পুরানো গাড়ী কেনাটা সবসময়ই কিছুটা ঝুঁকির বিষয় । বিক্রেতারা সবসময় চেষ্টা করে নিজেরগাড়ীর ত্রুটিগুলো ঢেকে রাখতে যাতে তারা গাড়িটি সহজে এবং বেশি দামে বিক্রয় করতেপারে। সুতরাং আপনি যদি প্রথমবার গাড়ী কিনতে যান এবং গাড়িটি যদি সেকেন্ডহ্যান্ড হয় তাহলে চেষ্টা করুন সাথে এমন কাউকে (বন্ধু বা কলিগ) নিয়ে যেতে যে গাড়ী সম্পর্কে বেশ অভিজ্ঞ।
কিন্তু আপনি যদি এমন কাউকে না পান তাহলে কি করবেন ? ভয় পাওয়ার কিছু নেই।গাড়ীর বাইরের অবস্থা সম্পর্কে চোখে দেখেও কিছুটা আন্দাজ করা সম্ভব। আসল সমস্যা করে গাড়ীর ইঞ্জিন। গাড়ীর ইঞ্জিন একটি জটিল যন্ত্র যা অনেক সূক্ষ্ম ভাবে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কিন্তু ব্যাপারটা সহজ করতে আমরা পাঁচটি প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো । নিচের পাঁচটি জিনিস খেয়াল রাখলেই আশা করি আর ঝামেলা হবে না।
গাড়ীর ধোয়া পরীক্ষা করুনঃ প্রথেমেই আসি গাড়ীর ধোয়ার কথায়। ডিজেল চালিতগাড়ীর ক্ষেত্রে ধোয়া থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি যদি পুরানো পেট্রোল চালিতগাড়ী কিনতেচান , তখন দেখবেন গাড়ী থেকে কিধরণের ধোয়া বের হচ্ছে। গাড়ীরএকজস্ট থেকে ধোয়া যদি নীলচে হয় তবে বুঝবেন গাড়িটি এর মোটর অয়েল ব্যাবহার করছে। যদি ইঞ্জিন ঠাণ্ডা থাকা অবস্থায় চালু করার সময় নীলচে রঙের ধোয়া দেখা যায় এবং কিছুক্ষণ পরে সেটা চলে যায় তাহলে এটা স্বাভাবিক বলে ধরে নিবেন।
কারন পুরানো ইঞ্জিন থেকে অনেক সময় রাতে তেল চুইয়ে সিলিন্ডার এর উপর পরে থাকে তাই সকাল বেলা ঠাণ্ডা ইঞ্জিন চালু করার সময় হাল্কা নীলচে ধোয়া থাকাটা স্বাভাবিক । কিন্তু অতিরিক্ত ধোয়া থাকাটা, বিশেষ করে ইঞ্জিন চালু করারও অনেকক্ষণ পর পর্যন্ত , ভালো লক্ষণ নয় । এধরনের গাড়ী এড়িয়ে চলাটাই ভালো । এছাড়াও যদি গাড়ী থেকে কালো ধোয়া বের হয় তার মানে গাড়ী অতরিক্ত জ্বালানি খরচ করছে। এটা গাড়ীর ইঞ্জিনে কার্বন জমে থাকারও সংকেত দেয়। তাই এধরনের গাড়ী এড়িয়ে চলাটাই সবথেকে ভালো ।
তেল এর সাথে সম্পকিত সবকিছু পরীক্ষা করুনঃ গাড়ীর তেলের মান এবং ইঞ্জিনে তেলএর গভীরতা একটি ডিপস্টিকএর সাহায্যে পরীক্ষা করুন। যদি তেল দেখতে ঘোলাটে মনে হয় তার মাণে হচ্ছে এর বর্তমান মালিক অনেকদিন যাবৎ গাড়ীর তেল বদলায়নি । আপনি যখন গাড়ীর বনেট খুলেপরীক্ষা করবেন ইঞ্জিন এর আসেপাশে চোয়ানো তেল বা জমে থাকা তেলেরদাগ আছে কিনা দেখুন । পুরাতন গাড়ীর ক্ষেত্রে ইঞ্জিন এরআসেপাশে সামান্য কাদাটে তেলের দাগ থাকাটাই স্বাভাবিক।এটা কোন সমস্যা নয়।
তবে যদি ইঞ্জিনের মাথার দিকটায় বেশিপরিস্কার ও নতুন তেলের দাগ দেখা যায় তবে বুঝতে হবেগাড়ী থেকে নিয়মিতভাবে তেল লিক করে। যেটা ঠিক করতে অনেক সময় ও অর্থ খরচকরতেহবে। টাটকা তেলের দাগের পেছনে আরও বড় কোন সমস্যাও থাকতেপারে। তেলের ঢাকনা খুলে ভেতরে দেখুন । যদি ভেতরে জমে থাকা কার্বন দেখতে না পান তবে সেটা একটা ভালো লক্ষণ । এছাড়াও গাড়ীর মালিককে জিজ্ঞেস করুন যে সে সাধারণত গাড়ী কোথায় পার্ক করেএবং সেই জায়গায় অথবা গাড়ীর গ্যারেজের মেঝেতে তেলের দাগ আছে কিনা খুঁজে দেখুন।
গাড়ীর শীতলকরনঃ গাড়ীতে কোন শীতলকারক আছে কিনা দেখুন । গাড়ীর রেডিয়েটরখুলেদেখুনএরবর্তমান মালিক গাড়ীতে কোন অ্যান্টি-ফ্রিজ/ অ্যান্টি-বয়েল ব্যাবহার করে কিনা? দুঃখজনক হলেও সত্যি যে বেশির ভাগ পুরনো গাড়ীর মালিকরাই গাড়ীতে অ্যান্টি-ফ্রিজ ব্যাবহার করে না । যদি গাড়ীর রেডিয়েটর ক্যাপ এর নিচে অতিরিক্ত জং এর চিহ্ন পান তবে বুঝবেন গাড়িটি শুধুমাত্র পানি দিয়েই অনেকদিন ধরে চালানো হচ্ছে । আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে রেডিয়েটরক্যাপএর নীচে তেল ও জলের মিশ্রণ পাওয়া যায় কিনা ? যদি সেখানে ফেনায়িত কোন পদার্থ বা তেলএর চিহ্ন থাকে তবে সেই গাড়ী থেকে দূরে থাকাই নিরাপদ ।
ইঞ্জিনএর আওয়াজঃ ঠাণ্ডা ইঞ্জিন চালু হওয়ার সময় কিরকম শব্দ হয় দেখুন । সামান্য ক্লিকএর আওয়াজ সাধারণ । এটা নিয়ে চিন্তার কোন কারন নেই । ইঞ্জিন গরম হলেইএই শব্দ বন্ধ হয়ে যাবে । তবে যদি জোরে ধপধপ বা ঠকাঠক আওয়াজ হতে থাকে তাহলে ইঞ্জিনটাকে গরম হতে দিনএবং এক্সেলারেটর সামান্য বাড়িয়ে দিয়ে আবার ভালো করে ইঞ্জিনএর আওয়াজ শুনুন । যদি ইঞ্জিন এরপরেও জোরেশোরে ধাতবআওয়াজ চালিয়ে যায় তবে সেইগাড়ীকে বিদায় বলুন । আপনি নিশ্চয় এমন গাড়ী কিনতে চান না যেটা নিয়ে কেনার প্রথম সপ্তহেই গ্যারাজে ছুটতে হবে ।
টেস্টড্রাইভঃ গাড়ী কেনার আগে একবার চালিয়ে দেখে নিন । এটা আপনাকে গাড়ীর সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে । ইঞ্জিন ছাড়াও ট্রান্সমিশন গাড়ীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ । টেস্টড্রাইভ আপনাকে সেটা সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে । আবারএমনও হতেপারে যে গাড়ীটা দেখে আপনার যতটা ভালো লেগেছিলো সেটা চালানোর পর আর ততটা ভালো লাগলো না । তাইগাড়ীটা অবশ্যই চালিয়ে দেখবেন।
তথ্যসূত্র: চাকাবিডি ডটকম।