বালু বা স্যান্ড হচ্ছে কংক্রিট এর একটি উপাদান। এছারা প্লাস্ট এবং ইটের গাথুনির কাজেও বালুর প্রয়োজন হয়। বালু হচ্ছে সম্পুর্ন প্রাকৃতিক উপাদান। বালুকে ইঞ্জিনিয়ারিং ভাষায় মুলত ফাইন এগ্রিগেট বলা হয়ে থাকে। এর মুল কাজ হচ্ছে পাথর বা খোয়া এবং সিমেন্টর মধ্যে শক্ত বন্ডিং করার সময় ফাকাস্থান পুরন করা। মুলত কংক্রিট এর গ্যাপ বা ফিলআপ করাই এর কাজ। আসুন জানি বালু সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপুর্ন খুটিনাটি বিষয়াদি।
বালু:- বালু বলতে আমরা বুঝি নদি বা সাগরে পারে যেটা থাকে সেটা। কিন্তু বালুর মধ্যে অনেক প্রকারভেদ আছে। আছে বালুর বিভিন্ন সাইজ। ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভাষায় বালুর সাইজ বের করাকে ফাইননেস বলা হয়। বিভিন্ন এলাকার বালু বিভিন্ন আকারের হয়ে থাকে। আর এই আকার এর উপর এর ব্যাবহার নির্ভর করে। এই সাইজের বিষয়টা পরিমাপের একক হচ্ছে FM। ইংরেজি পুরো ফর্ম হচ্ছে Fineness Modulus। মনে রাখবেন আপনার কংক্রিট এর শক্তিমত্ত অনেকটা নির্ভর করে বালির এই এফএম এর উপরে। এফএম সাধারনত ল্যাবরটরিতে বের করা হয়। বিশেষ ধরনের চালনি বা ছাকুনি ব্যাবহার করে বালিকে ছাকা হয়। একটার উপরে একটা চালূনি বা ছাকুনি রেখে এটা করা হয়। প্রতিটা ছাকুনির ছিদ্রের সাইজ কিছুটা করে ছোট হতে থাকে এবং প্রতিটা ছাকুনির একটা করে নম্বর থাকে। যে ছাকুনিতে এসে বেশিরভাগ বালি আটকে যায় সেই ছাকুনির সাইজ এর সাথে উক্ত বালির ওজনকে ধরে একটা সুত্রের সাহায্যে বের করা হয় সেই বালির FM।
বাজার সাধারনত চার ধরনের বালু আমরা বিল্ডিং কন্সট্রাকশনে ব্যাবহার করে থাকি। ১) ভিটি বালু( ফিলিং এর জন্য) ২) লোকাল বালূ( কংক্রিট ঢালাই এর জন্য) ৩) সিলেট বালু বা লাল বালূ ( কংক্রিট ঢালাই এর জন্য) ৪) চিকন বালু বা প্লাস্টার এর বালু ( দেয়ালে প্লাস্টার এর জন্য) বালি কংক্রিটে কেমন পরিমানে ব্যাবহার হবে সেটা নির্ভর করে কি ধরনের বালু ব্যাবহার হচ্ছে এবং কংক্রিটের রেশিও কেমন। রেশিও সম্পর্কিত হিসাব জানতে আমাদের সিমেন্ট এর পোস্টটি আবার পরে আসতে পারেন। সেখানে ডিটেইলস এ বলা আছে আপনি কিভাবে বালির পরিমান বের করবেন একটা ঢালাই এর জন্য।
বালি কেনার সময় প্রথমত শিউর হন আপনি কেমন বালু কিনছেন। কারন এখানে অনেক বাড়ির মালিক ঠকে যান। লোকাল বালু বলে ভিটি বালু, আর সিলেট বালূ বলে লাল মরা পাথরের গুরো দিয়ে দিচ্ছেন প্রতিনয়ত। এছারা আর একটা প্রবলেম হচ্ছে বালু কিভাবে কেনা হচ্ছে। যদি আপনি গাড়ি হিসবে কেনেন তবে অবশ্যই সেই গাড়িটা মেপে নেবেন। আর চেস্টা করুন ছোট গাড়িতে বালি নেয়ার বিষয়টি পরিহার করার জন্য। ছোটগাড়ি মাপে কম দেয়। কিন্তু বড় ডাম্প ট্রাকগুলো সবসময় একটু বেশিই নিয়ে আসে। এবার আসুন দেখি বিভিন্ন ধরনের বালু সম্পর্কে জানি।
ভিটি বালু:- এটা হচ্ছে বালুর কোয়ালিটির মধ্যে সবচেয়ে নিম্নতম। মুলত এই বালুর নির্দিস্ট কোন সাইজ বা কোন FM থাকে না। ময়লা এবং মাটি মিশ্রিত অবস্থায় থাকে এবং কিছুটা কালো বর্নের হয়ে থাকে। এই বালিটি প্রধানত ব্যাবহার করা হয় বাড়ির গ্রেড বীম এবং ফাউন্ডেশন এর ফিলিং এর কাজে। প্রায় প্রতিটি বাড়িই কিছুনা কিছু উ্চু করা হয়। এই উচু করার কাজে এই ভিটি বালু ব্যাবহার করা হয়। এগুলো প্রতি গাড়ি হিসবেে বিক্রি হয়ে থাকে। চেস্টা করবেন ছোট গাড়িতে না নেয়ার জন্য। বড় ডাম্প ট্রাক ব্যাবহার করুন। এতে বেশ ভালোই আর্থিক সাশ্রয় হবে।
লোকাল বালু:- এটা মুলত ফ্রেস সাদা বালু। এই বালিটি লাগে মুলত ঢালাই এর কাজে। সাধারন লাল বালু বা সিলেট বালুর সাথে মিশ্রিত করেই ঢালাই করা হয়। বাজারে এই বালির কথা বলে অনেকেই অনেক ধরনের বালু সাপ্লাই দিয়ে দেয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে খুব কম সাপ্লাইয়ারই আসল বালূটি দিয়ে থাকে। সাধারনত এই বালুটি সম্পুর্ন প্রাকৃতিক ভাবে কালেকশন করা হয়। তাই ঠিক কোথা থেকে বালুটি কালকশন হচ্ছে সেটা খুবই গুরুত্বপুর্ন একটি বিষয়। তাই বালু কেনার আগে জেনে নিন কোন এলাকার বালু কিনছেন। সাধারনত ঢাকার মধ্যে ভুয়াপুরের বালু সবচেয়ে উত্তম।
সিলেট স্যান্ড বা লাল বালু:- এই বালুটি লাল বালু বলার কারন হচ্ছে এর রঙ লাল। এবং এটির মুল সাপ্লাইটা আসে সিলেট থেকে। সিলেটের ভোলাগঞ্জ, বিসনাকান্দি সহ বেশ কিছু এলাকায় এই বালু বেশ ভালো পাওয়া যায়। এছারা ময়মনসিংহ অঞ্চলে এই বালুটি পাওযা যায়। কেনার সময় বড় গাড়ির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নিন। কারন লোকালি এই বালিটির বেশ খারাপ কিছু কোয়ালিটির বালি পাওয়া যায়। এর মধ্যে আছে মরা পাথর এরগুরো সহ কাদা মাটি সহ বালি।
প্লাস্টার এর বালু:- এই বালুটি লোকালি পাওয়া যাবে তবে এটি নেয়ার আগে নিশ্চিৎ হয়ে নিন কোয়ালিটি সম্পর্কে। এক্সপার্ট কাউকে দিয়ে বালিটি একবার পরিক্ষা করিয়ে নিন যে এটি আসলেই প্লাস্টার এর কাজের জন্য। অনেক সময় প্লাস্টার এর বালুর কথা বলে ঢালাই এর বালু এমনকি ভিটি বালু দেয়ার ঘটনাও অহরহ ঘটছে।
বালু সাইটে আসার পরে প্রথমে তার চারপাশে গোল করে ইট দিয়ে একটি বাধ তৈরি করুন। তার পরে পাতলা প্লাস্টিকের পলি দিয়ে ঢেকে দিন। এতে বালুর উপরি ভাগে ময়লা পরা থেকে বিরত থাকবে। যা পরবর্তিতে ঢালাইতে গিয়ে কংক্রিট এর শক্তিমত্তা বাড়িয়ে দেবে। বালুর দামের বিষয়টি নির্ভর করে আপনার প্রজেক্টের দুরত্বের উপরে। তাই কাছাকাছি সাপ্লাইয়ার এর সাথে কথা বলুন তারাই আপনাকে কমের মধ্যে দিতে পারবে। বালু ছেকে নেয়াটা অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ন একটি বিষয়। এতে বালুর মধ্যে থাকা বারতি ময়লা দুরিভুত হয় অনেকাংশে। যদি মনে হয় বালুতে খুব বেশি ময়লা আছে তবে চেলে নেন। কন্ট্রাক্টর যদি নিজে এই কাজ না করতে চায় তবে নিজেই করে নিন এতে আপনার অনেক উপকার হবে।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।