সিএমএসএমই চারটি ইংরেজি শব্দের প্রথম অক্ষর। সি হচ্ছে ‘কটেজ’, এম হচ্ছে ‘মাইক্রো’, এস হচ্ছে ‘স্মল’ এবং এম হচ্ছে ‘মিডিয়াম’ এবং ‘ই’-তে এন্টারপ্রাইজ। সিএমএসএমই হলো কটেজ, মাইক্রো, স্মল ও মিডিয়াম খাতে নেওয়া উদ্যোগ। শিল্পনীতির আলোকে কটেজ, মাইক্রো, স্মল ও মিডিয়াম শিল্প বা উদ্যোগের সংজ্ঞা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করেছে।
কটেজ: কটেজ বা কুটির শিল্প পরিবারের সদস্যদের প্রাধান্যবিশিষ্ট উদ্যোগ, যার জমি ও কারখানা ভবন ছাড়া স্থায়ী সম্পদের মূল্য (প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ) ১০ লাখ টাকার কম এবং পারিবারিক সদস্য সমন্বয়ে সর্বোচ্চ জনবল ১৫ জনের বেশি নয়। কুটির শিল্প খাতের একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন।
মাইক্রো: মাইক্রো শিল্পের জমি ও কারখানা ভবন ছাড়া স্থায়ী সম্পদের মূল্য ১০ লাখ থেকে ৭৫ লাখ টাকা কিংবা শ্রমিক ১৬ থেকে ৩০ জন বা তার চেয়ে কম। সেবামূলক শিল্পের ক্ষেত্রে স্থায়ী সম্পদের মূল্য ১০ লাখ টাকার কম কিংবা জনবল ১৫ জনের বেশি নয়। ব্যবসার ক্ষেত্রে স্থায়ী সম্পদ ও জনবলের আকার সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের মতো। তবে বার্ষিক টার্নওভার সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের মাইক্রো শিল্পের একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা এবং সেবা ও ব্যবসা খাতের গ্রাহক সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন।
ক্ষুদ্র: ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোগে জমি ও কারখানা ভবন ছাড়া স্থায়ী সম্পদের মূল্য ৭৫ লাখ থেকে ১৫ কোটি টাকা কিংবা শ্রমিকসংখ্যা ৩১ থেকে ১২০ জন। ব্যবসার ক্ষেত্রে স্থায়ী সম্পদ ১০ লাখ থেকে দুই কোটি টাকা কিংবা ১৬ থেকে ৫০ জন শ্রমিক কাজ করেন কিংবা টার্নওভার এক কোটি থেকে ১২ কোটি টাকা এমন প্রতিষ্ঠান। সেবামূলক ক্ষুদ্র উদ্যোগের ক্ষেত্রে ব্যবসার টার্নওভারের অংশ বাদে বাকিটুকু প্রযোজ্য। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ক্ষুদ্র শিল্পের একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ২০ কোটি টাকা এবং সেবা ও ব্যবসা খাতের একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারেন।
মাঝারি: ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে মাঝারি উদ্যোগে জমি ও কারখানা ভবন ছাড়া স্থায়ী সম্পদের মূল্য ১৫ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার মধ্যে কিংবা ১২১ থেকে ৩০০ জন শ্রমিক থাকে। তবে তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান/শ্রমঘন শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শ্রমিকের সংখ্যা সর্বোচ্চ এক হাজার জন। সেবামূলক মাঝারি শিল্পে স্থায়ী সম্পদের মূল্য দুই কোটি থেকে ৩০ কোটি টাকা বা শ্রমিকসংখ্যা ৫১ থেকে ১২০ জন। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের মাঝারি শিল্পের গ্রাহক সর্বোচ্চ ৭৫ কোটি টাকা এবং সেবা খাতের গ্রাহক সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন।
নারী উদ্যোক্তা:ব্যক্তিমালিকানাধীন বা প্রোপ্রাইটরি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে স্বত্বাধিকারী কিংবা ‘অংশীদারি প্রতিষ্ঠান’ বা ‘জয়েন্ট স্টক’ কোম্পানিতে নিবন্ধিত প্রাইভেট কোম্পানির পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে কমপক্ষে ৫১ শতাংশ অংশের মালিক নারী হলে ওই প্রতিষ্ঠান নারী উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হবে।
ঋণ: সিএমএসএমই খাতের সুদের হার সহনশীল মাত্রায় রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে। পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় নারী উদ্যোক্তা ও প্রতিবন্ধী, কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র খাতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় নতুন উদ্যোক্তা এবং মফস্বলভিত্তিক কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপনে, জ্ঞান ও সৃজনশীল লেখনী প্রকাশ এবং বিপণনের ক্ষেত্রে মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোগে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ (ব্যাংকরেট + ৪%) সুদহারে ঋণ দেওয়ার নির্দেশনা আছে।
ঋণের জন্য হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংক প্রতিবেদন, ব্যবসা নিজ জমিতে হলে দলিল, পর্চা ইত্যাদি এবং বিদ্যুৎ/টেলিফোন বিলের কপি, ভাড়ার চুক্তিনামা, টিআইএন, মজুদ মাল ও মূল্য তালিকা, ঋণের আবেদনকারী এবং গ্যারান্টার উভয়ের পাসপোর্ট সাইজ ছবি এবং গ্যারান্টার ব্যবসায়ী হলে তার ট্রেড লাইসেন্সের কপি ও চলমান ব্যবসা হলে গত এক থেকে তিন বছরের বিক্রয় ও আর্থিক বিবরণী; প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট অব ইনকরপোরেশন এবং মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেলস, ভ্যাট সার্টিফিকেট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) এবং আইআরসি ও আইআরই সার্টিফিকেট (আমদানি ও রপ্তানি ব্যবসা) প্রয়োজন হয়।
জামানত: বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় নারী উদ্যোক্তারা ব্যক্তিগত গ্যারান্টির বিপরীতে সহায়ক জামানত ছাড়া ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন। এ ছাড়া কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র খাতে পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের আওতায় নতুন উদ্যোক্তারা জামানতবিহীন ১০ লাখ টাকার বেশি ঋণ পেতে পারেন। তথ্যসূত্র: সমকাল।