1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

রোবট দখল করছে নিন্ম মজুরির মানুষের চাকরি!

বিগত কয়েক বছরে রোবট কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আগমনের কারণে ব্যাপক হারে চাকরি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ভয় দেখা দিয়েছে। তবে চাকরি ধ্বংস হওয়ার এই হুমকি আসলেই কতটুকু ভীতিকর সেটা অনুধাবন করা একটু কঠিন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাকরির বাজারে রোবটের ঐতিহাসিক প্রভাবের দিকে লক্ষ্য রেখে ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইকোনমিক রিসার্চ একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের আবির্ভাবের দরুণ চাকরি ধ্বংস হওয়ার যে বিতর্ক উঠেছে তাতে গবেষণাটি কিছু বাস্তবিক তথ্য-উপাত্ত সংযোজন করেছে।

অর্থনীতিবিদ ড্যারন এসেমোগলু ও পেসকুয়াল রেস্ট্রেপো ১৯৯০ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে আমেরিকার চাকরির বাজার পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাঁরা বিভিন্ন এলাকা ও ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মসংস্থানের হার প্রত্যক্ষ করেছেন। একই সাথে তাঁরা বিভিন্ন নিয়ামকের প্রভাবগুলো নিয়ন্ত্রণ করেছেন। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে চীন থেকে ক্রমবর্ধমান আমদানি ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রগুলো আমেরিকার বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলা যায়।

তাঁরা দেখেছেন, কর্মক্ষেত্রে একটি রোবট সংযোজন করা হলে স্থানীয় এলাকায় ৩ থেকে ৫.৬টি চাকরি হ্রাস পায়। এদিকে প্রতি এক হাজার জন শ্রমিকের সাথে একটি নতুন রোবট সংযোজন করলে তদসংলগ্ন এলাকার মজুরি ০.২৫ থেকে ০.৫ শতাংশ হ্রাস পাবে।

স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র ও কর্মসংস্থানের ব্যাপারে আমরা যে ভয়াবহ বাগাড়ম্বর শুনে থাকি তার কাছে এই উপাত্তসমূহ খুবই ক্ষুদ্র মনে হয়। তবে রোবটকে আমরা সচরাচর যেভাবে সংজ্ঞায়িত করে থাকি, সেভাবে গবেষণায় তা ব্যবহার করা হয়নি। গবেষকরা ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন অর্গানাইজেশন (আইএসও)-র রূপরেখা অনুসারে “ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট”-এর সংজ্ঞায়ন করেছেন। এসব রোবট “স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত, পুনরায় প্রোগ্রামযোগ্য [এবং] বহুমুখী।” এই সংজ্ঞানুসারে একটি কনভেয়ার বেল্টের মতো মামুলি জিনিস অথবা মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের মতো সফটওয়্যার কোনোটিই রোবট নয়।

কর্মক্ষেত্রে একটি রোবট সংযোজন করা হলে স্থানীয় এলাকায় ৩ থেকে ৫.৬টি চাকরি হ্রাস পায়। এদিকে প্রতি এক হাজার জন শ্রমিকের সাথে একটি নতুন রোবট সংযোজন করলে তদসংলগ্ন এলাকার মজুরি ০.২৫ থেকে ০.৫ শতাংশ হ্রাস পাবে। এটা স্মরণ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, একটি জনগোষ্ঠীর সবাই চাকরি ও মজুরির এই ক্ষতি সমানভাবে অনুভব করে না। যদিও শিল্পোৎপাদিত রোবটের আগমনের ফলে “অবধারিতভাবে সকল পেশার উপর নেতিবাচক প্রভাব” পড়ে, তবুও কিছু চাকরি প্রত্যাশিতভাবে অন্যগুলোর চেয়ে বেশি নাজুক অবস্থায় পতিত হয়। এসমোগলু ও রেস্ট্রেপোর ভাষ্যমতে, নৈমিত্তিক হস্তচালিত পেশা, কারখানার শ্রমিক, ব্লু কলার ও অ্যাসেম্বলি কর্মী, যন্ত্রচালক ও পরিবহন শ্রমিকদের চাকরি যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস পাচ্ছে। কেবল ব্যবস্থাপনার চাকরিগুলোর উপর কোনো প্রভাব পড়েনি।

এই গবেষণার দিকে খেয়াল করলে একটি প্রশ্নই মাথায় আসেঃ কী ঘটতে যাচ্ছে সামনের দিনগুলোতে? এই অবস্থা কি চলতেই থাকবে নাকি এর চেয়েও শোচনীয় হবে? এসেমোগলু ও রেস্ট্রেপো বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবটের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। ফলে এসব রোবটের কারণে যে চাকরিগুলো নষ্ট হয়েছে তার সংখ্যাও সীমিত। তবুও দেখা যাচ্ছে, গবেষকদের ধারণা অনুযায়ী পরবর্তী দুই দশক যাবত রোবটের বিস্তৃতি এভাবে চলতে থাকলে এর সম্মিলিত ভবিষ্যৎ তাৎপর্য অনেক বেশি বোধগম্য হবে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবটের বিস্তৃতি এক জিনিস; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহযোগে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবটের বিস্তৃতি ও স্বচালিত গাড়ির (ও ট্রাক) মতো উদ্ভাবনগুলোর বিস্তৃতি আরেক জিনিস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মুচিন বলেছেন, কর্মসংস্থানের উপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রায়নের প্রভাব নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। মুচিন বলেন, “অকপটেই বলছি, আমি আশাবাদী। আমি মনে করি এটাই উৎপাদনশীলতা সৃষ্টি করে।” এটা সত্য হতে পারে, তবে প্রমাণ বলছে যে কর্মসংস্থান এখনো ঝুঁকিতে রয়েছে।

তথ্যসূত্র: আত্মউন্নয়ন ডট ওআরজি।

More News Of This Category