রান্নার কাজকে অনেকেই শিল্প বলে অভিহিত করে থাকেন। ইদানীং অবশ্য রান্নাবান্নায় সূক্ষ্ম হিসাব-নিকাশ ঢুকে গেছে। পুষ্টিগুণ নিয়ে এতটা চিন্তাভাবনা মনে হয় আগে ছিল না। সেদিক থেকে অনেকেই রান্নার কাজকে বিজ্ঞানের সঙ্গে তুলনা দিয়ে থাকেন। শিল্প আর বিজ্ঞানের মধ্যে এ নিয়ে বিতর্ক চলছেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি এমন একটি রেস্তোরাঁ চালু হয়েছে, যেখানে শিল্পের চেয়ে বিজ্ঞানের ছোঁয়াই বেশি। কারণ সেখানে রান্নার দায়িত্বে আছে রোবট!
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে চালু হয়েছে ‘স্পাইস’ নামের এই রেস্তোরাঁ। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে পাস করা ২০ জন রোবোটিকস প্রকৌশলী এই রেস্তোরাঁর উদ্যোক্তা। তাঁরা জোট বেঁধেছেন বিখ্যাত শেফ ড্যানিয়েল বুলিদের সঙ্গে। স্পাইসে আছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে খাবার রান্না করার সাতটি যন্ত্র। মাত্র তিন মিনিট বা তারও কম সময়ে এই যন্ত্রগুলো খাবার রাঁধতে পারে।
রেস্তোরাঁর সহপ্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ফারিদ জানান রোবটের খাবার রান্নার বিস্তারিত। তিনি বলেন, ‘যখনই আপনি খাবারের অর্ডার দেবেন, তখনই আমাদের রেস্তোরাঁয় থাকা উপকরণ সরবরাহ করার ব্যবস্থাটি চালু হয়ে যাবে। রেফ্রিজারেটর থেকে উপকরণ সংগ্রহ করে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সঠিক আকারে কাটা হবে। এরপর তা ৪৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় বিশুদ্ধ করা হবে। পরে শুরু হবে রান্নার প্রক্রিয়া। সব কাজ শেষে যন্ত্র থেকে বের হয়ে একটি বাটিতে পৌঁছে যাবে রান্না করা খাবার। এরপর তা সাজিয়ে-গুছিয়ে পরিবেশন করা হয়।’
স্পাইসের দাবি, তারাই বিশ্বের প্রথম রেস্তোরাঁ, যার ‘রোবোটিক রান্নাঘর’ আছে এবং তা দিয়ে জটিল রেসিপির খাবার তৈরি করা যায়। উদ্যোক্তারা এই রেস্তোরাঁর প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছিল ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে। প্রথমে প্রোটোটাইপ দিয়ে শুরু হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এখন তা বাস্তব রূপ পেয়েছে।
মজার বিষয় হলো, গ্রাহকদের জন্য এই রেস্তোরাঁয় গ্রাহকদের খাবারের টেবিলে আছে একটি করে টাচ স্ক্রিন। তাতে নিজেদের পছন্দমতো পরিমাণের উপকরণ বাছাই করতে পারবেন গ্রাহকেরা। স্ক্রিনে ওই খাবারের ক্যালরির পরিমাণও জানা যাবে। খাবারের প্রকার চূড়ান্ত করার পর কাজ শুরু করে দেবে রোবট। খাবার তৈরির পর কম্পিউটার স্ক্রিনে জানিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজটিও করে রোবট।
মাইকেল ফারিদ বলেন, ‘আমরা যে রোবটটি তৈরি করেছি, তার কোনো মানুষের আকৃতি নেই। এখন এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। গ্রাহকদের আরও ভালো অভিজ্ঞতা দিতে চাই আমরা।’
রেস্তোরাঁয় রোবটের ব্যবহার এই প্রথম নয়। তবে জটিল ধরনের রান্নায় রোবটের ব্যবহার আগে হয়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পরিচারক ও খাবার পরিবেশনের ক্ষেত্রে রোবটের ব্যবহার করা হয়েছে।
সহপ্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ফারিদ বলেন, রান্নায় রোবট ব্যবহারের কারণে একদিকে যেমন কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে কমে গেছে পরিচালন ব্যয়। রেস্তোরাঁটি চালানোর জন্য প্রাথমিকভাবে কিছু মানুষকেও নিয়োগ দিতে হয়েছে। মূলত গ্রাহকদের প্রযুক্তিগত দিকগুলো বোঝাতে এবং রান্না করা খাবারের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য এসব কর্মী নেওয়া হয়েছে।
তথ্যসূত্র: প্রথমআলো ডটকম।