বাংলাদেশী পতাকাবাহী সর্বশেষ সমুদ্রগামী জাহাজ নিবন্ধিত হয়েছিল ২০১২ সালে। এরপর আর কোনো জাহাজের নিবন্ধন নেননি দেশীয় উদ্যোক্তারা। উপরন্তু পুরনো জাহাজগুলো স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করে দেয়ায় বাংলাদেশী পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা বর্তমানে নেমে এসেছে ৩৮টিতে। সরকারের প্রণোদনায় সম্প্রতি আবারো সমুদ্রগামী জাহাজ আমদানিতে ঝুঁকছেন উদ্যোক্তারা। প্রণোদনার আওতায় ৬০ হাজার টন ধারণক্ষমতার একটি জাহাজ এরই মধ্যে আমদানি করেছে এমজেএল। নতুন করে জাহাজ আমদানির প্রক্রিয়ায় রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দেয়া মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট অব্যাহতির আওতায় এসব জাহাজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এ সুবিধার আওতায় কোরিয়া থেকে এমটি আকতিয়া নামক ৬০ হাজার ৭ টন ধারণক্ষমতার (ডেড ওয়েট টনেজ বা ডিডব্লিউটি) একটি বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজ আমদানি করেছে এমজেএল (এস) পিটিএল লিমিটেড। বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ বছরের পুরনো জাহাজটি আমদানিতে ভ্যাট বাবদ প্রায় ২০ কোটি টাকা অব্যাহতির সুযোগ পেয়েছে কোম্পানিটি।
এমজেএল বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজম জে চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশী পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজের মন্দাবস্থার কারণে আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতির সুযোগ দিয়েছে এনবিআর। এ সুবিধার আওতায় নতুন একটি জাহাজ আমদানি করেছি। সমুদ্রে আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহন আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশীয় প্লাগ প্রটেকশন অ্যাক্ট প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বর্তমানে সংসদে থাকা আইনটি পাস হলে মোট পণ্য পরিবহনের অর্ধেক বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজ পাবে। এটি হলে দেশে এ শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। আমরাসহ বড় উদ্যোক্তারা এ খাতে আরো এগিয়ে আসবেন।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে আমদানি-রফতানিতে ৬৪ হাজার কোটি টাকার ফ্রেইট চার্জ থেকে বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজগুলো পেয়েছে মাত্র ৯ হাজার কোটি টাকা। এ অবস্থায় শিল্পোদ্যোক্তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শর্তসাপেক্ষে জাহাজ আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি দিয়ে চলতি বছরের ১৩ মার্চ প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। আমদানিকৃত জাহাজের লোকবলের ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ বাংলাদেশী নাগরিক নিয়োগ এবং ১৫ বছরের বেশি পুরনো হবে না শর্তে ন্যূনতম পাঁচ হাজার টনের সমুদ্রগামী জাহাজ আমদানিতে সব ধরনের ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়।
এনবিআরের এ অব্যাহতি সুবিধায় এমজেএল ছাড়াও সম্প্রতি চীন থেকে ৩৯ হাজার ডিডব্লিউটি ধারণক্ষমতার একটি জাহাজ আমদানির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। আগামী ৪ জুলাই জাহাজটির দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। চলতি বছর একই ধারণক্ষমতার আরো পাঁচটি জাহাজ আমদানি করছে শিপিং করপোরেশন। এর মধ্যে তিনটি প্রডাক্ট অয়েল ট্যাংকার ও তিনটি বাল্ক ক্যারিয়ার। জাহাজগুলোর মোট মূল্য ১ হাজার ৪৪৮ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সবগুলো জাহাজ আমদানির বিপরীতে প্রযোজ্য ভ্যাট অব্যাহতি চেয়ে এনবিআরে আবেদনও করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া বড় জাহাজ আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি চেয়ে এনবিআরে আবেদন করেছে ক্রাউন মেরিনার্স লিমিটেড। আবেদন করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে কবির স্টিল, আকিজ ওশান লাইন লিমিটেড, দেশবন্ধু ও সিটি গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠান। তবে ভ্যাট অব্যাহতির ক্ষেত্রে এনবিআরের শর্তকে কঠোর উল্লেখ করে তা আবারো সংশোধনের দাবি জানিয়ে আপাতত ধীরে চলো নীতিতে রয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ ওশানগোয়িং শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ও আকিজ ওশান লাইন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ বশির উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, এনবিআরের ভ্যাট অব্যাহতির আদেশে পতাকাবাহী জাহাজে বাংলাদেশী নাগরিকদের নিয়োগের বিষয়টি গ্রহণযোগ্য হলেও বাকি শর্তগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। ১৫ বছরের পুরনো হওয়ার যে শর্ত দেয়া হয়েছে, তা আমদানিনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। পাথর, কয়লা ও ক্লিংকারের মতো পণ্য আমদানির কারণে এখানে আরো বেশি পুরনো জাহাজ ব্যবহৃত হয়। এ বিবেচনায় ২৫ বছরের পুরনো জাহাজ আমদানির সুযোগ দিতে হবে। এছাড়া অঙ্গীকারনামা শিথিল করারও প্রয়োজন ।
তথ্যসূত্র: বনিক বার্তা।