লিয়াকত হোসেন মোগলের জন্ম যশোর কোতোয়ালি থানার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামে। সফল ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক। একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ও বায়িং হাউসের মালিক তিনি। এছাড়া, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান। গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে ৪৫০ টাকা বেতনে গার্মেন্টসে চাকরি নেওয়া লিয়াকত হোসেন মোগলের বড় ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার কথা।
মোগল ফ্যামিলির ছেলে আমি। জমিদারি ছিল কিন্তু অনেক জমি-জায়গা সব এদিক ওদিক হয়ে গিয়েছিল। স্কুল জীবন কেটেছে গ্রামেই। ছোটবেলা থেকেই বাবার মুদি দোকানে বসতাম আর পড়াশোনা করতাম। বাবার রাইস মিল ছিল, সেখানে বসতাম মাঝে মাঝে। এছাড়া বাজার করা, মাঠে ঘাটে ঘুরে বেড়াতাম। একটু বড় হওয়ার পর এসবের পাশাপাশি ব্যবসাও করেছি। আজ আমি সফল ব্যবসায়ী। ছোটবেলা থেকে আমি অনেক পরিশ্রমী।
আমার আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল সততা, নিয়মানুবর্তিতা, পরিশ্রমী এবং মানুষকে সম্মান করা।পড়াশোনা করেছি গ্রামে। খুব ইচ্ছা ছিল শহরে যাব, ব্যবসা করব। পরে মাত্র ১০০ টাকা পকেটে নিয়ে ঢাকায় এসেছিলাম ১৯৮৪ সালে। ঢাকায় এসে আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম।
অনেক চেষ্টার পর গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে মাত্র ৪৫০ টাকা বেতনে প্রথম চাকরিতে ঢুকেছিলাম ওই বছরের মে মাসে। সুপার ভাইজার থেকে চিফ সুপার ভাইজার, ফ্লোর ইনচার্জ এবং পরে প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেয়েছিলাম। চাকরিতে যোগদানের ৯ মাসের ভেতরে ৪৫০ টাকার বেতন বেড়ে দাঁড়াল প্রায় ৩ হাজার।
এরপর প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে গার্মেন্টস থেকে যখন চাকরি ছাড়ি তখন বেতন ছিল ৮ হাজার টাকা। গার্মেন্টসের প্রোডাকশন ম্যানেজার থেকে ১৯৮৭ সালে মাত্র ৩ হাজার টাকায় চাকরি নিলাম এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানের বায়িং হাউজ ফ্রেন্ডস গ্রুপ অব কোম্পানিতে। ১৯৯১ সালে একই বায়িং হাউজের আমি ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পেলাম।
কোম্পানিই আমাকে অফার করে ডিরেক্টর পদে নিয়েছিল। এরপর ১৯৯৯ সালে চ্যানেল আইয়ের ইমপ্রেস গ্রুপে যোগ দিলাম। এরপর ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে নিজে বায়িং হাউজ দিলাম উত্তরাতে। এরপর আশকোনাতে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি দিলাম। এরপর থেকে ভালোই চলছে। পাশাপাশি কিছু সেবামূলক কাজ করার চেষ্টাও করে যাচ্ছি।
মোগল বংশ তো; মানুষের মধ্যে একটি নেতিবাচক ভাবনা ছিল। আর সেই চিন্তা থেকে মানুষকে বের করে আনতে চেয়েছি। যেদিন থেকে আমি বুঝতে শিখেছি মৃত্যুকালে একটি কয়েনও সঙ্গে নিয়ে যেতে পারব না, সেদিন থেকেই আমি চিন্তা করলাম মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করব। করেছিও। আগামীতে ইচ্ছা আছে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের।
জোবেদা মোগল ইনস্টিটিউট নামে আমার মায়ের নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে। সেখানে পড়াশোনা করছে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী। ৯ বিঘা জমিতে স্কুলটি। এখানে শিক্ষার্থীরা ভালো স্টাইফেন পায়, রেজাল্ট খুবই ভালো করছে। আমার প্রতিষ্ঠা করা অস্ট্রেলিয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুল রয়েছে। এছাড়া আমার বাবার নামে ‘রোটারি খোরশেদ আলী মোঘল’ নামে একটি হেল্থ কমপ্লেক্স রয়েছে এলাকায়। রোগী ভর্তির কোনো ব্যবস্থা নেই। ডাক্তার বসেন, রোগী সেখানে গিয়ে প্রেসক্রাইব নেন। মাঝে মাঝে বিভিন্ন ক্যাম্প বসিয়ে ফ্রি চিকিৎসা দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিসের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দিয়েছি চলতি বছরের জানুয়ারিতে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে যা কিছু প্রয়োজন, সবই করব। আশুলিয়াতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসের নির্মাণ শেষের পথে। আমরা খুব দ্রুত সেখানে চলে যাব। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বিভাগ চলেও গিয়েছে। নতুন ক্যাম্পাসে জিম, সুইমিং পুল করা হবে।
শিক্ষার্থীরা যেন ক্যাম্পাসে গিয়ে লেখাপড়ার সঙ্গে খেলাধুলা করতে পারে সে ব্যবস্থাও থাকবে। এসব না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গ হয় না। শুধু পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে ছেলেমেয়েরা। আসলে আমার তেমন অবসর নেই। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত। প্রতিদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠি।
বাড়িতে ছাদ কৃষি আছে, প্রতিদিন চেষ্টা করি সে সব সবজি গাছে পানি দিতে, গাছের গোড়ার মাটি নেড়ে দিই। ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে দায়িত্ব পাওয়ার পর সকালে অফিসে চলে আসি; মাঝে মাঝে ব্যবসার খোঁজখবর নিই। রাতে বাসায় ফিরে এশার নামাজ পড়ে শারীরিক সুস্থতার জন্য সুইমিং পুলে সাঁতার কাটি। এরপর ঘুমোতে যাই।