প্রয়োজনে অনেকে ঋণ নিয়ে থাকেন। আমরা কখনো ব্যাংক বা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আবার কখনো বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধার করি। ঋণ বা ধার করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রেখে পা বাড়ানো উচিত, নতুবা আইনি জটিলতা থেকে শুরু করে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে।
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজার জিল্লুর রহমান খান বলেন, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে ঋণ গ্রহণ করা উচিত। বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ছোট অঙ্কের অর্থ ধার করুন কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বড় অঙ্কের অর্থ ধার করুন—দুই ক্ষেত্রেই বেশ সতর্ক থাকতে হবে। ঋণ ও ধার গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
১. টাকা কেন প্রয়োজন তা আগে ভাবুন: অনেক ক্ষেত্রে হয়তো অর্থের প্রয়োজন নেই, তারপরেও আমরা ঋণ গ্রহণ করি। এ ক্ষেত্রে কেন অর্থ প্রয়োজন, তা কোন ক্ষেত্রে ব্যয় করবেন, তা একটি কাগজে লিখে অঙ্ক কষে কারণগুলো লিখে ফেলুন। খুব প্রয়োজন না হলে কখনোই অনর্থক ঋণের বোঝা মাথায় কেন চাপাবেন?
২. বিকল্প উপায় মাথায় রাখুন: আপনি হয়তো মোটরসাইকেল কেনার জন্য অর্থ ধার করছেন। অথচ সাইকেল কিনলেই আপনি প্রতিদিন অফিসে যেতে পারছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। কী করতে অর্থ ঋণ নিচ্ছেন তার বিকল্প উপায়গুলো ভেবে সিদ্ধান্ত নিন।
৩. টাকা ঠিকমতো ব্যবহারের পরিকল্পনা করুন: ঋণ নেওয়ার আগে থেকে টাকা কীভাবে ব্যবহার করবেন তা পরিকল্পনায় রাখতে হবে। হুট করে অনেকগুলো টাকা পেয়ে গেলেন আর তা কোনো কাজেই ব্যবহার করলেন না, এমনটা করা উচিত নয়।
৪. টাকা কীভাবে খরচ করছেন তা মাথায় রাখুন: ঋণের টাকা ঠিকপথে ব্যয় করছেন কি না তা খেয়াল রাখুন। টাকার সদ্ব্যবহারের দিকে খেয়াল রাখতেই হবে। টাকার কারণে যেন বিলাসিতা না জন্মে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
৫. সম্পর্ক বজায় রাখুন: যাঁর কাছ থেকে টাকা ধার করছেন, তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখুন। কোনো ক্ষেত্রে টানাটানির সম্পর্ক তৈরি হলে তা মিটিয়ে ভালো সম্পর্ক তৈরিতে মনোযোগ দিন। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ শোধের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে ব্যাংক ম্যানেজার কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিজের সমস্যার কথা জানাতে পারেন।
৬. আইনের খুঁটিনাটি ও শর্তগুলো জেনে নিন: বিভিন্ন ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট আইনগুলো সম্পর্কে জেনে রাখতে পারেন। কোনো শর্ত থাকলে সে সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে জেনে নিন। ব্যাংক-বিমাসংক্রান্ত বিভিন্ন আইনের কঠিন ভাষা না বুঝতে পারলে আইনজীবী কিংবা অভিজ্ঞ কারও পরামর্শ নিতে পারেন।
৭. কাগজ-কলমে হিসাব রাখুন: আমরা অনেক ক্ষেত্রেই ঋণ বা ধার করার সময় মুখে মুখে হিসাব রাখি। মুখস্থ হিসাব রাখলে ভুল হওয়ার সুযোগ থাকে। কাগজ-কলমে কত টাকা নিচ্ছেন, কত টাকা শোধ করছেন তার হিসাব রাখুন। প্রয়োজনে অনলাইনে বিভিন্ন হিসাব রাখার সফটওয়্যার বা মুঠোফোনের অ্যাপস ব্যবহার করতে পারেন।
৮. টাকা শোধের কথা মাথায় রাখতে হবে: টাকা পাওয়ার পরে কীভাবে টাকা শোধ করবেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিয়মিত হারে টাকা শোধে যেন জটিলতা তৈরি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। আপনি হয়তো বেতন থেকে ঋণ শোধ করেন, সে ক্ষেত্রে কোনো কারণে ঋণ শোধের ঝুঁকি থাকলে বিকল্প পথ ভেবে রাখুন।
৯. প্রয়োজনে অর্থ ধার করুন: প্রয়োজন ছাড়া কখনোই অর্থ ধার করবেন না। নিজের প্রয়োজনকে বোঝার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনের মাত্রা বুঝে ঋণ নিন। হুট করে সিদ্ধান্ত নেবেন না।
১০. আয় বুঝে ব্যয় করুন, সঞ্চয় করুন: আপনার যত আয় ততটাই ব্যয় করুন। নিয়মিত সঞ্চয়ের অভ্যাস করুন। সঞ্চয়ের অভ্যাস ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
সূত্র: ফোর্বস ও মানি ক্র্যাশার