ব্যর্থতা আসলে কি? আপাত দৃষ্টিতে নেতিবাচক ও খারাপ জিনিসি মনে হলেও এটা আসলে একটা জরুরী জিনিস যা ছাড়া আমাদের জীবন পরিপূর্ণ নয়। ব্যর্থতা আছে বলেই সফলতার এত মূল্য। ব্যর্থতার মধ্যদিয়েই সফলতার সোপান রচিত হয়। পৃথিবীর বিখ্যাত সব সফল মানুষের সফললতার পেছনে রয়েছে প্রথমদিকের ব্যর্থতার গল্প। কারো কারো জীবনে বড়ো বড়ো ব্যর্থতাই পরের সফলতার কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এছাড়া বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হওয়ার পরই আমরা জানতে পারি কাজটি কিভাবে করলে সফল হওয়া যেত বা সফল হওয়া যায়। এ ধরনের মানে ব্যর্থতা থেকে উত্তরণ করে সফলতার উদাহরণ যারা সৃষ্টি করেছেন তাদের উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবেনা।
তাহলে আমরা বরং একটু আলোচনা করে নিই কিভাবে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেয়া যায় সে বিষয়ে।
হাল না ছেড়ে লেগে থাকা
আমরা অনেকসময় অল্পতে দম হারিয়ে ফেলি। বেশীরভাক্ষেত্রেই মানুষ আসলে প্রথমবার ব্যর্থ হয়ে পরে কিন্তু একসময় সফল হয়ে যায়। কিন্তু কিছু মানুষ অল্পতে হাল ছেড়ে দেয়। একবার ব্যর্থ হয়েই আর সামনে আগানোর সাহস হারিয়ে ফেলে। এজন্য প্রয়োজন লেগে থাকা। তবে লেগে থাকার অর্থ এই নয়যে একটি কাজ আমি প্রথমবার করতে চেয়েছি বারবারেই সে একইকাজ একইভাবে করা। এরমধ্যে আমি যদি কাজের ধরণ ও কাজ দুটো্ বা যেকোনো একটি বদলে নিলে হয়তো নতুন ফলাফল পেতে পারি।
ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান
অনেক সময় আমরা কোনোকিছুতে সফল বা ব্যর্থ হলে নিজেদের ভাগ্য বা কপালের লিখন বলে মেনে নিয়ে তা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি। ফলে কোন ভুল বা দোষের কারণে ব্যর্থ হয়েছি সেটি পুরোপুরি আড়ালে চলে যায় আর আমরা বার বার ভুল করতেই থাকি। ভুলের পূনরাবৃত্তি যেন ভুলচক্রে বন্দি জীবনের মতো। আমাদের উচিত ব্যর্থতার সঠিক কারণ অনুসন্ধান করা। এজন্য কোনো কিছু ঘাটতি থাকলে সেটা পূরণ করা এবং নিজের কোনো ভুল থাকলে সেটা পরেরবারের জন্য শুধরে নেয়া।
অন্যকে দোষারোপ না করা
আমাদের আরেকটা খুব সাধারণ সমস্যা হলো নিজের ভুল দোষ বা ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানে আমরা অন্যকে দোষারোপ করি। আমরা বলি অমুক এই কাজটা করেছে বলে আমার এই সমস্যা হয়েছে বা তমুক এই কাজটা করতে পারেনি বলে আমার এই কাজটা হয়নি। আমরা ভাবিনা যে অমুক এই কাজটা করলে আমার কাজটা আমি নিশ্চই বিকল্প উপায়ে করতে পারতাম অথমা তমুক কোনো একটা কাজ ঠিকমতো করেনি বলে আমি দায়িত্ব নিয়ে পুরো কাজটা সঠিকভাবে করতে পারতাম। নিজের দায়িত্ব ও ক্ষমতার কথা আমরা ভুলে যাই। পরষ্পরের দোষারোপের এই সংস্কৃতি কখনো কখনো স্বাভাবিক ও সুন্দর একটি সম্পর্ককে নষ্ট করে দিতে পারে। তাই অন্যের দোষ খোজার আগে নিজের ভুল ঠিক করে সেটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়কি?
কোনো অবস্থাতেই হতাশ না হওয়া
কিছু কিছু মানুষ অল্পতেই হতাশ হয়ে যান। বিপদের সময় হুশজ্ঞান হারিয়ে দ্বিঘীদ্বিক হারিয়ে ফেলি। ফলে ব্যর্থতার পর আবার ব্যর্থতা তারপর আবার ব্যর্থতা । ব্যর্থতার যেন একটা চক্র তৈরী হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে আজ ব্যর্থ হয়েছি কাল সফল হওয়ার জন্য। আর ব্যর্থতার মধ্যদিয়েই সহনশীলতা, ধৈর্য ইত্যাদি শেখা ও চর্চার সুযোগ রয়েছে। এসব কারণে মানুষ বিনয়ী ও নিরহংকার হয়। আর এই দুটি জিনিস মানুষকে অপরের কাছে প্রিয় করে তোলো। এই প্রিয় হওয়ার পর তার কমুউনিটিও তাকে সফল হতে নানাভাবে রসদ জোগায়। এভাবে একজন মানুষ ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে পারে।
আগে থেকে সতর্ক থাকা
যেকোনো কাজেই সফলতার পাশপাশি ব্যর্থতাও একটা বাস্তবতা। তাইবলে শুধু ব্যর্থ হলে কি চলবে? অধবা ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে দিলেও চলবেনা। কোনো কাজে সফলতার হার কতো? কি কি নিয়ামকগুলো কাজটিকে সফল ও ব্যর্থ হতে দেয়না তা আগে থেকে জানা থাকলে অনেকক্ষেত্রে ব্যর্থততার এই হার কমানো যায়। এবং কি কি কারণে ব্যর্থ হতে পারে সে কারণগুলো যেন জেগে না ওঠে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনটাও ভাবা হয়। তবে সবচে ভালো ব্যাপার হলো ব্যর্থ হলে সে সময়ে কিভাবে সেটাকে সামাল দেয়া হবে আগে থেকে তার একটা প্রস্তুতি থাকা দরকার। পূর্বের সতর্কতা ব্যর্থতাতে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে থাকবে।
শুধু যে নিজে ব্যর্থ হলে তা থেকে শিক্ষা নেব বা শিক্ষা নিতে হবে বিষয়টা এমন নয়। অন্যের ব্যর্থতা থেকেও শিক্ষা নিতে পারি। আর বুদ্ধিমানেরা কিন্তু তাই করে।
লেখক: জাহাঙ্গীর আলম শোভন।
তথ্যসুত্র: কিনলে জবস ডটকম।