আমাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করা প্রায়ই হয়ে ওঠে না। এর কারণ হিসেবে আমরা তুলে ধরি নানা অবাস্তব বিষয়কে। এগুলোকে বাস্তবে অজুহাত হিসেবেই ধরা যায়। যদিও এসব অজুহাত বাদ দিয়ে সঞ্চয় শুরু করা কঠিন কোনো কাজ নয়। এ প্রতিবেদনে থাকছে এমন আটটি অজুহাত, যা বাদ দিয়ে সঞ্চয় শুরু করলে অদূর ভবিষ্যতে আপনি হাতেনাতে তার ফল পাবেন।
আমি খুবই ব্যস্ত : একথা সত্য যে বর্তমান সময়ে আমরা অনেকেই ব্যস্ত থাকি। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে, নিজের জন্য একেবারেই সময় জোগাড় করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে ‘আমি খুবই ব্যস্ত’ কথাটা বলার মানে দাঁড়ায় ‘আপনি অলস।’ প্রতি মাসে যদি নির্দিষ্ট একটি অঙ্কের অর্থ সঞ্চয় করতে চান তাহলে তার স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা আছে। আপনার টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে নিজে নিজেই কেটে নিতে পারে এ ব্যবস্থায়। আর এ জন্য আপনার সদিচ্ছাই যথেষ্ট।
আমার পর্যাপ্ত অর্থ নেই : প্রত্যেকের হাতেই কিছু না কিছু অর্থ থাকে, যা দিয়ে তারা সঞ্চয় শুরু করতে পারে। মোবাইল বিল কিংবা ইন্টারনেটের খরচ কিছুটা কমালে কিংবা সিগারেটের মতো পণ্য থেকে সংযমি হলেই কিছুটা অর্থ সঞ্চয় করা সম্ভব। যার অর্থ দাঁড়ায়, আপনার টাকা থাকলেও তা সঠিক জায়গায় খরচ করছেন না।
আমার বয়স অনেক কম : অনেকেই সঞ্চয় শুরুর জন্য তার বয়স হয়নি বলে মনে করেন। ফলে অনিয়ন্ত্রিত খরচ করে বহু টাকা নষ্ট করেন। যদিও সঞ্চয় করে রাখতে পারলে এ টাকাগুলো দিয়েই ভালো কিছু করা সম্ভব হতো। এ জন্য আপনার মনে রাখতে হবে, সঞ্চয় যত তাড়াতাড়ি শুরু করবেন, আপনার টাকার অঙ্কও তত বড় হবে। দেরি করে সঞ্চয় শুরু করলে শেষ পর্যন্ত আপনার অপর্যাপ্ত অর্থ জমতে পারে। এছাড়া ভবিষ্যতে কী হয়, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এখন আপনার হাতে থাকা টাকা সঞ্চয়ের সুযোগ পেলেও ভবিষ্যতে হয়ত এ সুযোগ নাও পেতে পারেন।
আমার অনেক বয়স হয়ে গেছে, আর সম্ভব না : আজকের জমানো সামান্য টাকাই ভবিষ্যতে আপনার কোনো উপকারে আসবে তা কেউ বলতে পারে না। এ কারণে সামান্য অর্থ সঞ্চয়ের সুযোগ পেলেও তা হাতছাড়া করা উচিত নয়। অবসর নেয়ার পরে আপনার আয় থাকবে না বললেই চলে। সে সময়ের কথা চিন্তা করে বর্তমানে যতটুকু সম্ভব সঞ্চয় করে রাখা উচিত।
আমার অফিস থেকে সঞ্চয়ের কোনো সুযোগ নেই : অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের বেতনের অংশ সংরক্ষণের সুযোগ দেয়। কিন্তু আপনার যদি সেই সুযোগ নাও থাকে তাহলেও সঞ্চয় থেকে পিছিয়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ সুযোগ দেয়। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন, প্রতিষ্ঠানটি যেন অনুমোদিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান হয়।
আমার জীবনসঙ্গী সঞ্চয় করে, আমার প্রয়োজন নেই : দম্পতিদের একজন সঞ্চয় করলে অন্যজন যে করতে পারবে না, এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। উভয়ে আলাদা করে সঞ্চয় করলে আয়করের দিক দিয়ে সুবিধা পাওয়া যায়। এ ছাড়াও নিজের নামে সঞ্চয় শুরু করলে তা আপনি সহজেই ম্যানেজ করতে পারবেন।
লভ্যাংশ খুব কম : অনেকেই টাকা সঞ্চয় করতে চান না, লভ্যাংশ কম হওয়ার অজুহাতে। কিন্তু এ কারণে সঞ্চয় বাদ দিলে আদতে তা আপনার ক্ষতিই করবে। কারণ নিরাপদে ও নিশ্চয়তার সঙ্গে সামান্য টাকা বাড়তে থাকলেও তা যথেষ্ট প্রয়োজনে আসতে পারে। কিন্তু কোনো ব্যবসায় বিনিয়োগ মানে তার পেছনে বহু সময় ও পরিশ্রম ব্যয় করতে হয়। এ ছাড়াও অন্য কোথায় বিনিয়োগ করলে সে অর্থ থেকে লাভ হবে নাকি ক্ষতি হবে, তা কেউ বলতে পারে না। ভবিষ্যতে এ অর্থ আপনার কত কাজে লাগবে, তা আপনি অনুমানও করতে পারবেন না।
ভবিষ্যতে সঞ্চয় করব : আমরা অনেকেই ভবিষ্যতে সঞ্চয় করার চিন্তা করে বর্তমানকে অবহেলা করি। কিন্তু এ ভবিষ্যৎ কখনো শুরু হবে কি না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বর্তমান সময়কেই তাই আপনার সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া উচিত। আজ সঞ্চয় শুরু করলে আপনি এর ফলাফল ভবিষ্যতে পাবেন। আর আজ শুরু না করলে ভবিষ্যতে এ জন্য আক্ষেপ করতে হতে পারে। সূত্র ও ছবি: ইন্টারনেট