তির জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার তেমন বাঁধাধরা নেই। অধিকাংশ কোর্সের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস পর্যন্ত হলেই হয়। তবে কিছু কিছু কোর্সের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক পাস চাওয়া হয়। প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচনের আগে লিখিত, মৌখিক কিংবা প্রাক্যোগ্যতা পরীক্ষা নেওয়া হয়।
খরচ কেমন
কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে প্রশিক্ষণ ব্যয় নামমাত্র। প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য নিয়মিত ও স্বনির্ভর নামে দুই ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। নিয়মিত বিভাগের কোর্সগুলো দিনে পরিচালিত হয়, এগুলোর ব্যয় পাঁচ শ থেকে সাত শ টাকার মধ্যে। কারও দিনে সময় না থাকলে বিকেলে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। বিকেলের কোর্সগুলো ‘স্বনির্ভর’, অর্থাৎ প্রশিক্ষণার্থীদের নিজ খরচে প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এর ব্যয় দুই থেকে তিন হাজার টাকা। তবে কোর্স ভেদে কম-বেশি হয়। অনেক সময় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ভেদেও কোর্স ফি কম-বেশি হয়।
কোর্সের মেয়াদ
সাধারণত কোর্স ভেদে ছয় সপ্তাহ থেকে শুরু করে এক বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রশিক্ষণ গ্রহণে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা তাঁদের প্রয়োজন অনুযায়ী কোর্স বেছে নিতে পারেন।
প্রশিক্ষণের সময়
বছরজুড়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ধরাবাঁধা সময় নেই। সাধারণত একটি প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর আরেকটি প্রশিক্ষণ শুরু হয়। কোনো কোর্স শুরু হওয়ার আগে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। ওই সময় কোন কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, প্রশিক্ষণ শুরুর তারিখ, কোর্সের মেয়াদ কত দিন, খরচ কত ইত্যাদি বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া থাকে বিজ্ঞাপনে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ
সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর বাইরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেসরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও রয়েছে। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যেকোনো সময় ভর্তি হওয়া যায়। এখানে কোর্স ফি তুলনামূলক বেশি এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রভেদে হারও ভিন্ন। তবে সরকারি-বেসরকারি যেখানেই হোক না কেন, ভালো বেতনে কাজ নিয়ে বিদেশে যেতে চাইলে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকের বেতনের ব্যবধান কিন্তু তিন গুণ!
তথ্যসুত্র: প্রথম আলো ডটকম।