শেখা কখনই ক্লাসরুমে এ বা বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং চারপাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক কিছু যা থেকে শেখা যায়। ইতিহাস, ভূগোল, জলবায়ু, আবহাওয়া এসব বিষয় ছোটবেলা থেকেই পড়তে যেন খুব কষ্ট হত, কিছু মনে রাখা যেত না। আর ঘুরতে যেয়ে বাচ্চা কে ইতিহাস গল্পের মত পড়ে শোনান, এই শিক্ষা বিশ্বাস করুন, তার সারা জীবন মনে থাকবে ।
এখনকার বাবা মায়েরা অবশ্য ঘুরতে গেলে, ছেলে মেয়ের হাতে ট্যাব ধরিয়ে দেন, তাহলে কিন্তু ভ্রমন থেকে শিখতে পারবেন কম, বরং তাকে ম্যাপ ধরিয়ে দিন, ঐ জায়গার ট্রান্সপোর্ট সম্পর্কে জানতে বলুন, খাবার দেখে জেনে শুনে বুঝে কিনতে দিন, প্রশ্ন করুন, গল্প করুন কথা বলুন শেখার জন্য। কিন্তু নিরাপত্তার কারনে কখনই একা ছাড়বেন না।
আজকাল ঘুরতে গেলে বা ঘুরে আসার পর আমরা সব ছবি ফেসবুকে শেয়ার করি, দুরের আত্মীয়রা দেখতে পাবে বলে। ছেলে মেয়েকে ভ্রমনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে লিখতে বলুন। ছোটবেলা থেকে লেখালেখি পাকাপোক্ত হয়ে গেলে, সামনে বেশ কাজে লাগবে ।
শিক্ষাজীবনে তো অবশ্যই এমনকি চাকরি বা পেশাজীবনে মানসিক চাপ আর উদ্বিগ্নতা ঝেড়ে ফেলতে চান ? আপনার পক্ষে বিষয়গুলো খুবই সহজ কাজ হবে যদি আপনি একজন ভ্রমণপিপাসু মানুষ হন। ভ্রমণে যতো পথ পাড়ি দেবেন মনের মধ্যে জমে থাকা চাপ, বিষণ্নতা সব কিছুই কমে যেতে থাকবে আর সেইসঙ্গে বাড়তে থাকবে সামাজিক দক্ষতা।
(১) ভ্রমণ মানেই নানা রকমের মানুষের সাথে মেলামেশা। হয়তো রুমমেটের সাথেই যাচ্ছেন বেড়াতে কিন্তু ট্রেনে পাশে বসা মানুষটির সাথে আলাপ জমাতে দোষ কোথায়? এতে আপনার সামাজিক দক্ষতা বাড়বে বৈকি। অনেকেই নতুন পরিবেশে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে। তাহলে এই সমস্যার সমাধানে ভ্রমণ হতে পারে ভালো সমাধান। নিজের জন্য কিছু সময় রাখা মানসিক চাপ কমানো এবং নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বেশ ভালো উপায়।
(২) অনেকে হয়তো ভাবেন এসময়টা বাড়ির দৈনন্দিন কাজে লাগালে সময়ের সদ্ব্যবহার করা হয়। তবে প্রাত্যহিক জীবনের গণ্ডি পেরিয়ে কিছুটা মুক্ত জীবনের স্বাদ নিতে ভ্রমণ খুবই জরুরি। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে নিজের চিন্তাগুলোকে গুছিয়ে আনতে ভ্রমণ কাজে লাগতে পারে।
ভ্রমণের পরিকল্পনা করার পর থেকেই মনের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি হবে। ভ্রমণে কী কী সঙ্গে নেবেন তার তালিকা তৈরি কিংবা ভ্রমণে গিয়ে কীভাবে সময় কাটাবেন তা নিয়ে ভাবতে ভাবতে আপনার মনে এক নতুন উদ্দেশ্য তৈরি হবে। নিজের এই লক্ষ্য পূরণ করার সাফল্য আপনাকে যে আত্মবিশ্বাস এনে দেবে তা আপনার অন্যান্য কাজের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
(৩) অনেক সময় দেখবেন ভ্রমণে একরকম পরিকল্পনা করে বের হয়েছেন কিন্তু শুরু থেকেই আপনার পরিকল্পনা মাফিক কিছুই হচ্ছে না। হয়তো দেখবেন আপনার গন্তব্যে উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পর টিকিট ভুলে গেছেন, কিংবা খারাপ আবহাওয়ার কারণে বের হতে পারছেন না কিংবা যাত্রা বাতিল করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মোটেও হতাশ হবেন না। একটু চেষ্টা করলে বিকল্প ঠিকই খুঁজে নিতে পারবেন। আর যখন ভ্রমণে বেরিয়ে এরকম কাজের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন তখন আপনার মনটাও নমনীয় হয়ে উঠবে। ভ্রমণ শেষে দেখবেন বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়ে যাবে।
(৪) ভ্রমণে আপনি যে বিষয়টি শিখবেন তা হচ্ছে ধৈর্য। আপনি খেয়াল করবেন ভ্রমণে বের হওয়ার পর থেকে আপনাকে বিভিন্ন সময় প্রয়োজন অনুযায়ী অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। কখনও লাইনে দাঁড়িয়ে, কখনও বা ট্রেনের জন্য আবার কখনও রেস্তোরাঁয় খাবারের জন্য অপেক্ষা। এই অপেক্ষায় থাকার বিষয়টি আপনার ধৈর্য আরও বাড়িয়ে তুলবে। আপনি আপনার অপেক্ষার সময়টুকু নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন। অনেক সময় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আরও অনেকের সঙ্গে অপেক্ষা করবেন। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কীভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে জীবনকে উপভোগ করবেন ভ্রমণের মাধ্যমে শিখতে পারবেন আপনি।
ভ্রমণ নিয়ে বিখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক মার্ক টোয়েন বলেছেন ‘আজ থেকে বিশ বছর পর আপনি এই ভেবে হতাশ হবেন যে,আপনার পক্ষে যা যা করা সম্ভব ছিল তা করতে পারেননি। তাই নিরাপদ আবাস ছেড়ে বেরিয়ে পড়ুন। আবিষ্কারের জন্য যাত্রা করুন,স্বপ্ন দেখুন আর শেষমেশ আবিষ্কার করুন’।
তথ্যসূত্র: এডুটিউব!