জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে এবার বেড়েছে কুরিয়ার সার্ভিসে পণ্য পরিবহনের খরচও। এ খরচ সর্বনিম্ন স্তরে বেড়েছে পণ্যভেদে ৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। পণ্যের ধরন ও ওজনভেদে এ খরচ আরও বেশি। পাশাপাশি কুরিয়ার কোম্পানিভেদেও খরচে কিছুটা কমবেশি রয়েছে। একাধিক কুরিয়ার কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
দেশের সুপরিচিত কুরিয়ার কোম্পানি এস এ পরিবহন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে সর্বনিম্ন স্তরে পার্সেল পরিবহনে এখন নিচ্ছে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা। আগে এ খরচ ছিল ১৫০ টাকা। এ ধরনের পার্সেলে সাধারণত দুই–তিন কেজি ওজনের পণ্য পাঠানো যায়। ওজন তার চেয়ে বেশি হলে খরচ আরও বেশি। এ ছাড়া সুন্দরবন কুরিয়ারও ১০ আগস্ট থেকে পণ্য পরিবহনে খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের সেবার ধরনভেদে কুরিয়ারের খরচ ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাড়িয়েছে।
এ ছাড়া অনলাইনভিত্তিক কুরিয়ার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ই-কুরিয়ার তাদের এক্সপ্রেস সার্ভিসে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি টাকা নিচ্ছে। এ ধরনের সেবার আওতায় সাধারণত প্রতিষ্ঠানটি আউটলেট পর্যায়ে বুকিং দেওয়া পণ্য পরিবহন করে থাকে। এর বাইরে অন্যান্য সেবার ক্ষেত্রেও কুরিয়ারের খরচ আগামী রোববার থেকে ২০ শতাংশ বাড়ানো হবে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা বিপ্লব ঘোষ।
হঠাৎ করে কুরিয়ারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন অনেকে। বিশেষ করে কুরিয়ার সেবা ব্যবহার করে পণ্য সরবরাহকারী অনলাইনকেন্দ্রিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। অনলাইনকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে পণ্য পাঠাতে তাঁদের খরচ বাড়বে। তাতে বিক্রি কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাজশাহীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাজিক লণ্ঠন প্রকাশন’ আগে যেকোনো পরিমাণ বই পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে কুরিয়ার বাবদ খরচ নিত ২০ টাকা। কুরিয়ার খরচ বেড়ে যাওয়ায় এখন চিন্তিত তারা। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সোহাগ আবদুল্লাহ বলেন, প্রকাশনা খাতের প্রায় সব পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এর মধ্যে কুরিয়ার খরচও বেড়ে গেল। এটা আমাদের জন্য বড় দুশ্চিন্তার বিষয়।
একাধিক কুরিয়ার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ছোটখাটো ডকুমেন্ট পাঠাতে ৩০ টাকা খরচ নেওয়া হতো। এখন সেটি বাড়িয়ে ৩৫ টাকা করা হয়েছে। তবে সেটি সংশ্লিষ্ট কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় থেকে ডকুমেন্ট সংগ্রহের ক্ষেত্রে। যদি কোনো ডকুমেন্ট কারও বাসা বা অফিসে পৌঁছে দিতে হয়, সে ক্ষেত্রে খরচ আরও ৫ টাকা বেশি, অর্থাৎ ৪০ টাকা। তাতে দেখা যাচ্ছে, ৩০ টাকার কুরিয়ার সেবার মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ টাকায়।
এ নিয়ে জানতে গতকাল সন্ধ্যায় সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের কল সেন্টারে ফোন করেন এ প্রতিবেদক। কল সেন্টারে দায়িত্ব পালনকারী প্রতিষ্ঠানটির কর্মী আবদুর রাজ্জাক জানান, ১০ আগস্ট থেকে তাঁদের সেবার মাশুল বাড়ানো হয়েছে। ৩০ টাকার সেবা মাশুল বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর ১০০ টাকার সেবা মাশুল বাড়িয়ে করা হয়েছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা।
ই-কুরিয়ারের বিপ্লব ঘোষ গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, আমরা চালডালসহ বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের পণ্য পরিবহনে কাজ করে থাকি। আগে চালডালের সাভারের গুদাম থেকে এক গাড়ি পণ্য তাদের চট্টগ্রামের গুদামে পৌঁছে দিতে কুরিয়ার মাশুল নিতাম ৯ হাজার টাকা। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর সেই মাশুল বাড়িয়ে এখন ১১ হাজার টাকা করা হয়েছে। তিনি জানান, কুরিয়ারের এ বাড়তি খরচ গিয়ে পড়বে পণ্যের দামের ওপর।
শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম বা ঢাকা থেকে দেশের অন্যান্য জেলায় কুরিয়ারের ক্ষেত্রে নয়, কুরিয়ারের খরচ বেড়েছে দেশের সব এলাকায়। আর বাড়তি সেই খরচের কথা শুনে রাজশাহী থেকে নোয়াখালীতে পার্সেল পাঠাতে গিয়ে ধাক্কা খান সায়েম হোসেন নামের এক তরুণ। আগে তিনি যে পার্সেল পাঠাতেন ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়, তাঁর জন্য এখন নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা।
পার্সেল খরচ কেন এত বাড়ানো হলো তা রাজশাহীর এস এ পরিবহনের বুকিং সহকারী কামরুল হাসানের কাছে জানতে চান সায়েম। উত্তরে কামরুল জানান, ঢাকা থেকে তাদের সর্বনিম্ন কুরিয়ার খরচ ২০০ টাকা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরদিন থেকেই রাজশাহীর বিভিন্ন কুরিয়ার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান পার্সেল বহনের খরচ বাড়িয়ে দেয়। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনোটি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত খরচ বাড়ানোর নোটিশও ঝুলিয়ে দিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার শহরের রেইনবো এক্সপ্রেস পার্সেল সার্ভিস সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, ওই প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যালয়ের সামনে ব্যানার টাঙিয়ে খরচ বাড়ানোর নোটিশ দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, জ্বালানি তেল ও গাড়ির যন্ত্রাংশের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বুকিং রেট ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হলো।
জননী এক্সপ্রেস পার্সেল সার্ভিস ৫ আগস্টের আগে রাজশাহী থেকে দেশের যেকোনো প্রান্তে পার্সেল পরিবহনের ক্ষেত্রে খরচ নিত সর্বনিম্ন ৮০ টাকা। ৬ আগস্ট থেকে তা বাড়িয়ে করেছে ১০০ টাকা। রাজশাহীর বেশির ভাগ কুরিয়ার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো পার্সেল বহন করে থাকে। তারা চিঠি বা ডকুমেন্ট কম নেয়। তবে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস সব ধরনের পার্সেলই বহন করে।
সুন্দরবন কুরিয়ারের রাজশাহী কার্যালয়ে টাঙানো নোটিশে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি চিঠি-ডকুমেন্ট পরিবহনে আগে ৩০ টাকা খরচ নিত। ওই টাকার মধ্যেই তাঁরা হোম বা অফিস ডেলিভারি দিত। এখন তা তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। সুন্দরবন কুরিয়ারের উত্তরাঞ্চলের উপমহাব্যবস্থাপক মো. আলতাফ হোসেন বলেন, আগেরবার যখন জ্বালানির মূল্য বাড়ানো হয়েছিল, তখন তাঁরা খরচ বাড়াননি। কিন্তু এবার তাঁরা বাধ্য হয়ে কুরিয়ার খরচ বাড়িয়েছেন। তথ্যসূত্র: প্রথমআলো।