দীর্ঘ সময় ধরে হ্যান্ডসেটের বাজারে রাজত্ব করে আসছে স্মার্টফোন। টাচস্ক্রিন ও যথেচ্ছ অ্যাপ ব্যবহারের সুবিধা স্মার্টফোনের এ রাজত্বের গোড়াপত্তন করেছিল। সেই থেকে আজ পর্যন্ত হার্ডওয়্যার ছাড়া স্মার্টফোনের অবয়বে আর কোনো বড় পরিবর্তন আসেনি। তবে এবার ভিভো ও মেইজু নামে দুই চীনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমন দুটি স্মার্টফোনের ধারণা দিয়েছে, যেগুলোয় কোনো ধরনের বাটন বা পোর্ট থাকবে না। পুরোপুরি ওয়্যারলেস, সিম-লেস, বাটন-লেস এবং পোর্ট-লেস হ্যান্ডসেটের এ ধারণা আমূল পাল্টে দিতে পারে প্রথাগত স্মার্টফোনকে।
হ্যান্ডসেট থেকে বাটন বা পোর্ট বাদ দেয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এই যেমন ফিচার ফোনের তুলনায় কম বাটন থাকার কারণেই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল স্মার্টফোন। এছাড়া ২০১৬ সালে হেডফোন জ্যাক ছাড়াই আইফোন সেভেন নামে একটি হ্যান্ডসেট বাজারে ছাড়ে অ্যাপল। একই পথ ধরে পরবর্তী সময়ে আরো অনেক হ্যান্ডসেট নির্মাতাও ডিভাইস থেকে হেডফোন জ্যাক বাদ দেয়।
তবে ভিভো এবং মেইজু বাটন ও পোর্ট বাদ দেয়াকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে। তারা মেইজু জিরো ও ভিভো এপেক্স ২০১৯ নামে এমন দুটি হ্যান্ডসেটের ধারণা দিয়েছে, যেগুলোয় শুধু হেডফোন জ্যাক নয় বরং চার্জিং পোর্ট, স্পিকারের আবরণ বা কোনো ধরনের বাটন থাকবে না। এমনকি মেইজু জিরোতে সিম কার্ড পোর্টও বাদ দেয়া হয়েছে।
এর বদলে এ ফোনে বিল্টইন ই-সিম ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে, যার জন্য প্রথাগত কোনো সিমের দরকার পড়বে না। ভিভো এপেক্স ২০১৯-এ প্রথাগত স্পিকারের বদলে ডিসপ্লে থেকেই ভাইব্রেশন আকারে অডিও বের হওয়ার ধারণা দেয়া হয়েছে। উভয় হ্যান্ডসেটেই ব্যবহারকারীর নির্দেশনা দেয়ার জন্য বাটনের বদলে সেন্সর ব্যবহার করা হবে। ওয়্যারলেস প্রযুক্তির মাধ্যমে কোনো ধরনের তার ছাড়াই এসব হ্যান্ডসেট চার্জ দেয়া যাবে।
এক কথায় ভিভো ও মেইজুর প্রস্তাবিত স্মার্টফোন দুটি হবে সম্পূর্ণভাবে ওয়্যারলেস, সিম-লেস, বাটন-লেস ও পোর্ট-লেস। এমনটি সম্ভব হলে তা হবে স্মার্টফোনে ওয়্যারলেস প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় আত্মীকরণ। কারণ আগে যেসব ফোনে হেডফোন জ্যাক বাদ দেয়া হয়েছে, সেগুলোতে শুধু প্রথাগত হেডফোনের বদলে ব্লটুথ হেডফোন ব্যবহারের সুবিধা যুক্ত হয়েছে। আর কোনো পরিবর্তন নেই বললেই চলে।
তবে ভিভো ও মেইজুর এসব ডিভাইস এখনো ধারণামাত্র। কখনো এ ধরনের ডিভাইস তৈরি হবে কিনা বা ব্যবহারকারী হাতে নিতে পারবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে। অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের মতো বড় প্রতিষ্ঠান কখনো স্মার্টফোনের ধারণা আগে থেকে প্রকাশ করে না। সে কারণে এ প্রতিষ্ঠানগুলো কখনো এ ধরনের ডিভাইস নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছে কিনা, নিশ্চিত নয়।
আরেকটি সমস্যা হলো, ভিভো ও মেইজু উদ্ভাবনে এগিয়ে থাকলেও ব্র্যান্ড হিসেবে চীনের বাইরে তেমন একটা পরিচিত নয়। স্মার্টফোনের ইতিহাস বলে, অ্যাপল বাটন-লেস, ওয়্যারলেস ও পোর্ট-লেস হ্যান্ডসেট বাজারে না ছাড়লে তা জনপ্রিয় বা ট্রেন্ড হবে না।
এই যেমন হেডফোন জ্যাক বাদ দেয়ার শুরুটাও অ্যাপল করেছিল। পরবর্তীতে অন্যান্য কোম্পানি একই পদাঙ্ক অনুসরণ করে। এ পরিবর্তনের পর অ্যাপল চাইলে আইফোন এইট, টেন বা টেনএসে নতুন কোনো পদ্ধতি যোগ করতে পারত। কিন্তু অ্যাপল এমনটি করেনি। তাই অন্যরাও সে পথে পা বাড়ায়নি। তবে এরপর যদি কেউ পুরোপুরি ওয়্যারলেস, সিম-লেস, বাটন-লেস এবং পোর্ট-লেস হ্যান্ডসেট বাজারে ছাড়ে, তার কৃতিত্ব কিছুটা হলেও মেইজু ও ভিভো পাবে। সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার